মেয়ের জামাই বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠাতে নিঃস্ব বহু পরিবার

    0
    353
    সাদিক আহমেদ,স্টাফ রিপোর্টার: চিরায়ত গ্রামবাংলা,সবুজ প্রকৃতি,হাওড়-বাওড়,নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশ।সাম্প্রদায়িক দাঙ্গামুক্ত বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাস করছে মুসলমান,হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর মানুষ।গ্রামবাংলার নানান সংস্কৃতিতে ভরপুর চিরায়ত সবুজের এই বাংলাদেশ।ঠিক তেমনি ভাবে গ্রামবাংলার বিভিন্ন সংস্কৃতি ক্রমেই অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়ে কালক্রমে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে।
    মূলত প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমান এদেশে বসবাস করে।চিরায়ত এই বাংলার একটি অন্যতম প্রাচীন একটি রীতি হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসে নববধূর শশুর বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠানো।মূলত প্রাচীনকাল থেকেই মেয়ের পরিবার থেকে এসব ইফতার সামগ্রী মেয়ের শশুর বাড়িতে পাঠানোর রীতি চলে আসছে বহুদিন ধরে।একসময় এটি ছিলো একটি আনন্দের ব্যাপার।নিজের সাধ্য অনুযায়ী মেয়ের শশুর বাড়িতে হাসি আনন্দের সহিত ইফতার পাঠানো হতো।যেখানে ছিলো না কোনো বাধ্যবাধকতা।অর্থাৎ এটা ছিলো সম্পূর্ণ নববধুর পরিবারের মর্জির ব্যাপার।
    কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলার এই রীতি বা সংস্কৃতিটি রূপ নিয়েছে মারাত্মক এক অপসংস্কৃতিতে।ইদানীংকালে প্রায়ই রমজান মাসে এসব ইফতার সামগ্রী পাঠানো সংক্রান্ত ব্যাপারে নববধূ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।যে কারণে অনেকসময় অভাবে জর্জরিত হয়ে বিভিন্ন পরিবার মেয়ের সুখের জন্য তার শশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে।এতে করে ইফতার সামগ্রী পাঠানোর অর্থ যোগার করতে গিয়ে অনেক পরিবারকে পড়তে হচ্ছে চরম সংকটে।মেয়ের শশুর বাড়িতে এসব ইফতার সামগ্রী পাঠাতে গিয়ে অনেকসময় প্রায়ই নিঃস্ব হয়ে পড়ছে কোনো কোনো পরিবার।
    অনেকসময় মেয়ের শশুর বাড়ি থেকে জোরপূর্বক এটা আবদার করা হয়ে থাকে।এতে করে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।অর্থের অভাবে নববধূর শশুর বাড়ির চাহিদা অনুযায়ী ইফতার পাঠাতে না পেরে প্রায়ই নববধূ হচ্ছে চরম নির্যাতিত।মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতার পাঠানোর টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেক বাবাকেই পড়তে হচ্ছে চরম অসহায়ত্বে।কখনো কখনো লজ্জায় অনেক ক্ষেত্রে নববধুরা আত্মহত্যা ও করে থাকে যা পত্র পত্রিকা খুললেই আমাদের চোখে পরে।
    এই অপসংস্কৃতি ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে সবাই ব্যক্তিগতভাবে সচেতন না হলে অচিরেই ভয়ংকর এক রূপধারণ করবে এই প্রথাটি এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।প্রথাটির প্রচলন বন্ধ করার জন্য সবাইকে সচেতন হবার তাগিদ দেন তারা।
    শ্রীমঙ্গল অনলাইন প্রেসক্লাব ও এনিমেটরস বাংলা মিডিয়া গ্রুপের সভাপতি মোহাম্মদ আনিছুল ইসলাম আশরাফী বলেন,”অবশ্যই এটি একটি অপসংস্কৃতি।এটি খুব মারাত্মক এবং ক্ষতিকর রীতি যা লোভ থেকে তৈরি।এটি গরীবদেরকে আরোও অসহায় করে ফেলে।এটার জন্য অনেক শাশুড়িরা মেয়েদের বিভিন্ন কথা বার্তা ও মৌখিক নির্যাতন করার সুযোগ পায় ফলে অনেক সময় পারিবারিক এমনকি সামাজিক ভাঙ্গন তৈরি হয় ।যে পরিবারগুলো অসহায় বা গরীব তারা অনেকসময় ধনাঢ্য পরিবার গুলোর সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে সুদের মাধ্যমে টাকা জোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে এই প্রথার কারণে”।
    এই অপসংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য প্রশাসন কতটা ভূমিকা রাখতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আনিছুল ইসলাম আশরাফি বলেন,”এটা বন্ধ করার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে সামাজিক ভাবে,তবে মসজিদের ইমাম ও ধর্মপ্রচারকগনরা ভুমিকা রাখতে পারে। এটি যৌতূকেরই একটি রুপ,  যৌতুক বিরোধী কাজ যেমন সামাজিক ভাবে বয়কট করা প্রয়োজন তেমনি এটিও।আর প্রশাসন তখনই ভূমিকা রাখতে পারে যখন এই ধরণের কোনো ঘটনার কারণে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে থাকে তখন যদি তাদেরকে (প্রশাসন) জানানো হয়”।
    ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক মাওলানা নুরুল হক বলেন,”ইফতারি দেয়াতে নিষেধ নাই তবে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী।তবে ইফতারি দিতে গিয়ে যদি কোনো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায় বা কোনো পরিবারকে যদি জোরপূর্বক বাধ্য করা হয় তবে সেটা ইসলাম সমর্থন করে না।ইসলাম কারো জন্য কঠিন কোনো নির্দেশ করে না”।
    এই অপসংস্কৃতি বন্ধের জন্য আলেম সমাজের কতটা ভূমিকা রাখা প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,”এর বিরুদ্ধে আলেম সমাজের যথার্থ ভূমিকা রাখা উচিৎ।প্রতি জুম্মার নামাজে যে খুৎবা হয় সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।খুৎবাতে এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা দরকার”।
    সর্বোপরি এই কুপ্রথার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জনয তাগিদ দিয়েছন বিশেষজ্ঞরা।নয়তো অচিরেই এই প্রথাটি গ্রাস করে ফেলবে সমাজকে।