ভিপি হিসেবে বিজয়ী নুরুল হক নুর এর পরিচয়

    0
    284

    দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর নুরুল হক নুর এখন রাজনৈতিক অঙ্গন এবং শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার শিরোনাম। সাধারণ একজন শিক্ষার্থী থেকে ডাকসুর ভিপি হওয়ার- এই ঘটনাকে ‘চমক’ হিসেবে দেখছেন অনেকেই।

    সোমবার মধ্যরাতে ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় ভিপি পদে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হককে সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে, ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রথমে মেনে নিতে অস্বীকার এবং বিক্ষোভ করে। পরে অবশ্য ভিপি হিসেবে নুরুল হককে স্বাগত জানায় তারা।

    ছাত্রলীগ, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে কতটা সাফল্য পাবেন সে নিয়ে অনেকের শঙ্কার মাঝেই নির্বাচনে প্রার্থী হন কোটা আন্দোলনের এই নেতা। পরে তিনিই প্রায় দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে পরাজিত করেন। তার মোট প্রাপ্ত ভোট ১১ হাজার ৬২টি।

    নুরুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্বে অধ্যয়নরত। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। বিতর্ক, অভিনয়সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকবার হামলার মুখে পড়েন তিনি।

    নুরুল হকের জন্ম পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে পরিবারের তৃতীয় সন্তান নূর। তিনি তার মাকে হারান ১৯৯৩ সালে। সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম নেয়া নূরের বাবা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ইদ্রিস হাওলাদার। তিনি জানান, ‘নূর মাতৃহারা হয়েছেন ১৯৯৩ সালে যখন তার বয়স আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় বছর। আমাদের যোগাযোগ সমস্যার কারণে তার মায়ের চিকিৎসা করাতে না পারার কারণে হয়তো সে ডাক্তার হতে চেয়েছিল।’

    চর এলাকাতেই সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। এরপর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চাচাতো বোনের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেন এবং কালিয়াকৈর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। এইচএসসি পাশ করেন উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। মেডিকেল কলেজে সুযোগ না পেয়ে প্রথমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান।

    নুরুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে গণমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার পর থেকেই একদিকে শারীরিক নানারকম হামলার শিকার যেমন হয়েছেন, তেমনি সাইবার জগতেও শিকার হয়েছেন আক্রমণের। তিনি ‘শিবির-কর্মী’ বলে অনলাইনে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। এমনকি নির্বাচনের ফল ঘোষণার রাতে নূর-এর বিজয়ের খবরে ‘শিবিরের ভিপি মানি না’ এমন স্লোগানও দিয়েছিল ছাত্রলীগ।

    তবে নুরুল হক কখনো শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল কি-না জানতে চাইলে তার পরিবার তা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে নুরুল হক এর আগে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় হল কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন। হাজী মুহম্মদ মহসিন হল ইউনিটের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।

    নূর যেভাবে আজ পুরো দেশের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন সে প্রসঙ্গে তার বাবা ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, ‘রাজনীতি দুশ্চিন্তার বিষয়। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে, নানা ধরনের ঝামেলা থাকে, জেল জুলুম হয়, অন্যায় নির্যাতনের শিকার হতে হয়, এগুলো যন্ত্রণার ব্যাপার আছে। আমার ছেলে সব সাধারণ ছাত্রছাত্রীর জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এর শিকারও হয়েছে। তবু আমি চাই সে এটা চালিয়ে যাক।’

    নূর-এর বাবা চান তার ছেলে যে ধারায় রাজনীতির মধ্যে এস পড়েছে সে ধারা ধরে রাখুক সততার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নষ্ট হয়ে যাক এটা আমি কখনোই চাই না। আমি চাই আমার ছেলের দ্বারা দেশের মঙ্গল হোক।’ সাধারণ পরিবার থেকে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হলেও একেকটি আন্দোলন তাকে গড়ে তুলেছে বলে তার বাবা মনে করছেন।

    ইদ্রিস হাওলাদার বলছেন, ‘অনেকেই বলছে সে সাধারণ পরিবারের-এটা ঠিক, তবে সে যে আন্দোলন করেছে সেটা সকল মানুষের আন্দোলন ছিল। সারা বাংলার মানুষের সমর্থন পেয়েছে সে। সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য তারা আন্দোলন করেছে। সে প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, এইভাবে সে নিজেকে তৈরি করেছে। সুতরাং সে হঠাৎ করে এ জায়গায় আসেনি।’

    তিনি জানান, ‘একবার ডিবি পুলিশ তাকে ধরেছিল এবং পরে ছেড়ে দিয়েছিল। তবে আমাদের কোন ভয়ভীতি নেই। আমার ছেলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেভাবে জড়িত না। কোনও রাজনীতির ব্যানারে নির্বাচন করেনি। সে এখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, তাকে জ্ঞান দেয়ার কিছু নাই। সে যা ভালো মনে করবে তাই করবে।’

    একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বাবুল মুন্সী জানান, ‘নূরকে এখানকার মানুষ খুব একটা চিনতো না। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এলাকার মানুষ তার কথা জানতে পারে। এখন তার এই অর্জনে চরাঞ্চলের মানুষকে আনন্দিত করেছে।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা