মামলার রায় হলে দলের করণীয় সম্পর্কে বলবেন খালেদা জিয়া

    0
    258

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২ফেব্রুয়ারি,ডেস্ক নিউজঃ   আগামীকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে শুরু হবে বিএনপির বর্তমান নির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠক। উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জানা গেছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মামলার (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) রায়কে সামনে রেখে দলের করণীয় সম্পর্কে এই বক্তব্যে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি। পাশাপাশি আবারও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরবেন তিনি।

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সূত্রের ভাষ্য, দলের নির্বাহী বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে একটি বিশেষ সংকটময় পরিস্থিতিতে। এই পরিস্থিতিতে চেয়ারপারসনের রায়, আগামী নির্বাচন ও সাংগঠনিক রূপরেখা— তিনটি বিষয়ই প্রাধান্য পাবে। এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত হবে, যেগুলো এখনও আলোচনাতেই আসেনি।
    বিএনপির রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দলীয় ইতিহাসে বিএনপি কয়েকবার বিপদে পড়েছে। এর মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের মেয়াদে এবং ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুই ভাগ হয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে ফখরুদ্দীনের সময় সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখে পড়ে দলটি। দলটির নেতাকর্মীদের ভাষ্য, ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত এই সময়ে শুরু হওয়া সংকটের রেশ এখনও আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কয়েক দফা ভাঙার চেষ্টা করেছে বিএনপিকে।

    দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে নির্বাহী কমিটির সামনে দিকনির্দেশনা দেবেন খালেদা জিয়া। আর এর মধ্য দিয়ে দলীয়ভাবে নতুন ইতিহাস তৈরি করবেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হওয়ার পর খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা দিলেও দলের করণীয় সম্পর্কে খালেদা জিয়া কিছুই বলে যেতে পারেননি। আর এবার তিনি প্রস্তুতি নিয়েই নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তার বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল কীভাবে পরিচালিত হবে— সেই নির্দেশনা তার কাছ থেকেই পাওয়াটা বিএনপির রাজনীতির জন্য মাইলফলক।

    কী বলবেন খালেদা জিয়া
    নির্বাহী কমিটিতে খালেদা জিয়ার বক্তব্য মূলত দুইটি পর্যায়ে বিভক্ত থাকবে। প্রথম পর্বের বক্তব্যে তিনি রাজনৈতিক ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের প্রতি আবারও নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনি সরকারের দাবি পেশ করবেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে তার বক্তব্য গণমাধ্যমেও প্রচার হবে।

    সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নিজ থেকে ‘পরিস্থিতি’ তৈরি করে— এমন বক্তব্য দেবেন না। একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা থেকে দূরে থাকতে সরকারকে সতর্ক করে আহ্বান জানাবেন তিনি। এই আহ্বান তিনি বিগত দিনে তার একাধিক আলোচনায় রেখেছেন। শনিবারের নির্বাহী কমিটির উদ্বোধনী অধিবেশনেও এ বিষয়টিই মুখ্য হয়ে উঠবে।
    দলীয় সূত্রগুলোর ধারণা, খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির বৈঠকের শেষ অধিবেশনে নেতাকর্মীদেরকে যেকোনও পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেবেন। বিএনপি ও দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী ধারা এই দলটির টিকে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেবেন চেয়ারপারসন। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, খালেদা জিয়ার মামলার রায় যাই হোক না কেন, প্রতিক্রিয়া হবে নিয়মবদ্ধ। কোনও ধরনের সহিংসতায় না যাওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত্য প্রকাশ করা হয় ওই বৈঠকে।

    শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।’ তার এই বক্তব্যও বিএনপিতে খানিকটা আশার সঞ্চার করেছে। অনেকেই ধারণা করছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি ইতিবাচক কিছুও দেখা যেতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সূত্রটি বলছে, খালেদা জিয়ার বক্তব্যেও ইতিবাচক অবস্থান উঠে আসবে।

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নির্বাহী কমিটি হওয়ার পর এটাই প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, সামগ্রিক অবস্থা উঠে আসবে। আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা, আগামী নির্বাচনও আলোচনায় আসবে। চেয়ারপারসন নির্বাচন নিয়েও কথা বলবেন।’
    তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার যে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে, হয়রানি করছে— এসব বিষয়ও নির্বাহী কমিটির আলোচনায় উঠে আসবে।’

    স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলছেন, ‘বিএনপির ভবিষ্যৎ কী হওয়া উচিৎ, এটাই সম্ভবত চেয়ারপারসনের বক্তব্যে উঠে আসবে।’

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ একজন সদস্য দাবি করেন, ‘পরিস্থিতি ঘোলাটে হোক, তা তিনি (খালেদা জিয়া) চান না। ফলে তার বক্তব্যে ঐক্য ও শান্তির কথাই স্থান পাবে।’

    তারেক রহমান থাকবেন অনলাইনে
    বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সূত্র বলছে, নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে পারেন লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামী বৃহস্পতিবারের (৮ ফেব্রুয়ারি) রায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গেলে বা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে তারেক রহমানই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাবেন।

    বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৮ ধারার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান উপধারাতেও বলা আছে, ‘চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।’

    বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, এরই মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা নয়া পল্টন থেকে রেজিস্ট্রেশন করছেন।

    বিএনপি দফতর জানায়, নির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের ৭০০ নেতা উপস্থিত থাকবেন। এর মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্য ৫০২ জন। এর বাইরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলার সভাপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
    অনলাইনে লাইভ হবে খালেদা জিয়ার ভাষণ

    বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের বক্তব্য ফেসবুকের তিনটি পেজ থেকে সরাসরি প্রচার করা হবে। পেজ তিনটি হচ্ছে— Facebook.com/bnp.communication, Facebook.com/bnpbd.org ও Facebook.com/bnplivenettv।