মৌলভীবাজারে বন্যার পানি দুপুরে কমলে রাতে যেই সেই

    0
    380

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৯জুলাই,মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ এমন দূর্বিষ জীবন আর ভাল লাগেনা। একটু পানি কমলে আবার বৃষ্টি তা ভরিয়ে দিচ্ছে। তাই বন্যার পানি কমে যাওয়ার আশা করি কি ভাবে।
    হাওর তীরের শাহপুর,সাদিপুর,মিরশংকর,মহেশঘরি ও বাদে ভূকশিমল গ্রামের বাসিন্ধা কয়েছ আহমদ বটলাই, গুলজার মিয়া,বদর উদ্দিন,অজির আলী, লিচু মিয়া,নেওয়া বিবি ও আখলিমা বেগমসহ অনেকেই ক্ষোভে কন্ঠে তাদের দূর্ভোগ,দূর্দিন আর চলমান বন্যার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। তারা কান্না জড়িত কন্ঠে জানালেন তাদের চরম অসহায়ত্বের কথা। বোরো ধান হারানোর পর থেকে এবছর কিভাবে একের পর এক বন্যায় তাদের সব কেড়ে নিয়েছে।
    সব হারিয়ে কিভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সাথে আলাপে জানাগেল চলমান এ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রুপ নিচ্ছে। জেলায় ৩য় দফার এই বন্যার প্রায় মাস দিন ধরে। কিন্ত পানি কমার কোন লক্ষণই নেই। উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যা দূর্ভোগ।হাকালুকি হাওর তীরের স্থানীয় বাসিন্ধারা জানান দুপুরে পানি কিছু কমতে দেখা গেলে বিকেল কিংবা রাতের টানা বৃষ্টিতে আবার যেই সেই।
    এতে হাওর পাড়ের তীরবর্তী উচুঁ অংশের কিি ত উন্নতি হলেও নিন্মাঞ্চলের অবস্থা আগের মতই। সম্প্রতি আবহাওয়ার অবস্থা এই ভালো এই খারাপ।এমন অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির কখনো কিছুটা উন্নতি হলে,আবারও অবনতি হচ্ছে।এতে করে বন্যা পরিস্থিতির আশানুরুপ উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলার কুলাউড়া,জুড়ী ও বড়লেখার গ্রামীন জনপদের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।
    প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ বানের পানিতে রয়েছেন বন্ধি দশায়। ওই এলাকা গুলোর রাস্তাঘাট আর ঘর-বাড়িতে এখনো কমর থেকে বুক পানিতে নিমজ্জিত। ঘরবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের দূর্ভোগের অন্তর নেই। বন্যায় তাদের মাথাগুঁজার ঠাঁই যেমন কেড়ে নিয়েছে। তেমনি রান্নাঘর,টিবওয়েল আর টয়লেটও পানিতে তলিয়ে দিয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় নিত্য ব্যবর্হায এই উপাদানগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় তাদের অবর্ণীয় দূর্ভোগ। এবছর হাকালুকি হাওর তীরের মানুষ এনিয়ে ৩য় দফায় বন্যা কবলিত হল। বলতে গেলে হাকালুতি হাওর পাড়ের বাসিন্ধারা প্রায় ৪ মাস থেকে পানি বন্ধি।
    এবছর চৈত্রের ভয়াবহ অকাল বন্যার দকল সামলে উঠার আগেই পর পর একাধিক বন্যা।একের পর এক বন্যায় তাদের জীবন জীবীকার সব উপকরনই কেড়ে নিয়ে তাদের নি:স্ব করেছে। আর চলমান এ বন্যায় ডুবিয়ে দিয়েছে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল। তাদের চোখের সামনেই সবই তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এখন চারদিকে শুধু থৈ থৈ পানি আর পানি। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেলেও আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। আশ্রয় কেন্দ্র বা নিজের আতœীয় স্বজনদের বাড়িতে। কিন্তু সেখানেও ভালো নেই তারা। পিছু নিয়েছে নানা সমস্যা আর বিড়ম্বনা।
    হাওর তীরের কৃষি আর মৎস্যজীবী মানুষগুলো কর্মহীন থাকায় নেই আয় রোজগারও। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। চরম অসহায় এ মানুষ গুলোর দু’চোখের অশ্রু যেন তাদের সন্তানদের ভাষা। তাদের মত অসহায় ওই এলাকার গৃহগালিত পশুগুলোও। খাদ্য আর বাসস্থান হারিয়ে তারাও পড়েছে চরম সংকটে। খাদ্যহীন গৃহহীন মানুষ গুলোর দুর্ভোগ আর মানবেতর জীবনযাপন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। বানভাসি অসহায় মানুষগুলো রাত পোহালেই ত্রাণের আশায় পথের পাণে চেয়ে থাকেন। জীবন বাচাঁতে পেটের দায়ে। কিন্তু তারা হতাশ হচ্ছেন। কারন তারা দূর্দিনে পাচ্ছেন না আশানূরুপ সাহায্য।

    সরকারী তরফে যে সহযোগীতাগুলো আসছে তা যেমন পর্যাপ্ত নয়। তেমনি যে বরাদ্দ গুলো আসছে তাও পুরোপুরি ভাবে পৌচ্ছে না তাদের হাতে। এনিয়ে জন প্রতিনিধিদের উপর তাদের অভিযোগ আর ক্ষোভের অন্তর নেই। আর এবারের বন্যায় ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে একে বারেই কম।

    জেলা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও সরজমিনে স্থানীয় বাসিন্ধাদের সাথে যোগযোগ করলে জানা যায়,জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে।ফলে জেলার হাকালুকিও কাউয়াদিঘি হাওর তীরের কুলাউড়া,জুড়ী,বড়লেখা,রাজনগর ও মৌলভীবাজার এই পাঁচটি উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানি বন্দী।

    কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৩০ টি ইউনিয়নে বন্যা স্থায়ী রুপ নিচ্ছে। বানের পানি কিছুটা কমলেও তা স্থির থাকছেনা।বৃষ্টির প্রতিদিনই হওয়ায় তা আগের অবস্থায় চলে আসছে। জানা যায়, জেলার ৩৩ টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে।এতে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

    পর্যন্ত ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া ২০০ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত থাকায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শতাধিক মৎস্য খামার। বন্যায় মৌসুমী সবজি, আউশ ও বোরো আমনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।