বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ৮ জনের ফাঁসি ১৩ জনের যাবজ্জীবন

    0
    232

    আমারসিলেট24ডটকম,১৮ডিসেম্বরঃ  এ সরকারের আমলে চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন দেশের  আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক আজ দুপুর ১২টার পর এই রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে কারাগাড়ে থাকা ৮ জনের ফাঁসি এবং পলাতক ১৩ জনের যাবজ্জীবন কাড়াদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। গত বছর ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামের ক্যাডারদের হাতে বিশ্বজিৎ নির্মমভাবে নিহত হন। সেই নিষ্ঠুরতার দৃশ্য দেখে জনগণ বিচলিত হয়ে ওঠে। ফলে সরকারও ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেয়।

    এ কারণে নির্মম এই ঘটনার বিচারের দিকে সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি। কারাগারে থাকা আসামিরা হলো- রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন, এ এইচ এম কিবরিয়া, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু ও গোলাম মোস্তফা। পলাতকরা হলো- রাজন তালুকদার, খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, আজিজুর রহমান আজিজ, মীর মো. নূরে আলম লিমন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, আলাউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, ইমরান হোসেন ইমরান, আল-আমিন শেখ, কামরুল হাসান, মনিরুল হক পাভেল ও মোশারফ হোসেন।

    মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছর অভিযোগপত্র দেওয়ার পর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। পরে ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এদের মধ্যে ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাইরে থেকে তারা নিহতের স্বজনদের বিভিন্ন সময়ে হুমকিও দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিরীহ দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে সংঘবদ্ধভাবে কোপানোর সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ফুটেজ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীত প্রমাণিত হয়েছে। এর ভিত্তিতেই গত ৪ ডিসেম্বর মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করে।

    মামলার পর আটজনকে পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে শাকিল, নাহিদ, ইমদাদ ও শাওন স্বীকার করে বিশ্বজিতকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়। একই সঙ্গে তারা এ ঘটনায় আর কারা জড়িত ছিল, তাঁদের ভূমিকা কী ছিল তাও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বর্ণনা করে।বিশ্বজিতকে হত্যার চিত্র কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ধারণ করে। বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদকর্মীরাও এই হত্যাকাণ্ডের চিত্র ধারণ করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভিডিও ও স্থির চিত্রের ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে আলামত হিসেবে জব্দ করেন যা আদালতে দাখিল করা হয়। আদালতও এসব চিত্র পর্যবেক্ষণ করেন বলে জানা গেছে। এতে গ্রেপ্তার আসামিদের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। কার গায়ে কোন পোশাক ছিল, পায়ে কী ছিল, কে কিভাবে বিশ্বজিৎকে মারধর করে তার সব প্রমাণ এসব চিত্রে স্পস্টভাবে মিলেছে।

    গ্রেপ্তার করা আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পরও আসামিদের খালাসের জন্য জোর তদ্বির চলছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বিশেষ করে আসামি কাইয়ুম মিয়া ওরফে টিপু ও এ এইচ এম কিবরিয়াকে খালাস দিতে বিভিন্ন দিক থেকে আসামি পক্ষ জোর তদ্বির করছে বলে আদালত এলাকায় শোনা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদালত সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, অন্য একটি আদালতের একজন বিশেষ পিপি বিভিন্ন স্থানে দুই আসামিকে খালাস দিতে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের নজরেও এসেছে। গতকাল সংশ্লিষ্ট বিচারককে আইন মন্ত্রণালয়ে দেখা গেছে বলেও আরেকটি সূত্র জানায়।

    উল্লেখ্য, এই দুই আসামি হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে ছিল বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। আবার এদের নাম অন্য আসামিরাও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে বলেও  জানা গেছে।