মানব জীবনে মিসওয়াকের গুরুত্ব অপরিসীম

    0
    280

    মুহাম্মদ এমদাদুল হক জাবেরঃ ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলামে এমন কোন দিক নেই যে অালোচনা করা হয়নি। মহান আল্লাহ’তায়ালার অপুরন্ত কল্যাণ ইসলামী ধর্মিয় বিধানের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণ এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির নির্দেশের পাশাপাশি মানবদেহ ও পোশাকের পবিত্রতারও শিক্ষা দিয়েছেন।ফলে মুসলিমদের নামাজের পূর্বে মিসওয়াক ও অজুর নির্দেশ প্রদান করে;তাতে আত্মিক ও শারীরিক দুটোর পবিত্রতাই অর্জিতের সুযোগ করে দিয়েছেন।

    এজন্য মিসওয়াককে আত্মিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। মহান অাল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই অাল্লাহ তায়ালা তাওবাকারী ও অত্যধিক পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন। [সুরা বাকারা ] একজন মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পনেরবার মুখ পরিস্কার করে। মুসলিম নামাজি ব্যক্তির মুখগহ্বর সর্বদা পরিস্কার থাকে। মিসওয়াকের মাধ্যমে উত্তমরূপে মুখ পরিস্কার করা হয়, এতে করে মুখে এমন রশ্মি তৈরি হয় যার দ্বারা কুরঅান তিলাওয়াত ও ইবাদতের মধ্যে স্বাদ এবং অানন্দ সৃষ্টি হয়। মিসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত মজবুত হয় এবং তা দাঁতের নানা রকম রোগ প্রতিরোধ করে।

    মাহবুবে খোদা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম মিসওয়াকের অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রত্যেক নামাজের পূর্বে অজুতে মিসওয়াক করা সুন্নত। অন্য সময় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। তিতা গাছের ডালের মিসওয়াকই উত্তম। মিসওয়াকের ডাল প্রস্থে শাহাদাত অাঙ্গুলের মত আর দৈর্ঘ্যে এক বিঘত হওয়া বাঞ্চনীয়।

    হাদিস শরিফে রয়েছে, হযরত অাবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা অানহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করছেন, অামার উম্মতের উপর মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট চাপিয়ে দেয়ার নিয়ত যদি অামার না হতো, তাহলে অামি তাদেরকে নির্দেশ দিতাম এশার নামাজ বিলম্ব করে পড়ার এবং প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মেসওয়াক করার। [বুখারী ও মুসলিম শরিফ] উপরোক্ত হাদিস থেকে অামরা উপলব্ধি করতে পারি যে,শরিয়তকে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সহজ করে দেওয়া হয়েছে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা অালাইহি ওয়া সাল্লাম অামাদের উপর এহসান করেছেন।

    অপর এক হাদিস শরিফে রয়েছে, হযরত শুরাই বিন হানি রাদিয়াল্লাহ তা’য়ালা অানহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, অামি হযরত অায়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহ তায়ালা অানহাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুল সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে ঢুকে প্রথম কোন কাজটি করতেন? হযরত অায়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা অানহা উত্তর দিলেন যে,তিনি প্রথমে মিসওয়াক করতেন। [সহিহ মুসলিম] মিসওয়াক সকল নবীগণের সুন্নত।

    বর্তমান বিজ্ঞান নির্ভর যুগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও মিসওয়াকের গুরত্ব ও উপকারিতা প্রণিধানযোগ্য। অভিজ্ঞ ডাক্তারগণের রিসার্সে প্রমাণিত হয়েছে পাকস্থলীর অনেক রোগ দন্ত রোগের কারণে হয়ে থাকে। অার এ রোগ নিরাময়ের সর্বোত্তম পন্থা হলো মিসওয়াক করা। মিসওয়াক জীবাণুকে হত্যা করে, মুখ হতে দুর্গন্ধ দূর করে।

    গবেষণা অনুযায়ী-মুখে এমন জীবাণুও সৃষ্টি হয় যা প্রচলিত ব্রাশ এবং পেষ্ট দ্বারা দূর করা সম্ভব হয় না বরং সেগুলোকে শুধু মিসওয়াকই রোধ করতে পারে। অারও প্রমাণিত হয়েছে,মিসওয়াক দ্বারা মস্তিষ্কের শক্তির পরিধি বাড়ে,কার্যকারিতা বাড়ে। চক্ষুসংক্রান্ত রোগের কারণসমূহের মধ্যে দাঁতের অপরিচ্ছন্নতা অন্যতম কারণ।

    দাঁতের ফাকে ঢুকে থাকা খাবারের কণার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, এবং চোখে নানারকম রোগ দেখা দেয়।কাজেই চোখের সুস্থতায়ও মিসওয়াকের উপকারিতা উল্লেখযোগ্য। মিসওয়াকের অারও কিছু উপকারিতা: মিসওয়াক করলে মহান অাল্লাহ খুশি হন, মেসওয়াককারীকে ফেরেশতারা ভালবাসেন,শয়তান অসন্তুষ্টি হয়, মুখ সুগন্ধিময় হয়,গরমের কষ্ট দূর হয়ে যায়,দারিদ্র এবং সংকীর্ণতা দূর হয়,মাথাব্যথা দূর হয়।

    মহান অাল্লাহ তা’য়ালা এই সুন্নতে মুবারাকাকে অামাদের অামল করার তাওফিক দান করুন। অামিন। লেখক:শিক্ষার্থী,জামেয়া অাহমদিয়া সুন্নিয়া অালিয়া কামিল মাদ্রাসা অনার্স অাল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।