বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তিন সন্তান নিয়ে মা বেলুয়া বেগমের সংসার

    0
    309

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১জুন,এস কে দাশ সুমন: মৌলভীবাজার  জেলার   শ্রীমঙ্গল  উপজেলার  লালবাগ  গ্রামে  দরিদ্র   কৃষক  ছামসু  মিয়া  ও  বেলুয়া  বেগম  দম্পতির  ছোট্ট  সংসার  দরিদ্রের  কষাঘাতে  জরাজীর্ণ  নুন  আনতে  পান্তা ফুরায়, তাদের  বিবাহিত  জীবনে  যখন  প্রথম  সন্তানের  মুখ  দেখেন  তখন  আনন্দের  কমতি  ছিল  না, কিন্তু  কিছুদিন  যেতেই  যখন  সন্তানের  স্বাভাবিক  বেড়ে  উঠা  দুর্বল  মনে  হয়েছে  তখনই  মা  বাবার  কপালে  দুশ্চিন্তার  ভাজ, তারপর  কত  ডাক্তার  কবিরাজ  ওঝা  বৈদ্য  কিছুতেই  ভাগ্য  সুপ্রসন্ন  হলো  না, একে  একে  কৃষক  ছামছু  মিয়া  ও  বেলুয়া  দম্পতির  সাত  সন্তানের  জন্ম,  দুই  মেয়ে  ও  এক  ছেলের  শিশুকাল  পেড়িয়েছে  অনেক  আগেই  কৈশর  আর  যৌবন  এখন  মাটির  বিছানায়  শুয়ে  বসে  বন্ধি,  এখনো  তারা  মুখে  খাবার  খেতে  পারে  না, চলাচল  করতে  পারে  না,  কোন  কিছু  বলতে  পারেনা, শুধু  ইশারায়  বুঝিয়ে  দেয়  মাকে, বুক  ভরা  কষ্ট  নিয়ে  সৃষ্টিকর্তার  শ্রেষ্ঠ  সৃষ্টি  মা  সহজেই  বুঝে  উঠতে  পারেন  সন্তানদের  চাহিদা  খাবার  খাবে  না  প্রকৃতির  ডাকে  সাড়া  দিবে।

    সন্তানরা  যে  শুনতেও  পারে  না  ভালো  করে, কারণ  তিন  জনই  শারীরিক  ও  বুদ্ধি  প্রতিবন্ধী । এই  দম্পতির  প্রথম  সন্তান  রিপনা  আক্তার  ১২  বছর  আগে  চিকিৎসার  অভাবে  ৯  বছর  বয়সে  পৃথিবী  ছেড়ে  চলে  যায়, তিন  প্রতিবন্ধি  সন্তানদের  নিয়ে  জীবন  যুদ্ধ  চালিয়ে  যাচ্ছেন  বেলুয়া  দম্পতি।

    সরকারি  সাহায্যের  প্রতিবন্ধী  ভাতা  হিসেবে  ত্রৈমাসিক  সামান্য  ভাতা  আর  পরের  জমি  বর্গা  দিয়ে  চলছে  দিনযাপন, ভাগ্যে  জুটছে  না  সন্তানদের  চিকিৎসা  সেবা, এ  কারনে  এই  হতদরিদ্র  পরিবারটি  এখন  মানবেতর  জীবন  যাপন  করছে ।
    বেলুয়া  দম্পতির  ছেলে  রাজেত  মিয়া  (২৩),  মেয়ে  রাফেনা  আক্তার  (২৫)  ও  রাজেলা  আক্তার  (১৫)  জন্মের  আড়াই  তিন  বছর  থেকেই  শারীরিক  ও  বুদ্ধি  প্রতিবন্ধী। তাঁদের সুচিকিৎসার  জন্য  এলাকার  বিভিন্ন  চিকিৎসক  ও  হাসপাতালে  নেওয়া  হয়েছে , অবস্থার  কোনো  উন্নতি  হয়  নি, তাদের খাওয়া, গোসল  সহ  সব  কাজেই  সাহায্যর  প্রয়োজন  হয়, তরুন  পেরিয়ে  বার্ধক্যের  কাতারে  ছামসু   মিয়া  এখন   প্রায়ই  অসুস্থ  থাকেন । স্বাভাবিক  সব  কর্মঠ  কাজ  করতে  যেতে  পারেন  না, এ  কারণে  কয়েক  বছর  ধরে  সংসারে  অভাব – অনটন  নিত্য  দিনের  সঙ্গি ।
    সম্প্রতি  লালবাগ  গ্রামে  গিয়ে  দেখা  যায়  ছামসু  মিয়া  ও  তাঁর  স্ত্রী  বেলুয়া  বেগম  সন্তানদের  অন্ধকার  চিলেকোঠা  থেকে  রোদের  আলোতে  নিয়ে  আসতে ব্যস্ত । কেমন  কাটছে  তাদের  দিনকাল  জিজ্ঞেস  করলে  বেলুয়া  বেগম  অশ্রুসিক্ত  হয়ে  পড়েন বেলুয়া  বেগম  বলেন, ‘বা” চাইনতে  ছোট  বেলাত  ভালা  আছিল, আড়াই  তিন  বছর  হইলেই  রোগ  শুরু  হই  যায় । রোগে  আমার  এক  বড়  পুরি  মারা  গেছইন, বাকি  তাইন  যারা  বাইচা  আছইন  তারা  বিছনাত  ওউ  দিন  পার  কররা ।
    প্রতিবন্দি  ভাতা  বাবদ  যা  পাইরাম  তা  দিয়া  খাওয়াই  হয়না, আমরা  গরীব  মানুষ  টাকা  কই  পাইমু  চিকিৎসা  করমু  কেমনে । স্থানীয়  ইউপি  সদস্য  আলম  উদ্দিন  বলেন, সামসু  মিয়া  তার  প্রতিবন্ধি  সন্তানদের  নিয়া  অনেক  কষ্ট  করে  জীবন  চালাচ্ছেন। আমরা  সরকারী  প্রতিবন্ধি  ভাতার  ব্যবস্থা  করে  দিয়েছি , তবে  তা  দিয়ে  তো  আর  পুরো  পরিবার  চলে না। এখন  যদি  সমাজের  বৃত্তবানেরা  তাদের  জন্য  এগিয়ে  আসেন  তাহলে  এই  পরিবারের  দুচিন্তা  কিছুটা  লাঘব  হবে।
    শ্রীমঙ্গল  উপজেলা  স্বাস্থ্য  ও  পরিবার  পরিকল্পনা  কর্মকর্তা  জয়নাল  আবেদীন  টিটো  বলেন, আমি  নিজে  তাদের  বাড়ি  গিয়েছি, সবাইকে  দেখেছি,  কথা  বলেছি, এটা  একটা  বিরল  জন্মগত  রোগ, যা  গর্ভাবস্থায়  জিনগত  ত্রুটির  জন্য  হয় ।  এ  রোগ  ভাল  হবার  নয়, আবার  এ  রোগে  আক্রান্ত  রোগী  এই  রোগের  কারণে  মারা  যায়  না, তাদের  এক  বোন গেস্ট্রোএন্টেরাইটিসে  আক্রান্ত  হয়ে  মারা  গেছে । এই রোগীরা  নিজের  কাজ  নিজে  করতে  পারে  না  বলে  সব  সময়ই  অপরি”ছন্ন  থাকে  এ  কারণে  বারবার  ইনফেকশন  হয় ।  এজন্য  তাদের  সব  সময়  পরিষ্কার  পরিছন্ন  রাখা  জরুরী  তারা  যেন  ডায়রিয়া,  নিউমোনিয়া  বা  মুখের  ইনফেকশনে  আক্রান্ত  না – হয়
    তিনি  আরো  বলেন,  নিকটাত্মীয়দের  মধ্যে  বিয়ে  হলে  তাদের  সন্তানদের  এ  রোগ  হতে  পারে ।  নিকটাত্মীয়দের  মধ্যে  বিয়ে  না  করাই  এ  রোগ  প্রতিরোধের  উপায় ।