ময়লার ভাগাড় নিয়ে কঠোর অবস্থানে শ্রীমঙ্গলের শিক্ষার্থীরা

    0
    257

    হৃদয় দাশ শুভ,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পূর্বঘোষিত কর্মসূচী মোতাবেক শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ময়লার ভাগার অন্যত্র সরিয়ে না নেওয়ায় গত রোববার সন্ধ্যা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌরসভার একমাত্র ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলতে দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা, তাদের দাবী পূর্বেও তাদেরকে নানান আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিন্তু তার কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি, এবার এই আন্দোলন থেকে তাদের অন্যত্র ময়লা ফেলতে বাধ্য করবে  এমন প্রত্যাশা আন্দোলনকারীদের।

    শিক্ষার্থীদের এ অবরোধের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পৌর এলাকার ময়লা ফেলা ৷বাসা বাড়ী ও শহরের সমস্ত ময়লা বিভিন্ন জায়গায় জমে পচন ধরেছে। সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ। বাসাবাড়ির স্তুপকৃত ময়লা গত ছয়দিন ধরে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থিত পৌরসভার একমাত্র ময়লার ভাগাড়ে ফেলতে পারছেনা পৌরকর্তৃপক্ষ।

    এমতাবস্থায় বাসাবাড়ীর ময়লা নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়েছেন পৌরবাসী।এরই মধ্যে ড্রেন থেকে ময়লা আবর্জনা তুলে শহরের রাস্তাঘাটকে আরও বিদঘুটে করে রেখেছে।

    এ ব্যাপারে স্থানিয় ব্যবসায়ী মনসুর আহমদ বলেন,”আমার ধারনা এলাকার পরিবেশ-পরিস্থিতিকে আরও কলুষিত করতেই কারো ইন্ধনে ড্রেন থেকে ময়লা উঠিয়ে রাস্তায় জমা করা হচ্ছে যা কেবল হিংসারই বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু  বর্তমানে বৃষ্টি কম এখন তড়িঘড়ি করে ময়লা তুলার প্রয়োজন ছিলনা।এরুপ কর্মকাণ্ড স্থানীয় সামাজিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।

    অপর দিকে শহরের আরেক ব্যবসায়ী লিটন বলেন, সামনে সনাতন ধমীলমস্বীদের সবচাইকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পুজা উপলক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনা কাটা করতে শহরমুখী হচ্ছেন গ্রাম ও চা-বাগান এলাকা থেকে আসা মানুষ। এখন যদি শহরের দোকান পাটের সামনে ময়লার স্তুপ পড়ে থাকে তাহলে আমাদের ব্যবসার মারাক্তক ক্ষতি হতে পারে।

    গত সোমবার থেকে আজ পর্যন্ত শহরের চৌমুহনা চত্বর,কোর্ট রোড,গুহ রোড,উদয়ন স্কুল,থানা মসজিদ সম্মুখস্থ এলাকা,স্টেশন রোড,হবিগঞ্জ রোড,পুরান বাজার,নতুন বাজার মাছ বাজারসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এসব ময়লা থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে বিকট দুর্গন্ধ।

    আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়রা কলেজ সড়কের ময়লার ভাগাড়ের প্রবেশপথে বাশেঁর খুঁটি ও লম্বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে দিয়েছে।

    স্থানীয় এলাকাবাসী ও আন্দেলনকারীরা দিন-রাত সেখানে পাহাড়াও বসিয়েছে। যাতে করে পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ী গিয়ে সেই স্থানে ময়লা না ফেলতে পারে!

    সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়লার ভাগাড়ের প্রবেশপথে বাশেঁর খুঁটি ও লম্বা বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়া। বেড়ার গায়ে বাশেঁর উপর ব্যানার আর তাতে লেখা রয়েছে ‘১লা অক্টোবর ২০১৮ থেকে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ,দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসার সম্মুখে ময়লার ভাগাড়ে পৌরসভার ময়লা ফেলা বন্ধ করুন। শিক্ষার্থীবৃন্দ,শ্রীমঙ্গল’।

    এ ব্যাপারে  পৌর মেয়র এর সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি৷পৌরসভার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে মেয়র বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন ৷

    এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী আব্দুল করিম  বলেন, ‘ আগামীকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা শ্রীমঙ্গলের জেটি সড়কের নতুন যে জায়গাটি নিয়েছি সে জায়গায় আনুসঙ্গিক কাজ শুরু হবে এবং বর্তমান ভাগাড়ে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে)  ময়লা ফেলতে হবে। এছাড়া কোন বিকল্প স্থান নেই। তিনি আরো জানান, গত বুধবার (৩ অক্টোবর) প্রশাসনের সাথে সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের দিন সকালে ময়লার গাড়ি গেলে শিক্ষার্থীরা ময়লা ফেলতে দেয়নি।

    আজ (শনিবার) সকালে আমরা পৌরসভার কাউন্সিলররা মিলে ময়লার ভাগাড়ে গিয়েছিলাম। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাগাড়ের চারদিকে টিনের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা প্রদান করেছে। পরে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে আলোচনা করেছি। আগামীকাল  (রোববার) শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সকল পক্ষ বসবো। আমরা আশা করছি আগামীকাল একটা ফলপ্রসু সমাধান হবে।

    আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল মোতালেব  বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে পৌরসভার ময়লার ভাগাড়  অপসারনের বিষয়টি নিয়ে আমাদের বার বার মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা মৌখিক প্রতিশ্রতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেননি। প্রশাসনের সাথে আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের কেউ ছিলো না। আমাদের রেখে তাঁরা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেন তা বোধগম্য নয়। এখন আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে শর্তস্বাপেক্ষ আমরা সবাই মিলে জনহিতকর সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

    শহরে ময়লা জমে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শহরবাসী যদি এই কয়েকদিন ময়লার গন্ধ সহ্য করতে না পারেন, তাহলে বছরের পর বছর শিক্ষার্থীরা কিভাবে এসব সহ্য করে আসছে?

    শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা: জয়নাল আবেদীন টিটো এই প্রতিনিধিকে বলেন, ভেজা ময়লায় জীবানু খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তা বাতাসের সাথে ছড়িয়ে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার রোগ সৃষ্টি করে! আর এসব ভেজা ময়লার স্তুপ থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস তৈরী হয় এবং তা বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে মাথা ব্যাথা,উত্তেজিত হওয়া সর্বোপরি মনোযোগ নষ্ট করে দেয়!তাছাড়াও এসব ময়লা একত্রিত করে ফেলে রাখলে শহরে আবর্জনার মশা-মাছি সাধারণত জন্মস্থান থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে। এতে রোগ জীবানু দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে। খাদ্যনালির প্রদাহ তার অন্যতম। এছাড়াও ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ ব্যাধি দ্রুত ছড়ায়।

    ময়লার ভাগাড় অপসারণে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম একজন তরুণ সমাজকর্মী তারিক হাসান বলেন পৌরবাসীর জমানো ময়লা কোথায় নিয়ে ফেলবেন সেটা পৌর মেয়রই ভালো জানেন। আর এজন্যই তাকে আমরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছি!তিনি অভিযোগ করে বলেন এই ভাগাড়ে শহরের ময়লার পাশাপাশি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টও ভোর বেলা প্রতিদিন লুকিয়ে এসে ময়লা ফেলে চলে যায়। কিন্তু কেন ? গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টতো পৌরসভার ভেতরেই পড়েনা! তিনি বলেন শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে আমরা পৌরবাসীরও দাবী অচিরেই এই ময়লার ভাগাড় অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হউক!আমরা চাই একটি সুস্থ পরিবেশ,চাই একটি সুন্দর শহর আর একজন নাগরিক হিসেবে এটা আমার অধিকার!

    অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান,আমরা অনেকদিন ধরেই এই ভাগাড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য আন্দোলন করে আসছি।মানববন্ধনের পাশাপাশি সম্প্রতি পৌর  মেয়র বরাবর স্বারকলিপিও দিয়েছি তাতেও কোন কাজ হয়নি শেষমেশ আমরা এই ভাগাড়ে ময়লা ফেলতে দিবোনা! আর পহেলা অক্টোবর থেকে এই ভাগাড়ে ময়লা ফেলতে দিচ্ছিনা।আমরা শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের নিয়ে দিনরাত পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছি যাতে করে পৌরসভার গাড়ি এসে এই ভাগাড়ে আর ময়লা ফেলতে না পারে।তবে আমরা শিক্ষার্থীরা দ্রুত এই বিষয়ে সমাধান চাই।

    নবাগত শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম  বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ মহোদয়ের সাথে পৌরসভার কাউন্সিলরা গত রাতে (শুক্রবার) বৈঠক করেছেন। সেখানে সংসদ সদস্য জেলা প্রশাসনের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।এ ব্যাপারে যুক্তিযুক্ত সমাধানে আসতে সকল পক্ষকে নিয়ে আগামীকাল রোববার উদ্ভুত এই সমস্যা নিরসনে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

    উল্লেখ্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজ,দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ও গাউসিয়া শফিকীয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসার সম্মূখ থেকে পৌরসভার দুর্বিষহ ময়লার এই ভাগার অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবীতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী,অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষজন অংশ নেয়।