মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে অপহরণ মামলা

    0
    269

    প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে মোতাওয়াল্লীকে হয়রানি অভিযোগ

     

    চুনারুঘাট প্রতিনিধিঃ  চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের দক্ষিণ আমকান্দি আব্দুল ওয়াজিদ জামে মসজিদ নিয়ে বিরোধের জেরে মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে মোতাওয়াল্লীকে হয়রানী করছে এক প্রভাবশালী মহল। জানা যায়, দক্ষিণ আমকান্দি গ্রামের চাঁন মিয়ার পুত্র মাও: আহম্মদ আলী সোহেল বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত আছকির মিয়ার পুত্র মানিক মিয়া (৪৫) সহ গংদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে চুনারুঘাট থানায় মামলাটি রুজু হয়। যার মামলা নং- ০৩, তাং- ০১/০৯/১৯, জি.আর ২০০/১৯ (চুনা:)।

    মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার সময় মামলার বাদী আহম্মদ আলী সোহেলের বোন ভিকটিম ইয়াছমিন আক্তার বাড়ি হতে বড়াইল মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে সে অপহরণ হয় এবং ভিকটিম গাড়ির মধ্যে হাউ মাউ ও চেঁচামেচি করলে অপহরনকারীরা তাকে ঢাকার সায়েদাবাদ জনপথের মোড়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাদীকে সংবাদ দেন এবং যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

    পরে আহম্মদ আলী সোহেল তাদের ঢাকার আত্মীয়কে বিষয়টি জানালে তারা ভিকটিমকে যাত্রাবাড়ি থানা হইতে জিম্মায় নিয়া বাদী আহম্মদ আলী সোহেলের নিকট ভিকটিমকে পৌছিয়ে দেয়।

    সরেজমিনে এলাকায় অনুসন্ধানে জানা যায় যে, মামলার বাদী মাও: আহম্মদ আলীর বোন ভিকটিম ইয়াছমিন আক্তারকে কেহ অপহরণ করেনি এবং দক্ষিণ আমকান্দি গ্রামে কোন অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। ভিকটিমকে তাদের ঢাকাস্থ এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় মর্মে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

    মামলার বাদী আলী আহম্মদ সোহেল পূর্ব বিরোধের আক্রোশে এলাকার দরিদ্র কৃষক মানিক মিয়াকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার হীন মানসে বাদীর বোন ভিকটিম ইয়াছমিন আক্তারকে অপহরণ করেছে মর্মে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে ঘটনার প্রায় ০১ মাস পরে বিজ্ঞ আদালতে উক্ত মামলাটি দায়ের করে।

    সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর নিকট থেকে জানা যায় যে, এলাকার দরিদ্র মানিক মিয়া দক্ষিণ আমকান্দি আব্দুল ওয়াজিদ জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পিতা আকছির মিয়াও জীবিত থাকাকালে উক্ত মসজিদের মোতাওয়াল্লী ও সভাপতি ছিলেন। মসজিদের জায়গা নিয়ে ও মসজিদ পরিচালনা নিয়ে আহম্মদ আলী সোহেলের সাথে মানিক মিয়ার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আহম্মদ আলী সোহেল মসজিদের ০৭ শতক জায়গা জোর পূর্বক দখল করে দীর্ঘদিন যাবত আত্মসাতের পায়তারা করছে এবং মসজিদের ভূমিতে জোর পূর্বক ঘর তুলিয়াছে।

    মামলার বাদী আহম্মদ আলী সোহেল বিবাদী মানিক মিয়ার আপন চাচাতো ভাই হয়। জায়গা ও মসজিদ সংক্রান্ত বিরোধকে পুঁজি করে মামলার বাদী আহম্মদ আলী সোহেল তার আপন ছোট বোন ইয়াছমিন আক্তারকে ভিকটিম সাজাইয়া মিথ্যা ঘটনার অবতারনা করে মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে উল্লেখিত জি.আর ২০০/১৯ মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করিয়াছে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত মামলায় বর্ণিত কোন ঘটনা ঘটে নাই বা ভিকটিম ইয়াছমিন আক্তারকে কেহ অপহরণ করে নাই। বাদীর বোন ইয়াছমিন আক্তার পূর্ব হতে তার সহোদর বোন জাসমিন আক্তারের ঢাকার বাসায় বসবাস করত।

    আজিমাবাদ মৌজায় জে.এল নং- ১০২, এস.এ খতিয়ান নং- ২৮৪, এসএ দাগ নং- ১৫১২, বি.এস ২৬৭৩ নং দাগে ১৪ শতক চারা রকম ভূমি দক্ষিণ আমকান্দি আব্দুল ওয়াজিদ জামে মসজিদের নামে রেকর্ডভুক্ত। গত ১০ আগস্ট মসজিদের জায়গা হতে ৭ শতক ভূমি আহম্মদ আলী সোহেল জোরপূর্বক দখলের পায়তারা করলে এলাকাবাসী ও মানিক মিয়া এতে বাধা প্রদান করলে আহম্মদ আলী সোহেল উক্ত ভূমি আর দখল করতে না পেরে মানিক মিয়া ও তার চাচাতো ভাই বশির আহমেদ সোহাগকে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি সহ বড় ধরনের ক্ষতিসাধনের হুমকি প্রদান করে।

    পরবর্তীতে বশির আহমদ সোহাগ বাদী হয়ে আহম্মদ আলী সোহেল সহ ০৬ জনকে আসামী করে চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক অভিযোগটি গ্রহণ করে এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য এসআই শহিদুল ইসলামকে ঘটনা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন। এলাকার দরিদ্র কৃষক মানিক মিয়া তার বিরুদ্ধে দায়েরী জি.আর ২০০/১৯ (চুনা:) মামলায় সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বাদী আহম্মদ আলী সোহেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ জেলা বরাবরে একখানা লিখিত আবেদন করেন এবং আবেদনের অনুলিপি সহকারী পুলিশ সুপার, মাধবপুর সার্কেল ও চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে দাখিল করেন।

    মামলার বাদী আহম্মদ আলী সোহেল কর্তৃক মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরী জি.আর ২০০/১৯ (চুনা:) মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত মর্মে একখানা লিখিত প্রত্যয়নপত্রে আলহাজ্ব ছুরুক আলী মীর, মো: চিনু মিয়া, মো: সোহাগ মিয়া, মো: সোহেল মিয়া, মো: ইউনুছ মিয়া সহ এলাকার ১৩৩ জন গণস্বাক্ষর প্রদান করেন এলাকাবাসী।

    উক্ত বিষয়ে আহম্মদ আলী সোহেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

    উল্লেখ্য যে, আহম্মদ আলী সোহেল তার পৈর দাদা মৃত রাশিদ উল্লার সম্পত্তি মসজিদের জায়গার ভিতরে আছে বলে মসজিদের ৭ শতক জমি তার দাবি করে দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে মানিক মিয়া তার বিরুদ্ধে দায়েরী মিথ্যা অপহরণ মামলার দায় থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।