মাদক নিমূর্লে ব্যতিক্রমী ভুমিকায় বিজিবির এসএম আনিসুজ্জামান

    0
    333

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬আগস্ট,নিজস্ব প্রতিনিধি,জহিরুল ইসলামঃ মাদকের ভয়াল থাবা যুব সমাজকে গ্রাস করেছে। মাদকের কু-প্রভাবে সমাজে বেড়ে চলেছে অন্যায় এবং যুস সমাজের অবক্ষয়। মাদকের অবাধ বিস্তারের কারনে জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আজ ম্লান হতে চলেছে। শুধুমাত্র একজন মাদকাসক্ত সন্তান সমগ্র পরিবারের জন্য বয়ে আনছে সীমাহীন দূর্ভোগ ও হতাশা। মাদক একটি পরিবারকে আর্থিক ও সামজিক উভয় ক্ষেত্রেই সীমাহীন দূর্ভোগে পতিত করে।
    মাদকের এই করালগ্রাসে যাতে আমাদের সমাজ আক্রান্ত না হতে পারে তাই মৌলভীবাজার সীমান্ত এলাকার পাহারায় দায়িত্বরত ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামান জিরো টলারেন্সে থেকে ব্যতিক্রমীসব উদ্যোগ নিয়ে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর তার এ পদক্ষেপে ইতিমধ্যে মৌলভীবাজারের ১৪৫ কিলোমিটার এলাকায় মাদক চুরাচালান অনেকাংশেই কমেগেছে। শুধু মাদক চোরাচালানরোধ নয় তিনি সমাজের এই অবক্ষয় রোধে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, র‌্যালি, জন সমাবেশ, ছাত্র সমাবেশ, প্রকাশ্যে মাদক ধ্বংস, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতামুলক সভা, বিওপি বৃদ্ধি, লোকবল বৃদ্ধি, মাদকের বিরুদ্ধে টহল অভিযান ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
    যুব সমাজকে মানব-সম্পদে পরিনত করতে মাদকের মরণ ছোবল যেন তাদের উপর না পড়ে তাই তিনি সীমান্তে মাদক চোরাচালান শতভাগ কমিয়ে আনতে ইতিমধ্যে তার সীমান্ত এলাকায় উদ্বোধন করেছেন আমতলী ও দত্তগ্রাম বিওপি এবং উদ্বোধনের অপেক্ষোয় রয়েছে লালার চক, মকাবিল ও জুলেখানগর বিওপি। একই সাথে বধিত করেছেন হরিণ ছড়া বিওপির ব্যাপ্তি। আর তার তৎপরতায় ইতিমধ্যে ৪৬ বিজিবিতে সংযুক্ত হয়েছে ৬০ জনেরও বেশি অতিরিক্ত লোকবল। যা মাদক চোরাচালান রোধে বিশাল ভুমিকা রাখছে। মাদক পাচারকরীদের ধরে দিয়েছেন মামলা।

    লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামান গত ৩০ জানুয়ারি ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তার প্রধান লক্ষ্যই ছিল মাদকমুক্ত সীমান্ত এবং মাদকের বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকার জনগনকে সোচ্চার করা। যার ফলে ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন কর্তৃক সীমান্ত এলাকায় প্রচুর পরিমানে মাদকদ্রব্য আটক করতে সক্ষম হয়। তিনি মাদকমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সভা সমাবেশ, র‌্যালি এবং মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রতি সকল স্তরের জনগণকে মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন।
    নায়েক সুবেদা জালাল, আব্দুল হাই জানান, তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণের ৭মাসে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার মাদক দ্রব্য আটক হয়।

    সিন্দুরখান বিওপির কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার সিরাজ জানান, তাদের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামানের তৎপরতা ও অনুপ্রেরণায় তারা সীমান্ত এলাকায় মাদক পচার রোদে কাজ করছেন এবং বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্য উদ্বার করতে সক্ষম হন।
    লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামান শুধুমাত্র সীমান্তে মাদকদ্রব্য আটক করেই বসে থাকেনি। তিনি মাদকমুক্ত দেশ গড়ার কথা ভেবে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং ছাত্র ছাত্রীদের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও সোচ্চার হওয়ার জন্য বিভিন্ন সভা সমাবেশ এবং র‌্যালীর আয়োজন করেছেন ।
    তিনি গ্রহনের মাত্র ১০ দিনের মাথায় এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পাসে জনসচেতনতা/পরিচিতিমূলক সভার আয়োজন করেন। উক্ত সভায় শ্রীমঙ্গল বনবিভাগের বন কর্মকর্তা, চা বাগানের ম্যানেজারগণ, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় মত বিনিময়ের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি বিভিন্ন কর্মসূচী এবং সীমান্তে মাদক পাচার রোধ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর ধারবাহিকতায় তিনি ৯ ফেব্রুয়ারি ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান বিওপিতে জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করেন। উক্ত সচেতনামূলক সভায় স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহন করে। সভায় তিনি সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনকে মাদকের কুফলের বিষয়টি আলোকপাত করেন যাতে কোন মানুষ যেন মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তে আসক্ত না হয়।

    লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামান জানান, তিনি ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর প্রধান লক্ষ ছিল মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়া। কারণ আজকের এই যুব সমাজই আগামী দিনে এদেশকে নেতৃত্ব দিবে। তাই এই যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য যুব সমাজের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে মাদক বিরোধী র‌্যালী এবং সভার আয়োজন করেন। তিনি গত ৫ মার্চ ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন, শ্রীমঙ্গল এর ব্যবস্থাপনায় মৌলভীবাজার সদরে এক বিশাল মাদকবিরোধী র‌্যালী ও জনসমাবেশ এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেন। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন উত্তর-পূর্ব রিজিয়ন কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার। যা মৌলভীবাজার জেলায় ব্যাপক সারা জাগায়। বিশেষ করে এ শোভাযাত্রা মৌলভীবাজার শহরবাসীর মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন হতে সহায়তা করে।

    ওই দিন রিজিয়ন কমান্ডার ছাড়াও বিজিবি শ্রীমঙ্গল সেক্টর কমান্ডার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সহ¯্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক অভিভাবকসহ এক হাজারের অধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। র‌্যালি শেষে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ মিলনায়তনে মাদকবিরোধী সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
    তার নেতৃত্বে গত ২৫ মে ব্যাটালিয়ন সদর শ্রীমঙ্গলে শহরে বিশাল মাদক বিরোধী র‌্যালী এবং মাদকদ্রব্য ধবংস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। র‌্যালীটি শ্রীমঙ্গল শহর এলাকা প্রদক্ষিণ করে ব্যাটালিয়ন সদরে সমবেত হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মৌলভীবাজার-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস শহীদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোঃ আশরাফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিবৃন্দ, শ্রীমঙ্গল সেক্টর সদরের অফিসারবৃন্দ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, শ্রীমঙ্গল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কাষ্টমস অফিসের প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র এবং স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, স্কুল কলেজের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ।

    এ সময় লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামান বক্তব্যে বলেন, শ্রীমঙ্গল সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল আশরাফুল ইসলামের পরার্মশ মতে মাদকের ভয়াল থাবা যেন আমাদের যুব সমাজকে গ্রাস করতে না পারে সে ব্যাপারে তিনি কাজ করছেন। তিনি জানান, সীমান্তে মাদক মোকাবেলায় বিওপিগুলোও সদা তৎপর। সারা বছর জুড়েই বিওপিগুলো মাদক বিরোধী যুদ্ধেলিপ্ত রয়েছে। সীমান্তের বিওপিগুলো প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে মাদক বিরোধী টহল পরিচালনা করে যাচ্ছে। জব্দ করছে বিপুল পরিমান মাদক দ্রব্য। মাদক দ্রব্য জব্দের পাশাপাশি পুরো সীমান্ত জুড়ে প্রতিনিয়ত বিওপি পর্যায়ে জনসমাবেশের মাধ্যমে মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসাধারনকে বিশেষ করে যুব সমাজকে রখে দাড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সাথে তিনি ৪৬ বিজির সন্নিকটস্থ সাধুবাবার বটতলী বধ্যভুমি একাত্তরের উন্নয়নে ও ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধে একটি আর্কাইভ গড়েতুলার কাজ করেযাচ্ছেন। এ ছাড়াও সীমান্তের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং সীমান্ত এলাকায় উন্নয়ন কাজ করার লক্ষ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে একাধিক পতাকা বৈঠক করে তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

    তাছাড়াও গত ২৬ জুলাই বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাদক দিবস’’ উপলক্ষ্যে ‘‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত র‌্যালী ও আলোচনা সভায় সেক্টর কমান্ডার, বিজিবি শ্রীমঙ্গল, শ্রীমঙ্গল সেক্টরের সকল অফিসারবৃন্দ, মৌলভীবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, শ্রীমঙ্গল উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, শ্রীমঙ্গল প্রাথমিক ও সীমান্ত পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ সকল স্তরের বিজিবি সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় তিনি মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা মূলক বক্তব্য প্রদান করেন এবং মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

    মাদকের করাল গ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষার জন্য লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার পুরো সীমান্ত জুড়ে প্রতিনিয়ত মাদক বিরোধী টহল অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত রয়েছে আর তাদের সার্বিক দিক নির্দেশনায় রয়েছেন লেঃ কর্ণেল এস এম আনিসুজ্জামান অধিনায়ক ৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন শ্রীমঙ্গল।