মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় স্ত্রী শাশুড়িসহ ৪ জনকে খুন করে অবশেষে ঘাতক যুবক নিজেই আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড়লেখায় স্ত্রী শাশুড়ি ও প্রতিবেশী দুজনসহ ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যার পর ঘাতক নির্মল কর্মকার (৩২) অবশেষে নিজেই আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনায় পালিয়ে রক্ষা পেয়েছে স্ত্রীর আগের সংসারের ৮ বছরের শিশু কন্যা চন্দনা।
স্থানীয় সুত্র ও পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে অনিয়মিত চা শ্রমিক নির্মলের ধারালো দায়ের কুপে হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি নিহত বসন্ত বক্তারের স্ত্রী কানন বক্তা (৩৪)। নির্মম ও জঘন্য এ হত্যাকান্ড গুলো ঘটেছে উপজেলার পাল্লাতর চা বাগানে রোববার ভোরবেলা। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্র ধারণা করছেন।
ঘটনার দিন বেলা ২টার দিকে পুলিশ নিহতদের লাশগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘাতকসহ একই পরিবারের ৫ জনের লোমহর্ষক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী স্তম্বিত। উপজেলা জুড়ে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী পাল্লাতর চা বাগানের বাজার টিলার বাসিন্দা বিষ্ণু বক্তার মেয়ে নিয়মিত বাগান শ্রমিক স্বামী পরিত্যক্তা জলি বক্তাকে (২৮) প্রায় ৬ মাস আগে বিয়ে করে একসাথে বসবাস করছে নির্মল কর্মকার (৩২)। জলির আগের স্বামীর ঘরের চন্দনা নামে ৮ বছরের একটি শিশু কন্যাও তাদের সাথে বসবাস করে। রোববার ভোরে নির্মল কর্মকার ও জলির মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল।
নির্মল ধারালো দা দিয়ে স্ত্রী জলিকে কোপ দিলে সে দৌঁড়ে মা লক্ষী ব্যানার্জীর (৪৭) ঘরে আশ্রয় নেয়। নির্মল সেখানে ঢুকে জলি, তার মা লক্ষী ব্যানার্জী, ভাই বসন্ত বক্তা, ভাইয়ের স্ত্রী কানন বক্তা ও তাদের মেয়ে শিউলি বক্তাকে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জনের মৃত্যু ঘটে এবং আশংকাজনক অবস্থায় প্রতিবেশীরাকে কানন বক্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। শেষে ঘাতক নির্মল কর্মকার দা দিয়ে নিজের গলায় কুপাতে কুপাতে নিহত বসন্তের ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এদিকে নিহত জলির সাবেক স্বামীর ঘরের কন্যা চন্দনা ঝগড়া শুরুর পরই পালিয়ে যাওয়া ঘাতক নির্মলের হাত থেকে বেঁচে যায়। পালাথল চা বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েতের সভাপতি কার্তিক কর্মকার জানান, রোববার বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বাড়িতে ছিল। প্রতিবেশিরা নির্মলের পরিবারে ঝগড়া-ঝাটি চলতে শুনে। জলির মেয়ে চন্দনা পালিয়ে যাওয়ায় রক্ষা পায়।
সকাল ৬টার দিকে লোকজন রক্তাক্ত লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। গুরুতর আহত কানন বক্তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
আরও জানা গেছে, নির্মল কর্মকার এর বাড়ি অন্য এলাকায়, সে প্রায় ২ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছে। ৬ মাস আগে নিহত জলিকে বিয়ে করে একসাথে এই এলাকায় বসবাস করে যাচ্ছে। স্থানীয়দের এবং পুলিশের ধারণা পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে কুপানোর সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে একে একে সবাই নির্মলের হাতে খুন হতে পারে।
বড়লেখা থানার ওসি (তদন্ত) মো. জসীম জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোন কারণ রয়েছে কি না পুলিশ তা অনুসন্ধান করে দেখছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে এর প্রকৃত কারণ।