মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন আজ ১৭ এপ্রিল

    0
    201

    আমারসিলেট24ডটকম,১এপ্রিলঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন আজ ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এ বৈদ্যনাথতলা ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। সে ইতিহাসকে স্মরণ করইে জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বুধবার এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস যথাযথভাবে উদযাপন এবং এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য দলের নেতা কর্মী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। এ দিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
    এ ছাড়াও তাজউদ্দিন আহমেদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। এদিকে জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
    ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্যদিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পর দিন দেশ বিদেশের পত্র পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের এই সংবাদ ফলাও করে ছাপা হয়। বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক সূচনা বা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হিসেবে এই দিনটির তাৎপর্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
    মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস উদযাপনের জন্য ঢাকায় ও মুজিবনগরে দু’দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ,যুবলীগ, ছাত্রলীগ,কৃষক লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্যন্যা রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করবে।
    আওয়ামী লীগের কর্মসূচি অনুযায়ী আজ ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দেশের সকল জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং সকাল ৭টা ৩০মিনিটে বনানী কবরস্থানে ও রাজশাহীতে শহীদ জাতীয় নেতাদের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
    মুজিবনগরে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ১১টা ১৫ মিনিটে গার্ড অব অনার প্রদান ও সাড়ে ১১টায় মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য ব্যাখা করে শেখ হাসিনা মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মুজিবনগর দিবস উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসিম ও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এছাড়াও মেহেরপুরের অনুষ্ঠানমালায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।

    কর্মসূচি
    আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন যৌথভাবে দুদিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে দিবসটি পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ এবং আনসার ভিডিপি কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান করা, বেলা সাড়ে ১১টায় মুজিবনগরস্থ শেখ হাসিনা মঞ্চে আলোচনা সভা, বিকেল চারটায় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে চত্বরে মেলার উদ্বোধন, বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
    দ্বিতীয় দিন ১৮ এপ্রিল শুক্রবারের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিকেল সাড়ে ৪টায় মেলায় অংশগ্রহণকারী শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেখ হাসিনা মঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য আমির হোসেন আমু।
    বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী, ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি এমপি, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, মেহেরপুর- ১ আসনের এমপি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল, মেহেরপুরের সাবেক এসডিপিও বীর বিক্রম মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী প্রমুখ।

    রাষ্ট্রপতির বাণী
    রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতিগঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দিবসটি উপলক্ষে তিনি দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
    আবদুল হামিদ গভীর শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। তিনি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান যাদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালিত হয়েছিল তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
    রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ২৬ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারির মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন।
    ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যাত্রা শুরু করে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাসহ বিশ্ব দরবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, শরণার্থীদের সহায়তা, যুদ্ধবিধস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ানোসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    রাষ্ট্রপতি বলেন, মুজিব নগর সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রত সফল পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে মোঃ তিনি মুজিবনগর সরকার গঠনে যাঁরা সহযোগিতা করেছিলেন তাদের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

    প্রধানমন্ত্রীর বাণী
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর কাঙিক্ষত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতির চরম দুর্দিনেও যে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা ঊর্ধ্বে তুলে এগিয়ে চলা যায়, ১৭ এপ্রিল জাতীয় ইতিহাসে তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ঐতিহাসিক এ দিনে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চার জাতীয় নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা বোনদের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তিনি।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে সরকার গঠিত হয়। মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ অনুমোদন করা হয়। সেদিন থেকে এ স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে।
    ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার নির্দেশ অনুযায়ী শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধ সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলসমূহ, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ এবং তদানীন্তন ইপিআরসহ সকল শ্রেণি-পেশার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকার দীর্ঘ নয় মাস দক্ষতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্রশক্তির সহায়তায় চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে সমূলে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আড়াই মাসের ব্যবধানে ৩ নভেম্বর জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
    বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল না উল্লেখ করে বাণীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এসময় আইনের শাসন ও জনগণের অধিকার সামরিক স্বৈরাচারের বুটের তলায় পিষ্ট হচ্ছিল। ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে সরকার গঠনের পর দেশে আবারও ফিরে আসে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুবাতাস। বাংলার মাটিতে স্বাধীনতা বিরোধী যে কোন অপতৎপরতা রোধে তার সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি দায়মুক্ত হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলখানায় নিহত ৪ জাতীয় নেতার হত্যা মামলার পুনর্বিচারের কাজ চলছে। মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। বিএনপি-জামাত জোট এ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ধ্বংস করতে দেশব্যাপী নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সকল বাধা উপেক্ষা করে দেশের জনগণ আওয়ামীলীগকে আবার সরকার পরিচালনার জন্য নির্বাচিত করেছেন।