ভাগ্য গড়ার খুঁজে গ্রিসে নিখোঁজ হবিগঞ্জের যুবকঃছেলেকে ফিরে পেতে মায়ের কাকুতি

0
327
ভাগ্য গড়ার খুঁজে গ্রিসে নিখোঁজ হবিগঞ্জের যুবকঃছেলেকে ফিরে পেতে মায়ের কাকুতি
ভাগ্য গড়ার খুঁজে গ্রিসে নিখোঁজ হবিগঞ্জের যুবকঃছেলেকে ফিরে পেতে মায়ের কাকুতি

নূরুজ্জামান ফারুকী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ ভাগ্য গড়ার খুঁজে গিয়ে গত দুই মাস যাবত গ্রিসে নিখোঁজ রয়েছে হবিগঞ্জের মো. ওয়াহিদ আলী। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তার কোন সন্ধান না পাওয়ায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে তার পরিবারের সদস্যরা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ায় ওয়াহিদ জীবিত আছে না মারা গেছে তা-ও জানা যাচ্ছে না। তাই ছেলেকে ফিরে পেতে গ্রীস ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিনীতি আবেদন জানিয়েছেন ওয়াহিদের মা-বাবা। নিখোঁজ ওয়াহিদ আলী হবিগঞ্জ শহরের অন্তপুর এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক আলীর ছেলে।

জানা যায়, গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে মিনি বাংলাদেশ নামে পরিচিত মানোলাদার লাপ্পা গ্রামে পাঁচ বছরের বেশী সময় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী মো. ওয়াহিদ আলী। গত ৭ জুলাই কর্মস্থল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আজও পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মিলছে না। এ নিয়ে দেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যরা রয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। ওয়াহিদের পরিবারের দাবি, অর্থ আত্মসাতের জন্য তাকে গুম করে হত্যা করেছে একটি দুষ্কৃতকারী চক্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীঘ ৫ বছর ধরে গ্রীসের কৃষি কাজের জন্য প্রসিদ্ধ গ্রাম মানোলাদারের পাশে লাপ্পা নামক গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন ওয়াহিদ আলী। সেখানে তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা লিটন, ইদ্রিস ও কুদ্দুস মিয়ার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। গত ৭ জুলাই হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান ওয়াহিদ। এরপর থেকে দুই মাস কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওয়াহিদকে উদ্ধারের জন্য এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও নিখোঁজের মামা রমিজ মিয়াসহ আরো অনেকে।

এদিকে, ওয়াহিদের সন্ধানে দিশেহারা বাংলাদেশে অবস্থানরত তার মা-বাবা-ভাইসহ আত্মীয়স্বজনরা। তাদের দাবি, লাপ্পায় বসবাসরত অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেননি বিধায় উপার্জিত অর্থ নিরাপদ মনে করে জমা রাখতেন ওয়াহিদের কাছে। নিখোঁজের আগে ওয়াহিদের কাছে ৬১ জন বাংলাদেশির লক্ষাধিক ইউরো জমা ছিল। যা বর্তমানে বাংলাদেশের এক কোটি টাকারও বেশী। সেই টাকা আত্মসাতের জন্য ওয়াহিদকে গুম করেছে তার মালিক।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম সন্তানের খোঁজ না পেয়ে বার বার মুর্চা যাচ্ছিলেন তার বাবা সিদ্দিক আলী ও মা জাবেদা খাতুন। সেখানে গিয়ে ওয়াহিদের কথা বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তারা। এসময় তারা সন্তানের ছবি বুকে নিয়ে শুধু একটাই দাবী করেন তাদের সন্তানকে যেন তারা ফিরে পান। একই দাবী ওয়াহিদের স্বজনদের। তারা বলছেন, ওয়াহিদ একজন খুবই ভাল ছেলে। তার সাথে এমনটা ঘটবে কেউ কখনো ভাবতেও পারেনি। তাই গ্রীস সরকার যেন তাকে উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করে।

নিখোঁজ ওয়াহিদের বাবা সিদ্দিক আলী বলেন, ওয়াহিদই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তি। গত দুই মাস যাবত আমার ছেলের কোন খোঁজ খবর পাচ্ছি না। আমরা শুণেছি আমার ছেলেকে বিশ্বাস করে সেখানকার লোকজন তার কাছে টাকা পয়সা জমা রাখতো। সেই টাকা আত্মসাত করতেই ওয়াহিদের মালিকরা তাকে গুম করে টাকা পয়সা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। আমরা শুধু আমার ছেলেকে ফিরে চাই। ওয়াহিদের মা জাবেদা খাতুন বলেন, টাকা পয়সা কিছুই চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরে এনে দাও। আর এজন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কামনা করেন। ওয়াহিদের ভাই আশিক আলী বলেন, যে দিন থেকে আমার ভাই নিখোঁজ হয়েছে বিষয়টি জানার পর থেকেই ভাই’র দোকানের মালিকরাও গ্রীস থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভাইর কাছে জমানো টাকা আত্মসাত করতেই আমার ভাইকে গুম করা হয়েছে।

নিখোঁজ ওয়াহিদের মামা গ্রীস প্রবাসি রমিজ মিয়া জানান, এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও গ্রীস দূতাবাসও বিষয়টি নিয়ে তৎপর রয়েছে।