মাদ্রাসা শিক্ষকের কটাক্ষের জেরে ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা

    0
    696

    “শার্শার নাভারণে মাদ্রাসা ছাত্রীর বিষপানে আতœহত্যার চেষ্টা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ”

    বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণে বিষপানে মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা প্রচেষ্টার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষককে দায়ী করে ছাত্রীর বাবা শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন । অভিযোগে জানা যায়, শার্শা উপজেলার নাভারণ মহিলা আলিম মাদ্রাসার দশম শ্রেনীর ছাত্রী সুমী খাতুন (১৫)কে একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এস এম রিজাউল বকুল অনুমান ভিত্তিক বিভিন্ন কুরুচিপূর্ন কাল্পনিক কাহিনী তৈরী করে শ্রেনী কক্ষে ছাত্রীদের কাছে কটাক্ষভাবে বর্ণনা করাসহ বিভিন্নভাবে কেফিয়ৎ তলব করা, অন্যান্য মেয়েদের সামনে তার সাথে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা, অপমানজনক কথা-বার্তা বলাসহ নানারকম আচরণ করার কারণে নিজকে অপমানিতবোধ করায় সোমবার মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে অন্যদের অজান্তে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে বিষ নিয়ে সুমী নিজে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু তাৎক্ষনিক সুমীর বাড়ির লোকজন জানতে পেরে নাভারণ-বুরুজবাগান সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করায় এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায়।
    উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দিনের মেয়ে সুমি জানায়, তার প্রতিবেশী বান্ধবী নাহিদা আক্তার তাদের পারিবারীক বিষয় নিয়ে তার মাদ্রাসার শিক্ষক এস এম রেজাউল বকুলের সাথে অশালীণ মন্তব্য, কুরুচিপূর্ণ খারাপ কথাবার্তা প্রকাশ করার পরে ক্লাসে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষক একই বিষয় নিয়ে উপহাসের সাথে অপমান মুলক কথা বার্তা বলায় সে বাধ্য হয়ে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বিষপান করলে তাকে দ্রুত বাড়ির লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দিলে সে বেঁচে যায়। এমন ধরণের ঘটনা প্রায়ই শিক্ষক এস এম রেজাউল বকুলের দ্বারা ঘটতে থাকে। এ ছাড়া ইতিপুর্বে এই বকুল স্যার আমাকে বাজারে একটি ছেলের সাথে কথা বলার অপরাধে বেত দিয়ে ৩৩ টি আঘাত করেছিল। তাতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল।
    এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক এস এম রেজাউল বকুল জনান, আমি সুমীর সাথে কোন খারাপ আচরণ করিনি। অন্যান্য মেয়েদের তার সাথে খারাপ আচরণ করতে নিষেধ করতাম। ইতিপুর্বে সুমীকে বেদম প্রহারের কথা তিনি স্বীকার করেন।
    নাভারণ মহিলা আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আলেয়া পারভীন জানান, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে লেখা-পড়ায় অমনোযোগী হলে শিক্ষক শাসন করতে পারে-এটা কোন দোষের নয়। কিন্তু তা যদি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তাহলে কিছু বলার নেই। আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ম থাকুক। এস এম রেজাউল বকুলকে একজন ভাল শিক্ষক হিসাবে আমরা জানি। তবে সুমীর বাবা অভিযুক্ত শিক্ষক এস এম রেজাউল বকুলের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার বিষয়ে আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে।
    নাভারণ মহিলা আলিম মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি সালেহ আহম্মেদ মিন্টুর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমার এক আত্মীয়কে চিকিৎসার জন্য আমি ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। রোববার দেশে ফিরে বর্তমানে আমি বাংলাদেশের শরীয়তপুরে আছি। মাদ্রাসার এমন ঘটনা আমাকে এখনও কেউ জানায়নি বা পুর্বের ঘটনাও আমাকে কেউ কখনও বলেনি।
    নাম প্রকাম না করার শর্তে এলাকাবাসীরা জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষক এস এম রেজাউল বকুল সম্ভবত ২০০৪ সালে একই মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেনীর তাওহীদা খাতুন নামের শিক্ষার্থীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর চাপের মুখে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।
    এ প্রসঙ্গে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডলের কাছে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এরকম একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর সত্য ঘটনা জানা যাবে।