মিয়ানমার থেকে ৫১২দিন পর দুই সাংবাদিক মুক্তি পেলেন

    0
    255

    মিয়ানমারে প্রেসিডেন্টের বার্ষিক সাধারণ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩৩) ও কিয়াও সো ও (২৯)। ​​​​​​​ ৫১২ দিন কারাগারে কাটানোর পর ইয়াংগুনের একটি কারাগার থেকে আজ (মঙ্গলবার) সকালে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন তারা।

    রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর বর্ষবরণের মওসুমে মিয়ানমারে প্রেসিডেন্টের ক্ষমায় বিপুল সংখ্যক বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়। এ বছর সেই প্রক্রিয়া শুরু হয় এপ্রিল থেকে। এর আওতায় কয়েক হাজার বন্দির সঙ্গে সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোকেও মিয়ানমার সরকার মুক্তি দিয়েছে।

    মুক্তির পর ওয়া লোন বলেছেন, “আমাকে সাংবাদিকতা থেকে কোনো কিছুই বিরত রাখতে পারবে না। আমার পরিবার ও সহকর্মীদের দেখতে পেয়ে আমি খুব খুশি ও উদ্বেলিত। আমার নিউজরুমে ফেরার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”

    রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে আদলার বলেছেন, “মিয়ানমার আমাদের সাহসী সাংবাদিকদের মুক্তি দিয়েছে, এ জন্য আমরা ভীষণ খুশি। তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা আরো বলেছে, এখনও বহু ডজন সাংবাদিক জেলে বন্দি আছেন।”

    মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “অবিচারের মাধ্যমে জেলে বন্দি থাকা এ সাংবাদিকদের মুক্তি পাওয়াকে আমরা অভিনন্দন জানাই। কিন্তু এ সঙ্কট শেষ হয়ে যায় নি। আক্ষরিক অর্থে মিয়ানমারের বহু ডজন সাংবাদিক ও ব্লগার এখনও ভিত্তিহীন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি।”

    নিরপরাধ এই ১০ রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী

    প্রসঙ্গত, রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের নাগরিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ওই গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালানোর সময় গ্রামবাসীর কাছ থেকে তিনটি ভয়ংকর ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলোর দুটিতে একটি গণকবরের সামনে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়। তৃতীয় ছবিতে ওই ১০ জনকেই ওই গণকবরে গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত হয়ে অসাড় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ওই দুই সাংবাদিক তাঁদের প্রতিবেদন শেষ করার আগেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার দেখায়।

    গত বছর সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে তাঁদের সাত বছর করে কারাদণ্ড হয়। গত মাসে মিয়ানমারের উচ্চ আদালতে নিজেদের সাজার বিরুদ্ধে সর্বশেষ আপিল করেন দুই সাংবাদিক। কিন্তু ওই সময় আদালত তাঁদের আবেদন নাকচ করেন। এরপর ওয়া লোন ও কিয়াও সোর স্ত্রী স্বামীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন। অবশেষে সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাঁরা মুক্তি পেলেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে এ দুজন সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ পুরস্কার পুলিৎজার লাভ করেন।পার্সটুডে