ভারতে যৌতূকের ভয়ে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা !

    0
    316

    “গর্ভপাতের কারণে মারা যাওয়া প্রায় ছয় লাখ কন্যা শিশুর একটি বড় অংশই এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার”

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১০এপ্রিলঃ  ভারতে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া বেআইনি হওয়া স্বত্বেও তা চলমান রয়েছে অনেক জায়গাতেই এবং এর বেশ জনপ্রিয়তাও রয়েছে।আর এর ধারাবাহিকতায় চলছে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা।

    দেশটিতে প্রতিবছর গর্ভপাতের কারণে মারা যাওয়া প্রায় ছয় লাখ কন্যা শিশুর একটি বড় অংশই এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে এক হিসেবে জানা যাচ্ছে। কিন্তু ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত?

    মুম্বাই থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটারের মত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি শুকিয়ে যাওয়া খাল।

    এলাকাটি জনবিরল, যদিও খালটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের খুব পাশেই এবং সেখানে দাঁড়িয়ে মহাসড়কটি ধরে ছুটে যাওয়া যানবাহন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।

    এই খালের বাদামি নরম মাটিতেই পোতা ছিল উনিশটি কন্যা শিশুর ভ্রূণ। কয়েক সপ্তাহ আগে, মাটি খুঁড়ে সেগুলোকে উদ্ধার করা হয়।

    ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই মানবশিশুগুলোর দেহাবশেষ ছিল ছোট ছোট নীল রঙের এক একটি প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়ানো।

    পুলিশের ধারণা কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যাকারীদের একটি বড়সড় চক্র এই এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

    পুরো ঘটনাটি বেরিয়ে আসে যখন গর্ভপাত ঘটানোর সময় এক তরুণীর মৃত্যু ঘটে।

    ২৫ বছর বয়সী সোয়াতি জামদাদির বাবা সুনীল যাদব বলেন, তার মেয়ের গর্ভে ছিল একটি কন্যা শিশু, এ কারণেই তার স্বামী তাকে গর্ভপাত করতে বাধ্য করে।

    পরে মিস্টার যাদব থানায় একটি অভিযোগ করেন, আর এই অভিযোগের সূত্র ধরেই ভ্রূণ হত্যাকারীদের এই চক্রের সন্ধান মেলে।

    সুনীল যাদবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে একটি বড়সড় রঙিন ছবি টানানো। সেখানে হাসিমুখ সোয়াতির পরনে একটি বর্ণীল শাড়ি। যাদব এই ছবি দেখেন আর চোখের পানি মোছেন।

    “আমার মেয়ে আর ফিরবে না। কিন্তু যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটা বন্ধ হবে। ভারতীয় পিতা মাতাদেরকে একটি কন্যাকে বড় করতে এবং বিয়ে দিতে অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু এই যদি হয় তার পরিণতি, তাহলে এসব করে লাভ কি?”

    কয়েক সপ্তাহ আগে তের জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এদের মধ্যে সোয়াতির স্বামী এবং তিনজন চিকিৎসকও ছিলেন।

    পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা দীপালি কারে বলছেন, “এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা আবিষ্কার করেছি, এই চক্রের সাথে চারজন মধ্যস্থতাকারী রয়েছে। আর এই চক্রের একজন চিকিৎসক সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ জন মহিলার গর্ভপাত ঘটান।”

    ছোট্ট এক শহরের সরু একটি গলির পাশে যে হাসপাতালটিতে এই সব গর্ভপাত ঘটানো হচ্ছিল বলে পুলিশের অভিযোগ, সেটি একটি হলুদ রঙা দ্বিতল ভবন, লাল টালির ছাদ।

    কর্তৃপক্ষ কথিত এই হাসপাতালটিকে সিলগালা করে রেখেছে।

    ভারতের গর্ভের শিশুর লিঙ্গ আগে থেকে জানবার চেষ্টা করা বা এতে সাহায্য করা আইনত দণ্ডনীয়।

    তা স্বত্বেও ভারতে অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করবার পরীক্ষা দেশটির অনেক এলাকাতেই চলছে এবং এর জনপ্রিয়তাও রয়েছে।

    সমাজকর্মী বারশা দেশপান্ডে বহু বছর ধরে ভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার।

    তিনি বলছেন, ভারতে গর্ভপাত জনিত কারণে প্রতিবছর ছয় লাখের মত কন্যা শিশু মারা যায় এবং এগুলো স্রেফ দুর্ঘটনা নয়।

    ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত?

    বারশা দেশপান্ডে বলছেন, “মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে পিতামাতাকে যৌতুক দিতে হয়। ফলে পরিবারের কাছে কন্যারা সবসময়ই বোঝা হিসেবে বিবেচিত। একারণেই সে কাঙ্ক্ষিত নয়। ভারতে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ ও কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যার প্রধান কারণই এই যৌতুক।”

    এই যৌতুক প্রথাও ভারতে নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু বাস্তবে খুব কমই প্রভাব ফেলতে পেরেছে এই নিষেধাজ্ঞা।

    কন্যা শিশুর জন্ম হলে কোনো উৎসব হবে না, ভারতে এটা প্রায় রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

    আর বহু মেয়ে শিশু সেই পর্যন্ত যেতেই পারে না। জন্মের অনেক আগেই সে হয়ে যায় নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার।বিবিসি