মহান লাইলাতুল কদরের রাত্রিঃএতে যা করনীয়

    0
    353

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২২জুন,এম, এ, ইসলাম আশরাফীঃ   আজ (২২ জুন ) রাত বা রমজানের ২৭ তম রাত সাধারণভাবে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হিসেবে বেশী পরিচিত। আভিধানিকভাবে লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানীত রাত। পবিত্র সূরা কদরে ঘোষণা করা হয়েছে-“লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের রাতের চেয়েও উত্তম।

    তাফসিরের কিতাব গুলোতে উল্লেখ রয়েছে এক দিন প্রিয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এ ভেবে অস্থির হচ্ছিলেন যে, আগের নবীর উম্মতেরা দীর্ঘ হায়াত পেতেন। ফলে তারা অনেক বেশি ইবাদত বন্দেগির সুযোগ পেতেন। কিন্তু শেষ নবীর উম্মতের হায়াত খুবই সীমিত। তাদের পক্ষে উচ্চ মর্যাদা লাভের সুযোগ কম। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সূরা নিয়ে উপস্থিত হন হজরত জিবরাইল আলাইহিসসালাতু ওয়াসসালাম।

    ফলে শান্ত হন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবিরা (রাঃ)। আল্লাহতায়ালা এ রাতেই কোরআন মজিদ নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতটির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু রাত কোনটি তা বলে দেননি। হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য রয়েছে। তবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন।

    যদিও বুযুর্গানে দ্বীন এবং মুফাস্সিরগণ ও মুহাদ্দিসগণ رحمة الله عليه শবে ক্বদর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মতবিরোধ রয়েছে, তবুও প্রায় সবার অভিমত হচ্ছে, প্রতি বছর শবে ক্বদর ২৭ শে রমযানুল মুবারকের রাতেই হয়ে থাকে। হযরত সায়্যিদুনা উবাই ইবনে কা’ব

    رضي الله عنه ২৭ শে রমযানুল মুবারকের রাতকেই শবে ক্বদর বলেন। (তাফসীর-ই-সাভী, খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ২৪০০) হুযুর গাউসে আযম সায়্যিদুনা শায়খ আবদুল কাদির জিলানী رضي الله عنه ও উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হযরত সায়্যিদুনা  আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর رضي الله عنه ও এ কথাই বলেছেন।

    হযরত সায়্যিদুনা শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী

    رحمة الله عليه  বলেন, “শবে ক্বদর রমযান শরীফের ২৭তম রাতে হয়ে থাকে। নিজের কথার সমর্থনে তিনি দুটি দলীল বর্ণনা করেন, ১. লাইলাতুল ক্বদর শব্দ দুটিতে ৯ টা বর্ণ রয়েছে। এ কলেমা সূরা ক্বদরে তিনবার ইরশাদ হয়েছে। এভাবে ‘তিনকে নয় দিয়ে গুণ করলে গুণফল হয় ২৭। এটা এ কথার দিকে ইঙ্গিত বহন করেছে যে, শবে ক্বদর ২৭শে রমযানুল মুবারকে হয়ে থাকে।

    ২. অপর ব্যাখ্যা এটা বলেন যে, এ সুরা মুবারকায় ত্রিশটি পদ রয়েছে। তন্মধ্যে ২৭তম বর্ণ হচ্ছে, আরবী পদটি, যা দ্বারা ‘লাইলাতুল কদর’ বুঝানো হয়। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নেক্কার লোকদের জন্য এ ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, রমযান শরীফের ২৭শে রাতই শবে ক্বদর হয়। (তাফসীরে আযীযী, খন্ড-৪র্থ, পৃ-৪৩৭) লাইলাতুল কদর শরীফ কিভাবে পালন করবো আলহামদুলিল্লাহ! আমরা জীবনে আরেকটি কদরের রজনী পেয়েছি। মাগরিব থেকে ফজর পর্যন্ত সম্মানিত মহিমান্বিত এ রাতের সময় সীমা। তাই আমরা বুঝতে হবে এ রাতের প্রতিটি মুহুরতো প্রতিটি নিশ্বাস অতি মূল্যবান। তাই প্রতি নিঃশ্বাসে মওলার স্মরণ থাকা চাই। এর যে ইবাদত গুলো করা যায়-
    ১) মাগরিব, এ’শা ও ফজরের ফরয নামাজের
    পর-
    ক) আল্লহামদুলিল্লাহ- ৩৩ বার।
    খ) সুবহানাল্লাহ-৩৩ বার।
    গ) আল্লাহু আকবার-৩৩ বার পড়ে মুনাজাত।
    ২) বা’দ মাগরিব ৬ রাকাত আওবিনের নামাজ
    পড়া।
    ৩) তারাবীহ এর পর বেতেরের আগে ১২/১৬/২০ রাকাত লাইলাতুল কদরের সুন্নাত নিয়্যতে এই নিয়মে পড়া+ ১ম রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সূরায়ে কদর (ইন্না আনযালনা) একবার পড়া। ২য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৩ বার সূরা ইখলাস (কুলহু আল্লাহ্) পড়া।
    এভাবে ৪ রাকাত পর আস্তাগফিরুল্লাহ ১বার দরূদ শরীফ ৩ বার পড়ে মুনাজাত।এভাবে কদরের নামাজ শেষ করতে হবে।
    ৪) সালাতুত তাসবিহ এর নামাজ পড়া।
    ৫) মুখস্ত হলেও কিছু কোর আনে পাকের সূরা গুরুত্ত্বপূরণো আয়াত পাঠ করা।কারণ এ রাত কোর আন নাযীলের রাত।
    ৬) যত বেশী সম্ভব নবী পাকের উপর দরূদ শরীফ পড়া। কারণ এ মুল্যবান রাত
    একমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার খাতিরে আমরা পেয়েছি।
    ৭) ইয়া আল্লাহু, ইয়া রহমানু ইয়া গাফফারু,ইয়া রাহীমু, ইয়া মালিকু, ইয়া কদ্দুসু, ইয়া সালামু ইত্যাদি ওয়াজিফা বা জিকির ১০০ বার করে পড়া।
    ৮) তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া।
    ৯) অতীতের ক্বাযা ফরজ নামাজ আদায় করা।

    ১০)মীলাদ-ক্বিয়াম শরীফ এর মাধ্যমে আখেরি মুনাজাত করা। ইত্যাদি।সব আমলের পূরবো শরতো বিশুদ্ধ নিয়ত ও অন্তরের একাগ্রতা।আল্লাহ জাল্লা শানুহু তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আউলিয়ায়ে কিরামের আশেক-প্রেমিক হিসেবে এ রাতের ইবাদত, বন্দেগী আমাদের কবুল করুন। আমিন!