বৃদ্ধা মাকে বাঁশ বাগানে ফেলার অপরাধে আটক ৩ সন্তান

    0
    230

    নড়াইল প্রতিনিধিঃ রাতের বেলায় অসহায় বৃদ্ধামাকে ছেলেরা বাঁশ বাগানে ফেলে আসার কয়েক ঘন্টা পর গ্রামবাসী ও এমপির সহায়তায় ঘরে তুলতে বাধ্য হয়েছে। পরে বৃদ্ধার ভরন-পোষনের দায়িত্ব নিলেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও লোহাগড়া উপজেলা আলীগের সাধারন সম্পদক সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু বৃদ্ধার ভরণ-পোষনের দয়িত্ব নিয়েছেন।

    লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের কুচিয়াবাড়ি গ্রামের ৫ সন্তানের জননী মৃত ছামাদ শেখের স্ত্রী ফুজলী বেগম (৮৬)কে বৃহস্পপিতবার (২৬ আগষ্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে ভ্যানে করে নিয়ে পার্শ¦বর্তী বাশঁ বাগানের নিচে মাটির রাস্তার উপর ফেলে যায় ছেলেরা। পার্শ্বে লাঠির সাথেএকটি জ্বলন্ত হারিকেন ঝুলিয়ে রেখে যায়। ৫ সন্তানের জননী ৯০ বছরের বৃদ্ধা ফুজোলী বেগম। স্বামী সামাদ শেখ মৃত্যুবরণ করেছেন অন্তত ৩০ বছর আগে।

    ৫ সন্তানের মধ্যে ৩টি ছেলে ও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে । খবর পেয়ে পরদিন শুক্রবার গ্রামবাসী ও স্থানীয়এমপি বৃদ্ধাকে তার পুতার (ছেলের ছেলে) রেখে আসে। এ ঘটনায় লোহাগড়া থানা পুলিশ বৃদ্ধার বড় ছেলে ডাকু শেখ, ছোট ছেলে রাবু শেখ এবং বড় মেয়ে কুলসুম বেগমকে আটক করা হয়েছে।
    বৃদ্ধার বড় ছেলে ডাহু শেখ কৃষি কাজ করে। মেঝো ছেলে বাবু শেখ এড়েন্দা বাজারের বিশিষ্ট ধান-পাট ব্যবসায়ী এবং ছোট ছেলে রাবু শেখ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে কুলসুম বেগমের বিয়ে হয়েছে পাশ্ববর্তী উলু গ্রামে এবং ছোট মেয়ে পাচি বেগমের বিয়ে হয়েছে নিজের গ্রাম কুচিয়াবাড়ীতে। এই বৃদ্ধা মায়ের প্রতি দুই ছেলের কেউই কোন দায়িত্ব পালন করতেন না। এই বৃদ্ধা মায়ের শেষ সম্পল ৪ শতক জমি সম্প্রতি বড় মেয়ে ফুসলিয়ে লিখে নেন। এরপর থেকে বৃদ্ধা মায়ের কদর কমে যায়।
    একই গ্রামের কলিন্স মিঞা জানান, রাতের আঁধারে তার ছেলেরা বৃদ্ধাকে রাস্তার পাশে একটি প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শুয়ে রেখে যায়। তখন বৃদ্ধার শরীর থেকে দুর্ঘন্ধ বের হচ্ছিল। এমন দৃশ্য দেখলে চোখে পানি চলে আসে। বয়াসের ভারে বৃদ্ধা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। বৃদ্ধা এখান কোন কাজ করতে পারেনা বলে ছেলে মেয়েদের বোঝা হয়ে গেছে তিনি। তিন ছেলে আলাদা আলাদা সংসার থাকলেও কোন ছেলেই তার দায়িত্ব নিতে চায়না।
    কুচিবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার জানান, এ ঘটনা জানার পর নড়াইল-২ আসনের এমপি অ্যাডঃ হাফিজুর রহমান এসে বুছিয়ে বড় ছেলে ডাকু শেখের সন্তান শুকুর শেখের ঘরে বৃদ্ধাকে রেখে গেছে। শুনেছি উপজেলা চেয়ারম্যান এই বৃদ্ধার ভরণ পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন।
    উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু জানান, ঘটনাটি শোনার পর তিনি বৃদ্ধাকে দেখতে যান। এ সময় বৃদ্ধার জন্য তিনি ৫ হাজার টাকা নগদ দিয়ে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
    বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার ছেলে ও তাদের পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি। স্থানীয় লক্ষিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী বনি আমিন জানান, আমি বর্তমানে একটি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।
    লোহাগড়া থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টম্বর) রাতে বৃদ্ধার বড় ছেলে ডাকু শেখ, ছোট ছেলে রাবু শেখ ও বড় মেয়ে কুলসুম বেগমকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে ।