বিস্ফোরণের কারণ বের করা হবেঃপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    0
    269

    মসজিদের ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নিঃফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি

    প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে কারা ছিল ? আমরা তো শুধু সরকার গঠন করেছি। এটা কোনোদিনই যুক্তিযুক্ত না, যে আমরা সরকার গঠন করেই এমন একটা ঘটনা ঘটাব, দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করব। কাজেই যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই এটা করেছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা বলার ভালো একটা আর্ট আছে। তিনি বলেন, গ্যাস লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও অন্য সব বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

    অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহারা খাতুন। তার সাহসী ভ‚মিকা দেখেছি বিডিআর বিদ্রোহের সময়। আমরা সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মধ্যে বিডিআরের এ ঘটনা ঘটল। বিডিআরের ওই ঘটনায় যে সেনা অফিসাররা মারা যায় তাদের মধ্যে ৩৩ জন আওয়ামী লীগ পরিবারের। এমনকি বিডিআর ডিজি এ পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য লুৎফর হাই সাচ্চুর আপন চাচাতো ভাই ছিলেন। দেখা গেছে, আমাদের আওয়ামী পরিবারের এমনকি আব্দুল মালেক উকিল সাহেবের নাতি অনেকেই সেখানে মৃত্যুবরণ করে। সেসময় ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আমাদের চেষ্টা ছিল এটাকে থামানো। আমাদের যারা অফিসার আছে তাদের রক্ষা করা তাদের পরিবারগুলো রক্ষা করা। আমরা যখন সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ করলাম সেনাবাহিনী নামার সাথে সাথে তাদের গুলিতে কয়েকজন সেনা সদস্য মারা গেল।

    তিনি বলেন, বিডিআরের ঘটনাটি ছিল একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আগের দিন গেলাম একটি ভালো পরিবেশ, পরের দিন সেখানে এধরনের একটি ঘটনা ঘটল। এর পেছনে কারা আছে ? আমরা তো শুধু সরকার গঠন করেছি। এটা কোনো দিনই যুক্তিযুক্ত না যে আমরা সরকার গঠন করেই এমন একটা ঘটনা ঘটাব, দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। কাজেই যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই তখন তাদের পেছনে ছিল এবং তাদের সঙ্গে ওই ১/১১ যারা সৃষ্টি করেছিল তাদের ধারণা ছিল নির্বাচনটা একটা আনপার্লামেন্ট হবে; কিন্তু যখন দেখল আওয়ামী লীগ মেজরিটি নিয়ে চলে আসল তখন সবকিছু নস্যাৎ করার অপচেষ্টা যাদের ভেতর ছিল তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একদিন না একদিন এর সত্যতা বের হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইতোমধ্যে সেখানে বিস্ফোরক তদন্ত দল গেছে, তদন্ত হচ্ছে। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত হবে। মৃতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

    সংসদ নেতা বলেন, মসজিদটি- না কি গ্যাসের লাইনের ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে। সাধারণত গ্যাস লাইনের ওপরে কোনো স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় না। গ্যাস লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। সামর্থবানরা অনেক সময় মসজিদে এসি দান করে থাকেন। এই এসির ধারণ ক্যাপাসিটি ছিল কি না তা দেখা হবে। এছাড়া মসজিদ নির্মাণে ভালোভাবে নকশা করা হয়েছিল কি না প্রত্যেক বিষয় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজকাল সবার পয়সাও আছে। এয়ারকন্ডিশনও দিয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহটা, কতটা লোড নিতে পারবে সেই ক্যাপাসিটি ছিল কি না, সার্কিট ব্রেকার ছিল কি না সব বিষয় কিন্তু দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলেছি। অন্য সবার কাছে আমার নির্দেশ গেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। এর কারণটা খুঁজে বের করা। এছাড়া সারাদেশের অন্যান্য মসজিদে যারা অপরিকল্পিতভাবে ইচ্ছামতো এয়ারকন্ডিশন লাগাচ্ছেন বা যেখানে-সেখানে একটি মসজিদ গড়ে তুলছেন, সেটা একটা স্থাপনা করার আদৌ জায়গা কি না যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না, নকশা করা হয়েছে কি না, সেই বিষয়গুলো দেখা একান্ত প্রয়োজন। না হলে এ ধরনের ঘটনা-দুর্ঘটনা যেকোনও সময়ে ঘটতে পারে।

    ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জীর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জী। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় এমনকি ৭৫এও তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। তখন আপনজন হিসেবে পেয়েছিলাম প্রণব মুখার্জী ও তার পরিবারকে। ২০০৭ সালে যখন আমি বন্দি তখনও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতু নিয়ে আমার ওপর দোষারোপ করল, তখনও তিনি সেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেছেন। সবসময় তিনি বাংলাদেশের পাশে এবং মানুষের কল্যাণে চিন্তা করতেন। আমাদের এই উপমহাদেশে এমন জ্ঞানী রাজনীতিবিদ পাওয়া খুব মুশকিল। সাথে সাথে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জীকে হারিয়েছি।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা বলার ভালো একটা আর্ট আছে। যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তাদের দলের লোক বললো আমি নিজেই নাকি গ্রেনেড নিয়ে নিজেই গ্রেনেড মেরেছি এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে ফেলল। ঠিক বিডিআরের ঘটনা যখন ঘটল, তখন তারা ওইভাবেই অপপ্রচার শুরু করল। কিন্তু এটা কোনো দিনই কেউ এর যুক্তি খুঁজে পাবে না। সাহারা আপাকে দেখেছি সাহসে ভর করে সেখানে গেছে। বিডিআরদের অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেছে, রাতের বেলায় অনেক সাহস করে সেখানে গিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলেন এবং তারা করেন। সেদিন অনেক আর্মি পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। উদ্ধার করে আনতে গিয়ে জীবনের ওপর হুমকি বয়ে এসেছে। আমি তখন যমুনায় থাকি তখন বলল নেত্রী কোনো মতো জীবনটা নিয়ে বেঁচে এসেছি। তার ওপরেও হামলা করতে গিয়েছিল ওরা। এই অবস্থায় দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন সাহারা আপা।

    তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সততার সাথে তিনি কাজ করেছিলেন, যার জন্য বিএনপির আমলে বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি এক সাথে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এরকম যেখানে অরাজকতা। তারপর আসল ১/১১ সে সময় আর একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এই অবস্থার মধ্যে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নিয়ে আসেন। মানুষের জীবন যাত্রাটাকে স্বাভাবিক করা এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো কঠিন সময়ে দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সাহারা। তিনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, তার কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি সব কিছু নেতা-কর্মীদের বিলিয়ে দিয়েছেন। সারাক্ষণ দেশের জন্যই কাজ করেছেন।

    আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরাফিল আলম এতো অল্প বয়সে চলে যাবে বুঝতেই পারিনি। তার করোনা হয়েছিল আবার তা ভালো হয়েছিল কিন্তু আসলে তার কিডনির সমস্যা ছিল। সে কিছু মানেনি। যখন সে একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি গেল, তারপর চলে গেল এলাকায়, আবার অসুস্থ হলেন আর ফিরে এলো না। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী হারিয়েছি করোনায়। কারণ তারা রিলিফ দিতে গিয়েছে, বন্যার সময় ত্রাণ দিতে গিয়েছে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতের একজন ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হারালাম।

    প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ছয়টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি। লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে বের হওয়া আগুনেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পরিচালক নূর হাসান আহমেদ। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিআইডির তদন্ত কমিটির সদস্য পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জলও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ৬টি এসির একটিও বিস্ফোরিত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়।

    অন্যদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ অবস্থায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মারা যান শামীম হাসান। গতকাল সকালে জুলহাস এবং আলী মাস্টার নামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেক (৬০) ও মুয়াজ্জিনসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়। সবমিলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫ জনে। বার্ন ইনস্টিটিউটে বাকি ১৩ জন, যারা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তাদের সবার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালি, মুখমন্ডলসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তারা কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। ৩ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।