মৌলভীবাজারে ৬০বছরের বৃদ্ধের বিরুদ্ধে কিশোরী ধর্ষনের অভিযোগ

    0
    347

    “১৩ বছরের ধর্ষিতা মেয়ের অভিযোগ ৫-৬ বছর ধরে আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে আব্দুর রহমান।মা খালা নানী ও ধর্ষিতের স্ত্রীর জ্ঞাথার্থে ঘটনা ঘটার অভিযোগ ধর্ষিতার,হুমকির জোড়ে থানায় কোন অভিযোগ দিতে পারেনি বলে দাবী তার” 

    আলী হোসেন রাজন,মৌলভীবাজারঃ ধর্ষণের ঘটনা আটকানোর জন্য বিভিন্ন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে থেকে। দেশজুড়ে নারীদের উপর এই ধরনের অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার পক্ষে ও কড়া হুঁশিয়ারি করেছেন তিনি। কিন্তু, তারপরও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে এই ধরনের জঘন্য, নির্লজ্জ ঘটনা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে যে নিজের সন্তানকেও পর্যন্ত ছাড়ছে না মা খালা ও নানী । সম্প্রতি এমনই একটি ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৬ নং একাটুনা ইউনিয়নের খোজারগাও গ্রামের মৃত ইসরাইল মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান (৬০) এর বাড়িতে।
    কিছু দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে ফেইক আইডি বানিয়ে একটি পোষ্ট করা হয়েছিলো ১৩ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষন করেছে আব্দুর রহমান। সেই ফেইক আইডির সূত্র ধরে ধর্ষিতা মেয়ে (ছায়া ছদ্মনাম) সাথে যোগাযোগ করতে মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলার দক্ষিন ভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় নির্যাতিত মেয়ের সাথে।
    ধষিতা মেয়ে ছায়া (ছদ্মনাম) বলেন প্রায় ৫/৬ বছর যাবত আমার সাথে খারাপ কাজ করত আব্দুর রহমান,তখন আমি বুজতে পারতাম না যখন আমি বুজলাম তখন আমার মা শিপি বেগম,আমার খালা পারভিন বেগম,আমার নানী মোনয়ারা বেগম তাদেরকে আমি বিষয়টি জানালে তারা আমাকে বলে এসব কিছু না, তুই কাউকে কিছু বলিছ না আমরা দেখছি।
    কিছু দিন পরে আমি জানতে পারলাম আমার মা, খালা ও নানী আব্দুর রহমানের কাছে আমাকে দিয়ে টাকা নিচ্ছে সেই জন্য উনারা প্রতিবাদ করছেনা । আমার এই বিষয়টি আব্দুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম, ছেলে মাওলানা ওলিউর রহমান ওয়ালি ও আব্দুর রহমানের মেয়ে জানতো।
    প্রায় দু’মাস আগে আমার শুবার ঘরে রাতে আব্দুর রহমান আসে, এসে আমার উপরে উঠে আমার সাথে খারাপ কাজ করে,তখনো আমি আমার মা,খালা ও নানীকে জানাই তখনো তারা কোন প্রতিবাদ করেনি।
    এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ দিনের ভিতরে আমার ভুমি হয়,তখন আমার মা,খালা ,নানী আব্দুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম আমাকে কিছু ওষুধ দেন খেতে, ওষুধ খাবার পর আমি আর কিছু বলতে পারিনা ,আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি, জ্ঞান আসার পর আমি দেখি আমার পড়নের কাপড় ভিজা । এসময় নাজমা বেগম ও আব্দুর রহমানের মধ্যে খুব ঝগড়া হয়।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের কয়েকজন লোক বলেন এই এময় আব্দুর রহমানের ছেলে ওলিউর রহমান ওয়ালি ও মেম্বার তোফায়েল জিলু মিয়া এবং সাজ্জাত মিয়া আসে এক পর্যায়ে ওলিউর রহমান ওয়ালি তার বাবা আব্দুর রহমানের উপর খুব ক্ষিপ্ত হয়। সেই সময় মেম্বার তোফায়েলের কথায় ধর্ষিতা (ছায়া ছদ্মনাম) কে তার বাবার বাড়ি রাজনগর দক্ষিন বাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামে যাবার কথা বলে, ধর্ষিতার মা,খালা ও নানী রাজি না হলে মেম্বার তোফায়েল,জিলু মিয়া ও সাজ্জাত মিয়াসহ আব্দুর রহমানের পরিবার তাদের ভয়ভীতি দেখায়,সেই ভয়ে ধর্ষিতার মা শিপি বেগম রাজনগর দক্ষিন বাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামে মেয়ের চাচার বাড়িতে রাত ৮ টার দিকে দিয়ে আসে। এসময় ধর্ষিতা মেয়েকে ও তাদের পরিবারকে বলে থানায় গিয়ে মামলা করলে অবস্থা খারাপ করে দিবে।

    ধর্ষিতা মেয়ের চাচি বলেন মেয়ের মা শিপি বেগম হঠাৎ রাত ৮ টার দিকে মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে আমি মেয়ের মাকে জিজ্ঞেস করি মেয়ের কি হয়েছে ?মেয়ের মা বলে মেয়ে একটু ভুমি করেছে ওষুধ দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে,আর কিছুদিন পর নিয়ে যাব। সকালে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলে মেয়ে বলে আমি যে বাড়িতে কাজ করতাম সেই বাড়ির মালিক আব্দুর রহমান আমার সাথে খারাপ কাজ করেছে । আমি আমার মা,খালা ও নানীকে জানালে তারা বলে এই সব কিছু না । আমি এই বিষয়টা জানার পর আমার স্বামী  সৌদি প্রবাসী উনাকে জানালে উনি ৬নং একাটুনা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার তোফায়েলের সাথে কথা বলেন ,তোফায়েল মেম্বার এলাকার জিলু মিয়া ও সাজ্জাত মিয়াকে সাথে নিয়ে বিষয়টি দেখে দেবার আশ্বাস দেয়,কিছু দিন যাবার পর তোফায়েল মেম্বার বলেন এই মেয়েকে কোন ধর্ষণ করা হয়নাই এটা কিসের বিচার ! এখন লোক মুখে শুনতে পারছি তোফায়েল মেম্বার জিলু মিয়া ও সাজ্জাত মিয়া মিলে মোটা অংকের টাকা খেয়ে ধর্ষনের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
    এবিষয়ে ৬নং একাটুনা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার তোফায়েল এর সাথে সরেজমিনে এ প্রতিনিধি কথা বললে তিনি বলেন, “মেয়েটা ছোট বেলা থেকে আব্দুর রহমানের বাড়িতে থাকতো ফেইজবুকের ফেইক আইডির মাধ্যমে আমরা জানতে পাড়ি। এলাকার মেম্বার হিসেবে মেয়ের চাচা সৌদি প্রবাসী আমার কাছে ফোনে বলেছেন কোন বিচারের প্রয়োজন নেই মেয়েকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলে শেষ হয়ে যাবে সব কিছু।” ঘটনাটি টাকা খেয়ে দামাচাপা দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন “আমার উপর যে অভিযোগ এসেছে সেটা মিথ্যা।”
    আব্দুর রহমানের সাথে মোঠোফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চাইলে এ প্রতিনিধিকে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন “যাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন তাদের কাছ থেকে জানেন।”
    এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর সার্কেল জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন “এবিষযে থানায় কোন অভিযোগ আসেনি আসলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিব।”