মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জট খুলছে,যাবে ৫ বছরে ৫ লাখ

0
300
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জট খুলছে
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জট খুলছে

“গত বছরের মতো এবারও জনপ্রতি অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা করে আদায় করতে পারলে তারা অনায়াসে ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে পারবে”

আমার সিলেট ডেস্কঃ শেষপর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জট খুলছে। চলতি সনের জুন মাসের মধ্যেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বৃহস্পতিবার ২ জুন মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ও দেশটির প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন।

মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে এখন বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ১৫২০টি। আমরা এই তালিকা তাদের পাঠিয়েছিলাম। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সমঝোতা অনুযায়ী রিক্রুটিং এজেন্ট নির্বাচন করার অধিকার কিন্তু মালয়েশিয়ার। যেহেতু তারা লোক নেবে সেহেতু অধিকার তাদের। এই যে ২৫, ৫০, ১০০ সংখ্যা আপনারা বলেন এই সংখ্যা সমঝোতায় নেই, আমাদের আজকের আলোচনার কথা ও নেই। তিনি বলেন, রিক্রুটিং এজেন্টরা যারা ব্যবসা করতে চায় তারা নিজেরাই নিজের ব্যবসা খুঁজবে।

অভিবাসন খরচ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, খরচ কিন্তু সমঝোতায় উল্লেখ করা আছে। কিছু অংশ বাংলাদেশের প্রান্তে খরচ আছে সেটি কর্মীকে বহন করতে হবে। আর বিমান টিকেট থেকে শুরু করে বাদবাকি যাবতীয় খরচ নিয়োগকর্তার। আগের সমঝোতায় বিমান টিকেট একটি ছিল আর এখন আসা-যাওয়া দুটির খরচ নিয়োগকর্তার।

মালয়েশিয়ার মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন, শূন্য অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্য তারা কাজ করে যাবেন। যদি কোন এজেন্সি বা নিয়োগকর্তা আইন ভঙ্গ করে তাহলে আইনী ব্যবস্থা নেবে তারা।

এ সময় সচিব জানান, মালয়েশিয়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেবে। পাশাপাশি তারা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা কর্মী ও গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী। কর্মীর বেতন হবে ১৫০০ রিঙ্গিত। এসময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, বিএমইটি মহাপরিচালক মোঃ শহীদুল আলম প্রমুখ।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ৮ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। দেশটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রম নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। কারণ হিসেবে অনিয়ম ও নিয়োগের উচ্চ খরচের কথা বলা হয়, যা ক্ষেত্রবিশেষে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকার মতো ছিল।

২০১৬ সালে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জি-টু-জি) প্লাস প্রক্রিয়ার আওতায় মালয়েশিয়া সরকার মাত্র ১০টি বাংলাদেশী সংস্থাকে কর্মী নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্বাচন করে। বাংলাদেশ সরকার ৭৪৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করেছিল। এর পর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম শ্রম বাজার হিসেবে বিবেচিত এই দেশটিতে নতুন করে কোন কর্মী যেতে পারেনি। দীর্ঘ আলোচনার পর ঢাকা ও কুয়ালালামপুর গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন শর্তে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী যাওয়ার বিষয়ে একটি স্মারক চুক্তি সই করে।

নতুন স্মারক অনুযায়ী, বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় অভিবাসনের খরচ জোগাবে সে দেশের নিয়োগদাতা সংস্থা। নিয়োগদাতারা যেসব খরচ যোগাবেনÑ মালয়েশীয় নিয়োগ সংস্থার সেবা খরচ, মালয়েশিয়ায় যাওয়া-আসা ও সেখানে থাকার খরচ। এ ছাড়া, নিয়োগদাতা সংস্থা মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন, ভিসা, মেডিক্যাল টেস্ট, বীমা, করোনার পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন খরচও জোগাবে।

এক্ষেত্রে শ্রম রফতানি প্রক্রিয়ায় নতুন সংযুক্তি হবে মালয়েশীয় নিয়োগদাতা সংস্থার উপস্থিতি। এর আগে পুরো প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশী সংস্থারা পরিচালনা করত। জেডব্লিউজি এই প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের কাজটি তদারকি করবে

শ্রমিক পাঠাতে সব এজেন্সিকে সুযোগ দেয়ার দাবি-মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির নামে ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচারের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের (বায়রা) সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক। এই সিন্ডিকেটকে দেশের উন্নয়ন বিরোধী, মুদ্রা পাচারকারী, মানব পাচারকারী, অভিবাসী শ্রমিকদের অর্থ লুণ্ঠনকারী ও স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানান তিনি। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট (বায়রা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি। মোহাম্মদ ফারুক বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে কথিত ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের বাজার দখলের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করে সব বৈধ বিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করতে হবে।

২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রফতানিতে দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় শ্রমিক রফতানি হওয়ার কথা ছিল ১৫ লাখ, কিন্তু হয়েছে মাত্র দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ জন। ফলে নিশ্চিত চাকরির সুযোগ হারিয়েছেন ১২ লাখ ২৫ হাজার জন। ওই সময়ে অভিবাসন ফি বাবদ নেয়ার কথা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর বিদেশী শ্রমিকের প্রয়োজন। আগামী তিন বছরে মালয়েশিয়ার প্রয়োজন ১৫ থেকে ২০ লাখ বিদেশী শ্রমিক। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ২৫ জনের তৈরি একটি সিন্ডিকেট। এবারের ন্যূনতম টার্গেট মালয়েশিয়া শ্রমিক রফতানি করে ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। গত বছরের মতো এবারও জনপ্রতি অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা করে আদায় করতে পারলে তারা অনায়াসে ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে পারবে।

যার ফলে, দেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ২০ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা চলে যাবে ১০ থেকে ১৫ লাখ ভিসা ক্রয় বাবদ, যোগ করেন মোস্তফা মাহমুদ। সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিয়াজ-উল-ইসলাম ও মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।জনকণ্ঠ