বৃটেন থেকে এসে কপাল পুড়লো আজাদের !

0
594
বৃটেন থেকে এসে কপাল পুড়লো আজাদের !
বৃটেন থেকে এসে কপাল পুড়লো আজাদের !

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসী অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হবিগঞ্জ জেলায় গত বছরের বিভিন্ন মাসে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন অনেক প্রবাসী। তিন-চার বা ছয়-সাত মাসের ছুটি শেষে আবার ফিরে যাবেন কর্মস্থলে, এমনটাই আশা ছিল তাদের। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের আর ফেরা হয়নি। বিশেষ করে মালয়েশিয়া। কবে উঠবে নিষেধাজ্ঞা, কবে তারা ফিরতে পারবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই অনিশ্চয়তায় হতাশা বাড়ছে ছুটিতে গিয়ে আটকে পড়া মালয়েশিয়া প্রবাসীদের। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও লাভ হয়নি প্রবাসীদের। এদেরই একজন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের শতক গ্রামের বাসিন্দা আজাদ মিয়া তালুকদার। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। সেদেশে তিনি বাংলাদেশের টাকায় মাসে ৫৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। প্রথমে মধ্যপাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান আজাদ। পরে ভালো চাকুরী পেয়ে মালয়েশিয়াতে চলে যান। এভাবেই প্রবাসে কেটেছে ৮ বছর। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতে কাটছিল তার জীবন। ১৮ মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন আজাদ। তখন সঞ্চয় করা টাকায় বাড়িতে নতুন ঘরের কাজ শুরু করেন। এমন সময় শুরু হয় করোনার প্রকোপ। পরে দুই মাসের ছুটিতে দেশে আসলেও করোনার কারণে আর ফেরা হয়নি।

একদিকে ঘরের কাজও বন্ধ হয়ে যায়, অন্যদিকে জমানো টাকাগুলোও একেএকে খরচ করে ফেলেন। এ অবস্থায় পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। কিছুদিন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চললেও এখন সেই ঋণের টাকাই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে স্ত্রীর সন্তান ডেলিভারির সময় হয়ে যায়। এর আগে গর্ভে থাকাকালীন জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় স্ত্রীর গর্ভের সন্তানটি মারা যায়। প্রবাসে ৫৭ হাজার টাকা মাসে আয় করা এই ব্যক্তি এখন নিঃস্ব। বেঁচে থাকার স্বার্থে বিভিন্ন জনের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। গ্রাম থেকে শহরে একটা কাজের খোঁজে ছুটে চলেছেন। কিন্তু এখনো কোনো কাজ কিংবা কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাননি। আজাদ বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে স্ত্রীর গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে পারিনি। খুবই অসহায় লাগে এসব ভেবে। এক সময় কতো ভালো চলতাম। প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতাম। জমানো টাকা দিয়েই ঘরের কাজ শুরু করেছিলাম। এখন ঘরের কাজও শেষ করতে পারিনি। অর্থের অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। পরিবারে আমার মা, স্ত্রী ও সন্তানসহ ৬ জন সদস্য। সবার দায়িত্ব আমার ওপরে। দুই মাসের ছুটিতে দেশে গত ১৮ মাস ধরে বাড়িতে বসা। অনেক চেষ্টা করেছি আবার মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য। করোনার কারণে একাধিকবার টিকিট বাতিল হয়েছে। অনেক টাকাও শেষ করেছি। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাইনি। ধারদেনা করে আর কতোদিন চলা যায়। পরে এক জায়গা থেকে আরও ১ লাখ টাকা লোন নিয়েছি। সেটা দিয়ে সংসার চালিয়েছি। এখন ঋণের টাকাই বা পরিশোধ করবো কীভাবে আর সংসার চালাবো কীভাবে এই টেনশনে ঘুমাতে পারি না। চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখছি।

প্রবাসী হিসেবে সরকার থেকেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। অনেকের কাছে গিয়েছি কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, একটা মহামারি আমার জীবনটা এভাবে দুর্বিষহ করে তুলবে কখনো ভাবিনি। এক সময় আমার কোনো অভাব ছিল না। এখন আমি নিঃস্ব। শুধু আজাদই নয়। তার মতো কয়েক শতাধিক মালয়েশিয়া প্রবাসী ফিরতে পারছেন না কর্মস্থলে। নবীগঞ্জের দিনারপুরের ৫ জন ও হবিগঞ্জ জেলার বেশ কয়েক জনসহ সিলেট বিভাগেই দেড় শতাধিকের উপরে মালয়েশিয়া প্রবাসী দেশে আটকা পড়েছেন। মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে ছুটিতে আসা প্রবাসীদের ফিরে যেতে সরকারি উদ্যোগ এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ, সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার দাবিতে তারা মানববন্ধনও করেছেন। এর আগে প্রায় ৫০০ জন মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মন্ত্রীকে দেওয়া হয়। দ্রুত আটকে পড়া প্রবাসীদের ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সচেতন মহল।