মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি

    0
    278

    মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু মানব জাতিকে সৃষ্টি করে তার প্রতি অনুগত থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দিয়েছেন।এই সুযোগগুলোকে বিশ্বাসীরা অর্থাৎ মু’মিনরা কাজে লাগিয়ে যেমন ইহকালে ও পরকালে সফল তেমনি এর থেকে অলস অচেতন মানব সন্তান হারিয়ে যায় অন্ধকারের গহবরে। আমরা ঈমান এনে নিজের ভাগ্যকে ক্ষমার যোগ্য করেছি। এখন পূর্ণমাত্রায় এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছায় হবে মানব জীবনের সর্বোত্তম পন্থা। পবিত্র রমজানুল মোবারক আমাদের দেহ ও আত্মার জন্য এত বরকতময় মাস যা আর কোন জাতিগোষ্ঠীর ভাগ্যে জুটেনি, তাই আসুন রহমতের ধারা বয়ে যাচ্ছে এর থেকে মহান আল্লাহর অসীম রহমত সঞ্চয় করে নেওয়ার চেষ্টা করি।

    “লাইলাতুল কদর” আরবি শব্দ। “লাইলাতুল” অর্থ রাত্রি আর “কদর” শব্দের অর্থ সম্মান বা মর্যাদা। অন্য আরেকটি অর্থ হচ্ছে; ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। ধর্মীয় সুত্রানুসারে, পবিত্র এই রাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃর্নির্ধারণ করা হয়। বরকতময় রজনী হলো লাইলাতুল কদর। আল্লাহ এ রাতকে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের আরও কারণ হল এ রাতে সৃষ্টিকুলের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পবিত্র আল-কোরান নাজিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল এর ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ জাল্লাহ শানুহু পবিত্র কোরআনুল কারিমে  সুরা কদর নামে একটি সূরা মুসলিম জাতিকে উপহার দিয়েছেন যা অনাদিকাল পর্যন্ত পঠিত হবে মানব সমাজে।

    আমরা জানি রামাদানুল কারিমের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত গুলোর কোন একটি মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর খুঁজে নিতে হয়। যেটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত। আর এ মাস গুলোকে একত্রে করলে প্রায় ৮৩ বছরেরও অধিক সময় হয়। জীবনে একবার সঠিকভাবে রাতটি পেয়ে গেলে আজীবনের সাওয়াব পেয়ে যায় বান্দা। বান্দার জন্য স্রষ্টাকর্তৃক জীবদ্দশায় এটিও একটি কল্যাণকর রাত। হাদীস শরীফ এ লাইলাতুলকদর রাতের কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে। আসুন সেগুলো দেখে রাতটি মিলিয়ে নেই।

    • রাতটি ভয় করার মতো গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
    • নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ না গরম, না শীতের তীব্রতা থাকবে।
    • মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
    • সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবেন।
    • কোন কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
    • কাংখিত  রাতে বৃষ্টি বর্ষণও হতে পারে।
    • সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জল দেখাবে।

    কাংখিত সে রাতের একটি বিশেষ দোয়াও রয়েছে যেটা উম্মুল মু’মিনীন হজরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা লাইলাতুল ক্বদর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-ওগো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর পাই তখন কী করব ? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহাকে  জানিয়ে দেন, তুমি তখন বলবে, اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي  উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন কারীম তুহিব্বুল আ’ফওয়া-ফা’ফু আন্নী।

    অনুবাদঃ হে আল্লাহ ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল,ক্ষমা করে দিতেই আপনি ভালোবাসেন অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। তিরমিযি, ইবনে মাজাহ

    কেউ যদি পার্থিব জীবনে অনেক কিছু পেয়ে যায় কিন্তু ক্ষমা না পায়, তাহলে তার জীবন ব্যর্থ। তাই এ রাতের সন্ধানে অন্তরকে নরম করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পূর্বে প্রিয় নবীকে অনুসরণ ও অনুকরণ এর মাধ্যমে তার প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা রেখে খাঁটি দিলে তওবা ইস্তেগফার করা জরুরী। খাঁটি তওবার চারটি শর্ত:

    • পূর্বের গুনাহ থেকে ফিরে আসার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।
    • অতীতের সকল গুনাহর জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হতে হবে।
    • ভবিষ্যতে ওই গুনাহ আর করবো না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
    • বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে যথাসাধ্য আদায় করে দিতে হবে।

    আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা সবাইকে যথাযথভাবে রাতটি তালাশ করে লাইলাতুল কদরের যথাযথ সম্মান আদায়ের মাধ্যমে মহান আল্লাহর ক্ষমা ও প্রিয় নবীর ভালোবাসা আদায়ের তৌফিক দান করেন। আমিন,বেহুরমাতে সায়্যিদুল মুরসালিন। লেখকঃ আনিছুল ইসলাম আশরাফী