মৌলভীবাজারে জাল দলিল সৃষ্টির অপরাধে পিতা-পুত্র জেলে

    0
    245

    স্থানীয় প্রভাবশালী এবং প্রবাসী বিত্তশালীরা জাল দলিল, পিছনের তারিখে বালাম বইয়ে জাল দলিল সংযুক্তিকরন,পুরনো স্ট্যাম্প (পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমলসহ,৭১/৬৯/৬১ সনের) কিনে দলিল বানিয়ে মুল দলিলের পুর্বে তারিখ বসিয়ে জাল দলিল বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বলদের সম্পত্তি।

    আলী হোসেন রাজন,মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: কমলগঞ্জ উপজেলাধীন মুন্সীবাজার ইউনিয়নস্থিত পরানধর গ্রামের নাগরিক ও মুন্সীবাজারের বেডিং ব্যবসায়ী জালাল মিয়া ও তার পুত্র সোহেল রানা সুমনগং কর্তৃক ভিন্ন ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে জাল দলিল সৃষ্টির ঘটনায় পিতা-পুত্রকে ( মামলা নং- ১৬৬/১৮ইং) আটক করা হয়েছে।

    মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতের বিচারক তাদের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এমন জালিয়াতির ঘটনায় তোলপাড় চলছে সর্বত্র। পিতা-পুত্র আটক হওয়ার সংবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছে ভুক্তভোগীরা। জালাল মিয়া ও তার পুত্র সোহেল রানা সুমনগং কর্তৃক ভিন্ন ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে জাল দলিল সৃষ্টির ঘটনায় কমলগঞ্জ থানার এসআই চম্পক দাম দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিতা-পুত্রসহ জড়িতদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

    ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন বিবরনসহ দলিলটি জমির মালিক বিভাষ রঞ্জন দাস ও সোহেল রানা সুমনের স্বাক্ষর যাছাই করণের জন্য ঢাকা সিআইডি অফিসে প্রেরণ করা হয়। তাদের স্বাক্ষর যাছাইকরণ শেষে, সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল একমত যে, এই দলিলের স্বাক্ষরটি জমির মালিক (বিভাষ রঞ্জন দাশ) এর নয়।

    জানা গেছে- জাল দলিল সৃষ্টির ঘটনায় মুন্সীবাজারের বেডিং ব্যবসায়ী জালাল মিয়া, তার পুত্র সোহেল রানা সুমন ও কমলগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের ৫৫নং সনদধারী দলিল লেখক এম এ সালাম পরষ্পর যোগাযোগীমূলে একই গ্রামের বিভাষ রঞ্জন দাসের মৌরসী সূত্রে মালিকানাধীন পরানধর মৌজার অন্তর্গত ২৯নং জেএলভূক্ত ১৬নং এসএ খতিয়ানের ১৭৬নং এসএ দাগের ১১ শতাংশ ও ১২৫নং এসএ দাগের ০২ শতাংশ এবং মখলিছ মিয়া ও তার প্রবাসী ভাই, সাবেক চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্বা দুরুদ মিয়ার ক্রয় সুত্রে মালিকানাধীন ১৩নং এসএ খতিয়ানের ১৭৬নং দাগের ১১ শতাংশ ভুমি, ভিন্ন ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে জালাল মিয়া (০২ শতাংশ) ও সোহেল রানা সুমন (২২ শতাংশ) এর নামে ১৩৮৪ ও ১৩৮৫ নম্বরের দুটি দলিল প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে গত ১৩/০৪/২০১৭ইং কমলগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রারী অফিসে রেজিষ্ট্রি করিয়ে নেয় এবং উক্ত ২৪ শতাংশ ভূমি নিজেদের নামে নামজারী করার জন্য কমলগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে নামজারী মোকদ্দমা (নং- ২০৩২/১৭-১৮) দায়ের করেন।

    সেখানে বিভিন্ন জাল কাগজাত দিয়ে ও ভিন্ন ব্যক্তিকে বিভাস রঞ্জন দাস সাজিয়ে জাল দলিল সৃষ্টির ঘটনাটি ধরা পড়ে। এরপর মূল মালিক বিভাস রঞ্জন দাস ও মখলিছ মিয়া কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কমলগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার বরাবর জালাল মিয়া ও সোহেল রানা সুমনের নামীয় মূল জাল দলিল জব্দ, দায়েরী নামজারী ও জমা খারিজ মোকদ্দমা বাতিল ও তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন ও কমলগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন। তাদের মাধ্যমে উক্ত সোহেল রানা সুমন গংদের সৃষ্ট জাল উত্তরাধিকার সনদ ও জাল দলিল সৃষ্টির ঘটনা অবহিত হয়ে মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালিব তরফদার ৩১৯/২০১৮, ৩২০/২০১৮ ও ৩২১/২০১৮নং জাল উত্তরাধিকার সনদ প্রসঙ্গে গত ১৪/০৮/১৮ইং কমলগঞ্জ থানায় একটি জিডি (নং- ৭০৬) করেন।

    সর্বশেষ, গত ১৯/০৮/২০১৮ইং মূল মালিক বিভাস রঞ্জন দাস বাদী হয়ে ওই ৫ প্রতারকের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারী নালিশা দরখাস্ত (নং- ১৮২/২০১৮ (কমল) দায়ের করা হলে, বিজ্ঞ আদালত কমলগঞ্জ থানার ওসিকে উক্ত দরখাস্তটি দি পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৩৪ ধারায় সরাসরি এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করতঃ এবং নিবন্ধিত ১৩৮৪/২০১৭ ও ১৩৮৫/২০১৭নং দলিল দুটি জব্দ করে থানার মামলা নং ও তারিখ  উল্লেখসহ আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দেন।

    এর প্রেক্ষিতে কমলগঞ্জ থানার ওসি তা এফআইআর (নং- ১৭/১৮, জিআর/১৬৬/১৮) এবং জাল দলিল দুটি জব্দ করেন। অভিযোগ উঠেছে, জাল দলিল প্রতারক চক্রের প্রতারণায় বছরের পর বছর ভ্রিম্রান্তি আর ভোগান্তির  শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এ চক্রের কেরেশমতি। ভুক্তভোগীরা প্রতারক চক্রের জাল দলিলের কারণে আদালত পাড়ায় বছরের পর বছর আসা যাওয়া করতে করতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

    এ কাজে সহযোগীতা করার জন্য রয়েছে সংশি¬স্ট অফিসের কিছু অসাধু লোক, দলিল জালিয়াতির ঘটনায় সাধারণ মানুষ যেমনি মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ তেমনি পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃংখলা প্রকট আকার ধারণ করছে দিনদিন। জেলার কিছু অসাধু ব্যক্তি, প্রতারক চক্র এসব জাল দলিল তৈরি করছে। তাদের ফাঁদে পড়ে সহজসরল মানুষদের দুর্বিসহ যন্ত্রণা আর নানামুখী মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। চক্রটি আর্থিক ও সামাজিক দিকে থেকে বিত্তশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুব সহজে তাদের সাথে পেরে উঠে না। দলিল জালিয়াতির ঘটনায় পিতা-পুত্র আটক হওয়ার সংবাদ প্রচারে এলাকায় চলছে তোলপাড়।

    উল্লেখ্য,অভিযোগ রয়েছে-মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ উপজেলা শহরের বিভিন্ন রেজিস্টার অফিসের অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় ও এক শ্রেনির দালাল চক্রের যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালী এবং প্রবাসী বিত্তশালীরা জাল দলিল, পিছনের তারিখে বালাম বইয়ে জাল দলিল সংযুক্তিকরন,পুরনো স্ট্যাম্প (পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমলসহ,৭১/৬৯/৬১ সনের) কিনে দলীল বানিয়ে মুল দলীলের পুর্বে তারিখ বসিয়ে জাল দলীল বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে দুর্বলদের বহু সম্পত্তি। এমনকি জমি দখলের পাঁয়তারা করে আদালতে জাল দলীলের ভরসা করে মামলা বসিয়ে বছরের পর বছর জায়গা সম্পত্তি ভোগ করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।এই রকম ভুক্তভোগিদের থেকে জানা যায়, জমি দখলে রেখে যারা মামলা করে তারা বলে থাকে “এক দখল সাত দলিলের সমান” এই যুক্তিতে তাদের বিশ্বাস “আদালতের মামলা কয়েক যুগ ধরে চলে তাতে দখলকারিরা লাভবান আর দখল করতে ব্যার্থরা আর্থিক ভাবে ও সম্পদ হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে একসময় নামে মাত্র বিনিময়ে দখলকারীকে হস্তান্তর করে অথবা হাল ছেড়ে বাঁচে।