ব্রুনাইয়ে শরীয়া আইন চালুঃবহু তারকা ও মার্কিনীদের হোটেল বয়কট !

    0
    244

    ব্রুনেইয়ে ইসলামী শরিয়া আইন চালুর পর, দেশটির সুলতানের মালিকানাধীন হোটেল বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন বহু তারকাসহ মার্কিন কর্মকর্তারা।

    ব্রুনেইয়ে বুধবার সমকামিতাসহ বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতার মতো অপরাধে পাথর ছুঁড়ে সাজার কঠোর আইন চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর হলিউডসহ অন্যান্য অনেক তারকা ও রাজনীতিবিদ বিলাসবহুল ঐসব হোটেল বয়কটের ডাক দিলেন।

    ব্রুনেই আর্থিক দিক দিয়ে অনেক সমৃদ্ধশালী। দেশটির সুলতান বিশ্বের কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষ হোটেলের মালিক। এসবের মাঝে সবচেয়ে অভিজাত ৯টি হোটেলের দু’টিতে হলিউডের হেভিওয়েটদের আনাগোনা আছে। সময়ে সময়ে সেখানে বিনোদোনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানও হয়। এগুলোর মাঝে বেভারলি হিলস, লস এঞ্জেলেসের হোটেল বেল-এয়ার, লন্ডনের ডর্চেস্টার ও প্যারিসের হোটেল প্লাজা এথিনিও রয়েছে।

    হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনি এক টুইটে লিখেছেন: যতোবারই আমরা ৯টি হোটেলের কোনোটাতে থাকি, বৈঠক করি কিংবা খাওয়া-দাওয়া করি – ততোবারই আমরা সরাসরি এমন একজন মানুষের পকেটে অর্থ ঢালি – যিনি তার দেশের নাগরিকদেরকে সমকামিতা কিংবা ব্যাভিচারের অভিযোগে পাথর ছুঁড়ে কিংবা বেত্রাঘাত করে মৃত্যু দেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। ঐ হোটেলগুলো বয়কট করলেও ব্রুনেই রাজ এতে লজ্জ্বা পাবেন বলে মনে হয় না। তবে তাদের সঙ্গে যারা ব্যবসা করে, বিনিয়োগ করে – তাদেরকে এর মাধ্যমে লজ্জ্বায় ফেলা যেতে পারে এবং অন্যদিকে তাকানোর রাস্তা বেছে নেয়া যেতে পারে।

    মার্কিন টেনিস তারকা বিলি জিন কিং বুধবারই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন: ব্রুনেইয়ে আজ নৃশংসতা শুরু হলো।

    গত সপ্তাহে বৃটিশ সঙ্গীতশিল্পী এলটন জন বলেছিলেন যে, তিনি অনেক বছর ধরেই লন্ডনের ডর্চেস্টার হোটেলে আর থাকেন না।

    প্রসঙ্গত, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ে বুধবার সুলতান হাসানাল বলকিয়া ইসলামী শরিয়া আইন চালুর ঘোষণা দেন। নতুন এ আইনে সমকামিতা ও ব্যভিচারের জন্যে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য সমকামিতা অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিলো ব্রুনেইয়ে। সমকামিতা নিষিদ্ধ করে এর শাস্তির বিধান করা হয়েছিলো ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। দেশটির সমকামিতার সমর্থকরা এটাকে ‘মধ্যযুগীয় শাস্তির বিধান’ হিসেবে অভিহিত করে উদ্বেগ জানিয়েছে। দেশটিতে ৮০% মুসলিম রয়েছে।

    ব্রুনেইয়ে নতুন শরিয়া দণ্ডবিধি মোতাবেক, অভিযুক্তরা নিজেদের সমকামী বলে স্বীকার করলে অথবা অন্তত চারজন প্রত্যক্ষদর্শী তাদের এ ধরনের কাজ করতে দেখলে, তবেই তাদের সমকামিতার দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে। তাছাড়া, চুরির দায়ে অঙ্গচ্ছেদের মতো দণ্ডও রাখা হয়েছে আইনটিতে।

    পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির এক সমকামী বলেছে: ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি অনুভব করলেন প্রতিবেশীরা, আপনার পরিবারের সদস্যরা, এমনকি রাস্তার পাশে বসে ভাজা চিংড়ি বিক্রি করা ঐ সুন্দরী বৃদ্ধা নারীটিও আপনাকে আর মানুষ বলে ভাবছে না আর তারা পাথর ছুঁড়ে মারার সঙ্গে একমত।

    আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনানুযায়ী, যে কোনো পরিস্থিতিতে পাথর ছোঁড়া, অঙ্গচ্ছেদ অথবা বেত্রাঘাত, আইনি সংস্থাগুলোর হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ সব ধরনের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    স্বাক্ষর করলেও ব্রুনেই দারুস সালাম এখনও নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক শাস্তির বিষয়ে ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেনি। ২০১৪ সালে জাতিসংঘে দেশটির মানবাধিকার-সংক্রান্ত পর্যালোচনায় ঐ ঘোষণাপত্রের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করে তারা।

    আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মূল ঘোষণাপত্রে যে কোনো ধরনের নির্যাতনসহ অন্যান্য নিষ্ঠুর শাস্তি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘোষণা প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্যে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও এর অধিকাংশ ধারাগুলোই অনুমোদন করেনি ব্রুনেই।

    এদিকে ব্রুনাইয়ের এ শরিয়া দণ্ডবিধির প্রথম অংশটি ২০১৩ সালে বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো।

    দণ্ডবিধির মুলতবি বিধানগুলোতে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধে শিশুসহ যে কাউকে ঢিল ছুঁড়ে হত্যা ও অঙ্গচ্ছেদের শাস্তি দেয়া যাবে।

    এ আইন নিয়ে ব্রুনেইয়ের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে সমালোচনা করেছে। তারা এখান থেকে ফিরে আসারও আহ্বান করেছে। সূত্র:বিবিসি ও এএফপি।