মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সহিংসতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিএনপি প্রতিনিধি দল

0
265
মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সহিংসতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিএনপি প্রতিনিধি দল
মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সহিংসতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বিএনপি প্রতিনিধি দল

সুজয় বকসী, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ  নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়া কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সহিংসতায় ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর, দোকান ও মন্দির পরিদর্শন করেছেন বিএনপি প্রতিনিধি দল। শনিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজ খবর নিতে এবং ঘটনার বিষয় জানতে বিএনপির তদন্ত কমিটি  নড়াইলের লোহাগড়া সাহাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও একটি দোকানদারের মাঝে ৩০ হাজার টাকা  এবং ৪টি মন্দিরে ৪০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহব্বায়ক ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি আডঃ বাবু নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ,  ব্যারস্টার ফাহিমা নাসরীন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি , সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু অপু, বিএনপি নির্বাহি কমিটি সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী ,বিএনপি নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস,সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আলী আহসান,জেলা সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক  শাহরিয়ার রিজভী জজ, জেলা যুবদলের সভাপতি মশিউর রহমান ,সাধারণ সম্পাদক সায়দাত কবির রুবেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোঃ ফসিয়ার রহমান,সদস্য সচিব মঞ্জুরুল সাইদ বাবু,ছাত্রদলে সভাপতি  ফরিদ বিশ্বাস,সাধারন সম্পাদক সনি খন্দকারসহ বিএপির সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ক্ষতিগ্রস্থর বসতবাড়ি পরিদর্শন শেষে স্থানীয় গোবিন্দ মন্দিরে সবার সাথে মতবিনিময় কালে  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বাংলাদেশ আমাদের সবার এখানে আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় লোকরা বার বার সংখ্যালঘু বলে  হিন্দু সস্প্রদায়ের লোকদের কে ছোট করছে। আমাদের বাংলাদেশের সবাই নাগরিক এখানে সংখ্যালঘু বলে কোনো কিছু নেই । নেতারা আরও বলেন , এই  ধরনের হামলা ভাংচর আগুনের ঘটনায় যে দলেরই লোক জড়িত হোক না কেন তার বিচারের দাবী জানাই ।

ব্যারস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা দেখেছি এখানে মন্দিরকে তছনছ করে ফেলা হয়েছে। এটা এ বাংলাদেশেই সম্ভব। আমরা দেখেছি এ ঘটনা কুমিল্লাতে ঘটেছে, ঠাকুরগাওয়ে ঘটেছে, নাছিরনগরে ঘটেছে, ব্রাহ্মনবাড়িয়া ঘটেছে, পাবনা ঘটেছে, এখন দেখছি নড়াইলেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনার যদি শুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতো, তাহলে দেশের কোথাও এরকম ঘটনা আর ঘটতো না। এই সরকার মনে করে হিন্দু কমিউনিটি যদি থাকে, তাহলে তাদের ভোট পাওয়া যাবে আর যদি তারা ভয়ে দেশ ত্যাগ করে তাহলে তাদের জমিটা কেড়ে নেয়া যাবে। দেশে যেহেতু এখন ভোটের প্রয়োজন নেই, ক্ষমতায় থাকতেতো এখন আর ভোট লাগে না, সুতরাং তাদের জমিটুকু হলেই হয়। তাদের ঘরের গহনাটুকু আর টাকা নিতে পারলেই তারা খুশি। পুলিশ প্রশাসন দীর্ঘ ৪৫মিনিট কি করেছে সে প্রশ্ন করেন তিনি। তাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। মন্দিরে, বাড়িতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার শুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। অজ্ঞাতনামা আসামীর খেলা বন্দ করতে হবে। অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করা চেষ্টা হয়। নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসানো হয়। প্রকৃত যারা অপরাধী তারা পার পেয়ে যায়।

প্রসঙ্গত গত ১৫ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (দঃ) নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ওইদিন জুম্মার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুদ্ধ লোকজন আকাশ সাহার গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন। ওইদিন বিকেল থেকে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে।  

বিক্ষুদ্ধ লোকজন একপর্যায়ে সাহাপাড়ার পাঁচটি বাড়ি ও দিঘলিয়া বাজারের ছয়টি দোকান ভাংচুর করেন। এর মধ্যে গোবিন্দা সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘরটি পুড়ে গেছে।

এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স এবং আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাংচুর ও মহাশ্মশান কালিবাড়ি মন্দির সামান্য ক্ষতি করে বিক্ষুদ্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে। 

প্রসঙ্গত যে, গত ১৫ জুলাই লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (দঃ) নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা, তরুণ সাহা, দিলীপ সাহা, পলাশ সাহার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর এর ঘটনা ঘটে । এর মধ্যে গোবিন্দা সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ভাংচুর আগুনের ঘটনায় লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় ১৭ জুলাই ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৯)। পুলিশ এ ঘটনায় এপর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।   

অপরদিকে সাহা পাড়ার অশোক সাহার ছেলে কলেজ ছাত্র আকাশ সাহা ফেসবুকে মহানবী (দঃ) কে নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দাঙ্গা সৃষ্টির অপরাধ’ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। ১৬ জুলাই লোহাগড়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন দিঘলিয়া গ্রামের সালাহ উদ্দিন কচি সরদার। ১৬ জুলাই রাতে খুলনা থেকে আকাশ সাহাকে গ্রেফতার করে।