মমতার বিকল্প প্রস্তাব নাকচঃচুক্তির দ্রুত রূপায়ন চাই ভারত

    0
    238

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১০এপ্রিল,ডেস্ক নিউজঃ   ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বহুলালোচিত তিস্তা চুক্তিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকল্প যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা নাকচ হয়ে গেছে। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় যৌথ বিবৃতিতে মমতার দেয়া তোর্সা ফরমুলার কোনো উল্লেখই নেই। বরং তিস্তা চুক্তির দ্রুত রূপায়নে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের কথা বলছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

    রোববার সন্ধ্যায় ভারতের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা যৌথ বিবৃতির একাংশে বলা হয়েছে, ‘২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দুই সরকারের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি সই করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছেন। মোদি জানিয়েছেন, ওই চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তার সরকার সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন।’

    ওই বিবৃতিতে প্রকাশ, ‘ফেনি, মানু, ধরলাসহ ৭টি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি সইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

    এ ব্যাপারে দুই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফেনী, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গুমটি, ধরলা ও দুধকুমারের পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এর আগে বলেছিলেন, ‘আপনার তো পানি দরকার। তোর্সা ও আরও যে দু’টি নদী উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গেছে, তার পানির ভাগ ঠিক করতে দু’দেশ কমিটি গড়ুক। শুকনো তিস্তার জল দেয়াটা সত্যিই সমস্যার।’

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকাশ, মমতার দেয়া বিকল্প প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

    মমতার প্রস্তাবে যে কেন্দ্রীয় সরকার অখুশি তা আকার-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রী। তার মতে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীন সময়ে এরকমভাবে একটি বিকল্প প্রস্তাব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা কূটনীতির পরিপন্থি।

    কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন,  ‘তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন বিবৃতি দিয়েছেন, ঠিক সেই সময়ে প্রকাশ্যে এই নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হয়নি। বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তিন বার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। রাজ্য সরকারকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা নিয়ে যে এগোবে না, তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বিবৃতি দেয়ার সময় বাছাটা ঠিক হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশকে যে বড় হারে সহায়তা দেয়া হয়েছে, তা চাপা পড়ে গেল।’

    সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘এতদিন পর্যন্ত তিস্তার কথা শুনছিলাম, এখন মুখ্যমন্ত্রী তোর্সা এবং আরও কিছু নদীর কথা বলছেন। খাল, বিলকে নদী বলা যায় না! প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি তিস্তা চুক্তি করবেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আমাকে ছাড়া হবে না।’

    প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কোনো দর কষাকষির চেষ্টা করছেন বলেও অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেন।

    অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার তোর্সা প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারণ, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্রস্তাব আসেনি। বরং এটিকে মমতার ব্যক্তিগত মত বলেই মনে করছেন তারা।

    তাছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং মতামতকেই দ্বিপক্ষীয় অবস্থানের প্রতিফলন বলে মনে করছে বাংলাদেশ।

    ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগেই অবশ্য দৃঢ়তার সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাকে হয়তো এ যাত্রায় মোদির দৃঢ় আশ্বাসকে সম্বল করেই দেশে ফিরতে হতে পারে।ইরনা