মনরে কৃষি কাজ জানো না:ধানের চেয়ে ৫০ গুণ বেশী ফসল

    0
    251

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১০জানুয়ারী,মুন্সী গিয়াস উদ্দিনঃ     ধানের চেয়ে ৫০ গুণ বেশী মূল্যের ফসল যা বাংলাদেশে করা সম্ভব আমার গ্রাম এলাকায় ব্রাম্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি-কৃষকেরা তাদের বাপ-দাদার অনুসৃত পথেই কৃষিকাজ করে যাচ্ছেন। ৪০ বছরেও এ এলাকায় কোন সবিশেষ পরিবর্তন চোখে পড়েনি। তারা ধান, পাট, সরিষা, মূলা, টমেটো, তিল, তিশিতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছেন। ৩০ বছর আগে থেকে যশোর, সাভারে বাণিজ্যিক ফুলের আবাদ করে কৃষক নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।

    প্রতিবছর অন্যান্য চাষীর থেকে ৩-৪ গুণ বেশী মুনাফা ঘরে তুলেছেন এবং এখন সেই ফুল এর কারবারে ভাটা পড়তে শুরু করেছে চায়না থেকে আমদানী কৃত কৃত্রিম ফুলের বাজার দখলের কারণে। অর্থাৎ তারা একটি বিপ্লব এর প্রায় পুরোটা ধরতে পেরেছেন। আমার বিশ্বাস যশোর আর ঢাকার সাভারের ফুল চাষীরা আবার নতুন কৃষি-উচ্চ মূল্যের বিদেশী ফল ও ফসলের চাষেও নেতৃত্ব দিবেন। পরিবর্তন একটি কষ্টকর বিষয়, নতুন কিছু মেনে নেয়াটা , গ্রহণ করাটা কষ্টকর, সাহসের প্রয়োজন হয়। আর যারা এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করার কষ্ট বরণ করতে আগ্রহী, সাদরে নতুন কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছেন, জগতে তারাই নেতৃত্ব দেন।

    বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যিক কৃষিতে তারাই নেতৃত্ব দিবেন। এখন ধান বা অন্য সস্তা ফসলের বিকল্প ফসল আছে অসংখ্য, দেশে ও বিদেশে যার চাহিদার শেষ নেই। এরকম ফসল হচ্ছে ড্রাগন, কাঁচা খাবার উপযোগী খেজুর (Barhee date palm), কফি, Avocado, গোল মরিচ, হাইব্রীড নারিকেল, কাজু বাদাম, মিস্টি ভুট্টা (সুইট কর্ণ) , Industrial pineapple, এসব ফসল আমাদের দেশের সর্বত্র হবে। ড্রাগন, খেজুর, Avocado, হাইব্রীড নারিকেল সারা দেশের সব উঁচু জমিতে চাষ করা যাবে। কাজুবাদাম, কফি, গোলমরিচ, এলাচ বর্তমানে চা হচ্ছে এমন সব জমিতে, যেমন চট্টগ্রাম, সিলেট, ঠাকুরগাঁ , পঞ্চগড়, ভাওয়ালেরগড় সহ বহু এলাকাতে হবে। বর্তমানে বছরে গড়ে ৩ কোটি একর জমিতে আমরা ১/২ বার ধান চাষ করে বছরে ৩.৫ কোটি টন চাউল উৎপন্ন করে সব খেয়ে ফেলে ভুল করছি, তার থেকে ২০-৩০বা ৪০% উঁচু জমিতে এই সব দামী ফসল চাষ করে লাখ লাখ লোক নিজেদের ভাগ্যের সাথে সাথে দেশের ভাগ্য সহজেই বদলিয়ে ফেলতে পারে। আমরা এখন দেখি কোন ফসল চাষ করে কতদিনে কত টাকা আয় করা যাবে।

    ড্রাগন ফল একরে ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা, ২য় বছরে ৪, ৩য় বছরে ৭/৮, ৪র্থ বছরে ১২-১৪ লাখ, এর পরে বছরে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় হবে ২৫-৩০ বছর ধরে। ফলন হয় একরে ১০-১৪ টন, দাম পাইকারী ১৫০-২০০/-ধরে। বারহী খেজুর একরে খরচ হবে ৫-৬ লাখ টাকা, ৩য় বছর ৫, ৪র্থ বছর ৭/৮, ৫ম বছর ১৫-১৬, ৬/৭ বছর থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি আয় হবে একরে ৪০-৫০ বছর। এই খেজুর প্রক্রিয়াজাত করে রেখে পরে কাঁচা ই বিক্রি করা যায়। গোল মরিচ বা Avocado একবারই বেশি বিনিয়োগ করতে হবে কিন্তু এরপর শুধু পরিচর্যা খরচ। Avocado সারা বিশ্বর সব ধনীদেশে প্রচুর চাহিদা। কিন্তু ধনীদেশ ঠান্ডা, এ কারনে তারা কখনও এর চাষ করতে পারবে না। বিশ্ব এর লাখ লাখ টনের চাহিদ। আমাদের দেশে একরে ৫-৭ টন ফলন হবে, অনায়াসে একরে ৭-১০ লাখ টাকার বেশি আয় হবে। গোলমরিচের আয় হবে একরে ৮-১০লাখ টাকা দীর্ঘকাল ।

    রোবাস্টা কফি ভিয়েতনাম ১৯৮৬ সালে ১৮০০০টন কফি রপ্তানী করেছিল আর তারা ২০১৬ সালে ১০০ গুন বেশি প্রায় ১৮ লাখটন কফি রপ্তানী করে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এদেশের বহুস্থানে খুব সহজে রোবাস্টা কফি চাষ করে বাংলাদেশ বিশ্বে বড় কফির রপ্তানীকারি দেশ হতে পারে। এভাবে সারা দেশে কাজুবাদাম, শিল্পেব্যবহৃত আনারস, মিস্টিভট্টা সহ অসংখ্য দামী ফসল চাষ করে রপ্তানীর মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার সহজেই আয় করতে পারি। (আগামী পর্বে-নতুন বাণিজ্যিক কৃষি ছাড়িয়ে যাবে গার্মেন্টস শিল্পকেও)