বি. চৌধুরীকে ছাড়াই জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন

    0
    417

    ঢাকা: অবশেষে বিভক্তই হয়ে গেল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় ঐক্যের ডাক। গঠিত হবে “জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্য।”

    বি. চৌধুরীকে ছাড়াই জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন
    বি. চৌধুরীকে ছাড়াই জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন

    বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন দেয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দূরত্ব হ্রাস না করেই হেফাজতেকে সমর্থন দেয়ায় এবার বি. চৌধুরীকে ছাড়াই জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ ডেকেছেন ড. কামাল হোসেন।

    আগামী ২০ এপ্রিল বিকেল তিনটায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সমাবেশেই আত্মপ্রকাশ করবে ‘জাতীয় স্বার্থে, জাতীয় ঐক্য’। ইতিমধ্যে সমাবেশের পোস্টার ছাপানো ও হল রুম ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে গণফোরামের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

    জাতীয় ঐক্যের অন্যান্য পোস্টারে ড. কামালের সঙ্গে এবারের পোস্টারে জায়গা করে নিয়েছেন ড. আকবর আলি খান, মাহমুদুর রহমান মান্না ও নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।      

    পোস্টারে লেখা হয়েছে, “জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে সমাবেশ।”

    ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড.কামাল হোসেন গত বছর ২১ অক্টোবর দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও গুমের বিরুদ্ধে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, কূটনীতিক, প্রবীণ সাংবাদিক ও দুই জোটের বাইরের দলের নেতাদের নিয়ে বনানীর এক অভিজাত হোটেলে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে এই দুই নেতা দেশের স্বার্থে দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে তৃতীয় গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।   

    জাতীয় ঐক্যের সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।  

    ঐক্যের ঘোষণা দেয়ার পর বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও গণফোরামের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে সারাদেশের সাতটি বিভাগে সমাবেশও করেন। এসব সমাবেশে নেতারা গত মার্চ মাসে ঢাকায় কনভেনশন করে নির্বাচনী তৃতীয় জোটের আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন।

    সূত্র জানায়, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি বি. চৌধুরীর অব্যাহত সমর্থন ড. কামাল হোসেন ও তার দলের কর্মীরা ভালোভাবে নেননি। অনেকে বি. চৌধুরীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার গোপন সমঝোতার অভিযোগও করেন। এ নিয়ে দুই দলের নেতাদের মধ্যে কয়েকদফা আলোচনাও হয়েছিল। তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি।  

    জানা গেছে, ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন শুরুর পর থেকেই ড. কামাল হোসেন এ আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন। আর এতেই এলোমেলো হয়ে যায় দুই দলের নেতাদের জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচী। দূরে সরে যান ডা. বি. চৌধুরী। ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না নিজেদের মতো করে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর করে নিতে থাকেন জাতীয় ঐক্যের সমাবেশের প্রস্তুতি। এরপরেই হেফাজত ইস্যু সামনে এলে বি. চৌধুরী সরাসরি হেফাজতকে সমর্থন দেন। এরপরই চূড়ান্তভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে জাতীয় ঐক্যের দুই দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও গণফোরাম নেতারা।

    এরপর দুই দলের নেতাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক  এবং কথাবার্তাও হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

    এমনকি জাতীয় ঐক্য নিয়ে দুই বড় জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেননি নেতারা।

    জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “আমার সঙ্গে ২০ তারিখের সমাবেশ নিয়ে কারো সঙ্গেই কোনো আলোচনা হয়নি। হলে পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্বান্ত নেব।”

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটা করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়ার পর গণজাগরণ মঞ্চকে সমর্থন দেন ড. কামাল হোসেন। জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচি প্রণয়নও করেন।

    হঠাৎ করে ২ এপ্রিল বি. চৌধুরী হেফাজতকে সমর্থন দেন। এ নিয়ে প্রকাশ্যেই ড.কামাল হোসেনের সঙ্গে মনস্বত্বাত্তিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন বি. চৌধুরী।
    এ বিষয়ে বি. চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমীন ব্যাপারী বলেন,“ আমাদের মানসিকতার সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের দলের নেতা-কর্মী ও আদর্শের মিল হচ্ছে না।
    ২০ এপ্রিলের সমাবেশের ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “২০ এপ্রিল জাতীয় ঐক্যের সমাবেশের খবর আপনার কাছ থেকে শুনলাম। আমরা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করছি।
    গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মুহসীন মন্টু বলেন, “২০ তারিখের সমাবেশ আমরা জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে করছি না। ওই সমাবেশে আমরা দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বি.চৌধুরীর প্রেস সচিবের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাকে পাই নি।”