আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬জুন,ডেস্ক নিউজঃ ভারতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে পরপর মুসলিম নিহত হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠন এবং সমাজকর্মীদের পক্ষ থেকে হাতে কালো ফিতে বেঁধে ঈদের নামাজে শামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত (বৃহস্পতিবার) বিজেপিশাসিত হরিয়ানাতে ঈদের বাজার করে ফেরার পথে ট্রেনে দুর্বৃত্তদের হামলায় জুনাইদ নামে এক মুসলিম তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
একইদিনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াতে গবাদি পশু চোর সন্দেহে মুহাম্মদ সামিরুদ্দিন, মুহাম্মদ নাসির এবং মুহাম্মদ নাসিরুল হক নামে তিন জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
সম্প্রতি উত্তেজিত জনতার হাতে নিহত হন জম্মু-কাশ্মিরের ডিএসপি আয়ুব পণ্ডিত।
এর আগে বিজেপিশাসিত রাজস্থানের আলওয়ারে গো-রক্ষকদের গণপিটুনিতে মুহাম্মদ পহেলু খান নিহত হন।
উত্তর প্রদেশের দাদরিতে মুহাম্মদ আখলাককে গণপিটুনিতে হত্যা করে উগ্র ধর্মান্ধরা।
এসব ঘটনার বিরোধিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে যাতে আগামীকাল (সোমবার) মুসলিমদের কালো ফিতে বেঁধে ঈদের নামাজে শামিল হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মাইনরিটি এডুকেশন অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট মিশনের উত্তর প্রদেশের সচিব আব্দুল হান্নান তার সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের ফোন করে ঈদের নামাজ পড়ার সময় হাতে কালো ফিতে বাঁধার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তার দাবি, এ ব্যাপারে লখনৌয়ের বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদওয়াতুল উলামাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
আব্দুল হান্নান বলেন, তার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ওই বার্তা বহুদূর পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন। ওই প্রতিবাদকে সরকারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে উন্মত্ত জনতার হাতে মৃত্যু মিছিল বন্ধ করা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার চালানো ইমরান প্রতাপগড়ি বলেন, আমরা যুবকদের আহ্বান জানিয়েছি তারা যেন হাতে কালো ফিতে বেঁধে ঈদের নামাজ পড়েন এবং তাদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ইমরান বলেন, ঈদ আল্লাহ্র নিয়ামত। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধিতা করব, কোনো ধর্না-প্রদর্শন করা হবে না। আমরা কেবল নামাজের সময়েই প্রতিবাদ জানাবো। যদি এসকল ঘটনার প্রতিবাদ না করা হয় তাহলে আগামীতে আমরাও জনতার শিকারে পরিণত হবো। তিনি একে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং বিভক্ত সমাজকে রক্ষার জন্য ছোট্ট প্রয়াস বলে অভিহিত করেছেন।
সামাজিক সংস্থা ‘রিহাই মঞ্চ’-র মুখপাত্র শাহনওয়াজ আলম বলেন,‘এই অভিযানে অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যুক্ত রয়েছেন। কোনো একটি ব্যানারের মাধ্যেমে বিরোধিতা না হওয়া সমাজের পরিপক্কতার নিদর্শন। উন্মত্ত জনতার হাতে হতার ঘটনা খুব উদ্বেগজনক বিষয় এবং এটি মহা-বিপদের দিকে ইঙ্গিত করছে। দেখতে হবে এসব ঘটনা কোনো ষড়যন্ত্রের ফলে হচ্ছে কী না।’
আজ (রোববার) উপসাগরীয় দেশগুলোতে ঈদ পালিত হচ্ছে। সেখানে ভারতীয় প্রবাসীরা হাতে কালো ফিতে বেঁধে ঈদ পালনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ শেয়ার করেছেন।
দুবাইতে মুহাম্মদ আরিফ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রবাসী মুসলিমরা ভারতে ধর্মান্ধ জনতার হাতে হওয়া সহিংসতার প্রতিবাদে কালো ফিতে বেঁধেছে।
দাম্মামে কালো ফিতে বেঁধে ঈদ পালন করা মুহাম্মদ সাদ্দাম বলেন, ভারতে সংগঠিত উন্মত্ত জনতার হাতে মুসলিম হওয়ার কারণে নিহত হতে হচ্ছে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে নিজেদের দেশের বিদ্যমান অবস্থার কথা বিশ্বকে জানাতে চাচ্ছি।
ওয়াসিম আকরম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, আগে সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনের লোকেদের হেফাজতের জন্য দোয়া করতে হতো। এখন ভারতের লোকেদের হেফাজতের জন্য দোয়া করতে হচ্ছে।
নাদিম খান নামে একজন লিখেছেন, ঈদ তো খুশির দিন। কিন্তু নাজিব আহমেদ, পহেলু খান, মিনহাজ, জুনায়েদের মতো মজলুমদের বাসায় ঈদ হবে কী?
ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে মুসলিমদের উপরে হামলার ঘটনা বেড়ে চলায় অনেকে মনে করেন হামলাকারীরা ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষাপ্রাপ্ত।পার্সটুডে