ব্যাংকে কোটি টাকা জমা থাকলেও পাবে মাত্র এক লাখ

    0
    223

    এমন বিধান রেখে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ এর প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।

    কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা অবসায়িত হলে সেই ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা তাদের জমানো পুরো টাকাটা ফেরত পাবেন না। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের নামে কোটি টাকা জমা থাকলেও তাকে মাত্র এক লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার বিধান রেখে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ এর প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ আইনের প্রস্তাবনায় ‘তহবিল এর দায়’ বিষয়ক ধারা-৭ এর (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর অবসায়নের আদেশ হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তার বীমাকৃত আমানতের সম পরিমাণ (যা সর্বাধিক এক লাখ টাকা অথবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি হবে না), তহবিল হতে প্রদান করবে।

    প্রস্তাবনার ৭ এর (২) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনও আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকলে ওই হিসাবে যদি একত্রে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকে তবুও তাকে সর্বাধিক এক লাখ টাকা কিংবা সরকারের পুর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি পরিশোধ করা হবে না।

    বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ‘ব্যাংক আমানত বীমা’ নামে একটি তহবিল আছে। এই তহবিলে প্রতি ছয় মাস পর ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের ওপর নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম জমা দিতে হয়। স্বাভাবিক ব্যাংকগুলোকে প্রতি ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮ পয়সা হারে প্রিমিয়াম জমা দিতে হচ্ছে। এছাড়া সতর্কতামূলক অবস্থায় (আরলি ওয়ার্নিংয়ে) থাকা ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯ পয়সা হারে এবং সমস্যাগ্রস্ত (প্রবলেম) ব্যাংকের ক্ষেত্রে ১০ পয়সা হারে প্রিমিয়াম জমার বিধান করা হয়েছে।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আমানত সুরক্ষায় আইন দিয়ে এই তহবিল পরিচালিত হয়। আগের আইনের মতো সংশোধিত আইনেও সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বীমার প্রিমিয়াম দ্বারা সুরক্ষিত করা হবে। কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে এ আইনের ক্ষমতাবলে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

    আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের পর তার আমানতকারীদের যে অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রাস্ট তহবিল পরিশোধ করবে, সেটি সংশ্লিষ্ট দেউলিয়া হওয়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে যে তারল্য থাকবে তা থেকে সমন্বয় করা হবে।

    তবে, অর্থনীতিবিদদের মতে, আমানত সুরক্ষার এই আইন বাস্তবায়ন হলে বন্ধ হওয়া ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ আমানত বেহাত হবে।

    এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অর্থনীতির ছাত্র সাইফুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, প্রস্তাবিত আইনে গ্রাহকদের ন্যূনতম সুরক্ষা মিলবে না। বরং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি গ্রাহকদের অনাস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারি ব্যংকের  মালিকদের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা মেরে লালবাতি জ্বালিয়ে সটকে পড়ার প্রবণতাকেই উসকে দেবে।

    তিনি আরো বলেন, সরকার যেভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছে তাতে দেশের আর্থিক খাতে বিশৃংখলা বৃদ্ধি পাবে এবং গোটা আর্থিক খাত মুখ থুবড়ে পড়বে।

    এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমানত সুরক্ষা পেতে হলে আমানতকারীকে নিজেই সচেতন থাকতে হবে। নিজের টাকা ঝুঁকিপুর্ণ ব্যাংকে না রেখে দেখেশুনে যে সব ব্যাংক ভালো সেই সব ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে। আর যেসব ব্যাংক দুর্বল, সুশাসন নেই, দুর্নীতির আখড়া, লুটপাট করে টাকা বের করে নেওয়া হয়, সেই সব ব্যাংক থেকে দূরে থাকতে হবে।

    সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের কোনও নিশ্চয়তা নেই। এর আগে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক এবং দ্য ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা আছে এমন অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ৬১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ পরিমাণ টাকা বর্তমানে বীমা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বাকি টাকা অরক্ষিত।

    প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যক্তি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। মোট ১০ কোটি ২৫ লাখ অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা আছে।পার্সটুডে