মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস ৬ ডিসেম্বর

    0
    218

    “আজও শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের স্বাক্ষী বহন করে আছে শ্রীমঙ্গলের বধ্যভুমি-৭১,ও সাধুবাবার বটতলা ও শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য স্থান” 

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫ডিসেম্বর,শিমুল তরফদারঃ শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস আগামী কাল মঙ্গলবার ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের এই দিনে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাটি পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল।  তবে এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

    মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ৫ ডিসেম্ব^র পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষদের।

    ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সূচিত অসহযোগ আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে তীব্র রূপ নেয়। অফিস-আদালতসহ শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল। শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি  কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগান এলাকায় বধ্যভূমিতে ৪৭ জন চা শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছিল পাক-হানাদার বাহিনী। ভাড়াউড়া চা বাগানে কলেজ রোডস্থ সেখানে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সৌধ আজও তার স্বাক্ষী বহন করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

    এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াপদার অফিসের পিছনে একটি ছড়ায় ও বর্তমান বিজিবি সেক্টরের সাধু বাবার বটতলা খ্যাত (বর্তমান নামকরন বধ্যভূমি-৭১) বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নিকুঞ্জ সেন, সমীর সোম ও অর্জুন দাসসহ বহু বীর সেনানীকে।

    পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শ্রীমঙ্গলে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুকিত লস্কর। এরপর একে একে শহীদ আনিস মিয়া (রিক্সা চালক), ছাত্রলীগ নেতা শহীদ মইনউদ্দিন, শহীদ শম্ভু ভূমিজ, শহীদ সমীর সোম, শহীদ আব্দুস শহীদ, শহীদ সুখময় পাল, শহীদ সুদর্শন, শহীদ আলতাফুর রহমান আরোও অনেকেই । এছাড়া পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের শেষ নির্যাতনের শিকার হন চা শ্রমিক নেতা ও চা  শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট পবন কুমার তাঁতী। পাক-হানাদার বাহিনী পবনকে হত্যা করে ওয়াপদার পাশে ভুরভুরিয়া ছড়ায় তার লাশ ফেলে যায়।

    মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরনপন লড়াই ও ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তি বাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থার বেগতিক দেখে ৬ ডিসেন্বর ভোরে তারা পালিয়ে মৌলভীবাজরে আশ্রয় নেয়। এবং মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল শহর। উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

    চারদিকে চা বাগানের সবুজের ঘেরা বধ্যভূমি ৭১ প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিদিন দেশি বিদেশী পর্যটকরা ভিড় করেন শ্রীমঙ্গল বধ্যভুমি-৭১ এ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গলে সাধু বাবার তলীর (অর্থাৎ বিজিবি ক্যাম্পের পাশে) ২০১০ই সালের ১০ ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি-৭১ নামের একটি স্মৃতিস্তম্ব। আর তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক সাংবাদিক বিকুল চত্রুবর্তী প্রতি বছরে শ্রীমঙ্গলে আয়োজন করেন মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

    মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ও শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে শ্রীমঙ্গলের বধ্যভূমি-৭১ প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের একটি যাদুঘর করা হউক এই প্রত্যাশা শ্রীমঙ্গলবাসীর।