মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে পুলিশের অভিযানে অভিনব কায়দায় ছিনতাই কাজে জড়িত চক্রের সদস্যদেরকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে মডেল থানার পুলিশ।
২০ অক্টোবর রবিবার সকালে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, প্রথমে ফেইসবুকে মৌলভীবাজার শহরের ফটোগ্রাফার জুরীর ভবানীপুর এলাকার নিকুঞ্জ মোহনের ছেলে রিপন পাল (১৯) এর সাথে যোগাযোগ করেন এক ব্যক্তি। রিপন পেশাদারিত্বের খাতিরে তাদের সরল মনে বিশ্বাস করেন। ঘটনার শুরু হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে মৌলভীবাজার শহরের পৌরসভার সম্মুখস্থ পার্ক থেকে। সেখানে রিপনকে দিয়ে তাদের চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ফটোসেশন করেন।
এভাবে ফটোগ্রাফার রিপনকে নিয়ে সারাদিন বিভিন্ন চা বাগানে ফটোসেশন করে ওই ছিনতাইকারী চক্র। তবে চক্রের সদস্যদের কথাবার্তায় সন্ধ্যার দিকে রিপনের মনে কিছুটা সন্দেহের সৃষ্টি হয় । একপর্যায়ে সে কৌশলে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে আসে।
পরে ছিনাতাইকারী গ্যাংদের পাতানো আরেকটি ফাঁদে পা দেয় ওই ফটোগ্রাফার। শহরের চাঁদনীঘাট রোডস্থ সিএনজি স্ট্যান্ডে রিপন বাড়ি ফেরার জন্য সিএনজিতে উঠে ওই সময় তার সাথে আরও ৩জন যাত্রী সিএনজিতে উঠে। এটি ছিল ওই চক্রের অপর সদস্যদের আরেকটি কৌশল। আর শেষ কৌশলে ফেলেই রিপনকে লুট করা হয়।
সিএনজিটি কিছু দূর যাবার পর গাড়ির কাগজ নেই বলে বাহানা করে, সামনে পুলিশ চেকপোস্ট এমন বাহানা দেখিয়ে চালক ফাঁড়ি পথের দিকে যায়। বিভিন্ন পথে ঘুরাফেরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে চালকের চাল-চলনে আবারো ফটোগ্রাফারের মনে সন্দেহ হয়। আবারও সে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা তাকে ঘিরে ফেলে। তখন রাত প্রায় ১টার দিকে সিএনজি থামায় চক্রের চালক।
কমলগঞ্জ থানার আহমদনগর এলাকার নির্জন স্থানে ফটোগ্রাফারের হাত, পা, মুখ, বেঁধে মারধর করে। রিপনের ব্যাগে থাকা লক্ষাধিক টাকার মূল্যের ক্যানন সিক্স হান্ডেড ডি মডেলের ক্যামেরা, ১৬ হাজার টাকার ওপ্পো এ-থ্রি-সেভেন মডেলের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জিনিস লুটে নেয় তারা। ফটোগ্রাফারকে সেখানেই বাঁধা অবস্থায় ফেলে লুট করে ফের সিএনজিতে করে পালিয়ে যায় ওই চক্র। পরে নিজের চেষ্টায় ওই অবস্থা থেকে ফিরে স্থানীয় দোকানে আশ্রয় নেয় ওই ফটোগ্রাফার।
কিন্তু ছিনতাইকারী চক্রের এক সদস্য লুট করা ক্যামেরা বিক্রি করে দেন স্থানীয় এক ক্রেতার কাছে। পরে গত ১৭ নভেম্বর ফেইসবুকের একটি গ্রুপে ক্যামেরা বিক্রির জন্য পোস্ট করে ওই ক্রেতা। সেখানে নিজের হারানো ক্যামেরা দেখে চিনতে পারেন ফটোগ্রাফার রিপন।
শেষ পর্যন্ত ফটোগ্রাফার রিপন পাল সার্বিক ঘটনার বিবরণ দিয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত ওই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
আটককৃতরা হলো,শহরের গোবিন্দশ্রী এলাকার তৈয়ব উল্যার ছেলে মোঃ দুলাল (২৬), সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার বশির মিয়ার ছেলে মোঃ জাবেদ (২৩), কমলগঞ্জের বাউলপুর এলাকার শওকত আলী (২০), রাজনগরের ইলাশপুর এলাকার আলআমিন মিয়া (২২), সদর থানার জগন্নাথপুর এলাকার বশির মিয়ার ছেলে জামাল হোসেন (৩০) ও সদর থানার বৃন্দাবনপুর এলাকার গোপাল দাসের ছেলে দিলিপ কুমার দাশ (২৬)।
মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন তাদের সম্পর্কে বলেন,চক্রের মধ্যে একই পরিবারের দুই ভাই জড়িত তারা এর আগেও বিভিন্ন সময় এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ক্যামেরা,মোবাইলসহ যাবতীয় মালামাল,সিএনজি, টমটম এবং অভিযুক্ত ৬জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে,আইনানুযায়ী তাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
