বিশ্বকাপ উপলক্ষে দোহা থেকে শ্রমিক সরিয়ে নিচ্ছে কাতারঃতিলকে তাল করে সংবাদ প্রচার

0
276

আমার সিলেট ডেস্কঃ আর কিছু দিন পরেই (নভেম্বরে) ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের এবারের আসর বসছে কাতারের রাজধানী দোহায়। তাই, এটিকে দোহা বিশ্বকাপও বলা যায়। প্রস্তুত সেখানকার ৮টি স্টেডিয়াম- যেগুলো ৩৪ মাইল (প্রায় ৫৫ কিঃমিঃ) জড়ে রয়েছে। আসর চলাকালে এখানে প্রায় ২০ লাখ লোকের সমাগম হতে পারে। কিন্তু এদের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আর তাই, রাজধানীর বাইরে শ্রমিক সরিয়ে নিতে শুরু করেছে দেশটির সরকার। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন: এক শহরে হলেও বিশ্বকাপ সফল হবে। বিশ্ব দেখবে – কাতারের বিশ্বকাপ। রাজধানী থেকে ঐ জনসমাগম কমাতে শ্রম আইনে পরিবর্তন এনেছে কাতার সরকার। দোহা থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার শ্রমিকদের অন্যান্য শহরে সরে যেতে বাধ্য করছে।
কিন্তু কাতারে বিশ্বকাপ হওয়ায় হিংসুটে মহল এ ব্যাপারটাকে তিলকে তাল করে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে তাদের পত্রিকাগুলোতে সংবাদ করছে; যেমন- রয়টার্সের সংবাদের ভিত্তিতে –
ইত্তেফাকে লিখেছে – যেই শ্রমিকরা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করেছে স্টেডিয়াম, হোটেল, রাস্তা-ঘাট সহ বিভিন্ন অবকাঠামো তাদেরই ঠায় হচ্ছে না কাতারের রাজধানী দোহাতে।
সময় টিভি নিউজ শিরোনাম করেছে – ‘কাতারে হাজার হাজার শ্রমিককে ভবন থেকে উচ্ছেদ’ আর লিখেছে – ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে হাজার হাজার বিদেশি কর্মীদের বাসস্থান থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। … বাসস্থান থেকে বের করে দেয়া বিদেশি শ্রমিকদের বরাতে রয়টার্স জানাচ্ছে, দোহায় ডজনেরও বেশি ভবন কর্তৃপক্ষ খালি করেছে এবং বন্ধ করে দিয়েছে। যে সব শ্রমিকের ভবন খালি করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এশিয়ান এবং আফ্রিকান। বাসভবন হারিয়ে ওই শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে এখন ফুটপাতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
সমকাল শিরোনাম করেছে – ”বিশ্বকাপের জন্য এশিয়া-আফ্রিকার ‘শ্রমিক হটাচ্ছে’ কাতার” আর লিখেছে – ‘ছাই ফেলতে ভাঙা কুলা।’ কাজ মিটে গেলে ওই ভাঙা কুলা আবার ছুড়ে ফেলা হয়। বিশ্বকাপের আগে কাতার যেমন রাজধানী দোহা থেকে শ্রমিক হটাতে শুরু করেছে। অথচ এই শ্রমিকরাই কাতারে বসতে যাওয়া ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চ প্রস্তুত করেছেন। প্রস্তুত করেছে স্টেডিয়াম, হোটেল, রাস্তা-ঘাট।
বাংলা নিউজ টোয়েন্টি ফোর শিরোনাম করেছে – ’বিশ্বকাপের আগে কাতারে উচ্ছেদের শিকার হাজারো প্রবাসী শ্রমিক‘।
রাইজিং বিডি ডন কম শিরোনাম করেছে – ‘হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিককে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে কাতারি কর্তৃপক্ষ’।
রয়টার্সও কিছু শ্রমিকের অভিযোগভিত্তিক সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্যাপারটিকে উসকে দিয়ে পরে আসল কথা বলেছে! আসল কথা হলো – বিশ্বকাপ দেখতে আসা দর্শকরা যেনো আবাসন সমস্যায় না ভোগেন – সেজন্যে অভিবাসী শ্রমিকরা যেসব ভবন ও বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, সেগুলো আইনানুগভাবেই খালি করা হচ্ছে।
কাতার সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে – বিশ্বকাপের সাথে ভবনগুলো খালি করার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি দোহার এলাকাগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ। যথাযথ নোটিশ দিয়েই ভবনগুলো খালি করা হয়েছে। আর তাদের জন্যে নিরাপদ ও উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করেই দোহা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া, ২০১০ সালে পাস হওয়া একটি আইন বাস্তবায়ন করছে দোহা মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ। এ আইনে শ্রমিকদের সপরিবার আবাসিক এলাকাগুলোতে বসবাসে বাধা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে; এমনকি অনাবাসী মানুষজনকে আবাসস্থল থেকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে।
সরিয়ে নেয়া শ্রমিকদের অধিকাংশই ড্রাইভার বা দিনমজুর – যাদের সাথে কোম্পানিগুলোর চুক্তি আছে ঠিকই; কিন্তু থাকার ব্যবস্থা নিজের। তবে নির্মাণ সংস্থাগুলোতে যারা কাজ করেন, তারা কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ক্যাম্পে বসবাস করেন। এক শ্রমিক জানিয়েছেন, মূলত ব্যাচেলর শ্রমিকদেরকেই সরানো হয়েছে। কিন্তু যারা সপরিবারে বসবাস করেন, তাদেরকে সরানো হয়নি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ঐ ভবনগুলোর প্রায় সবগুলোই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভাড়া নিয়েছে কাতারি সরকার। আয়োজকদের ওয়েবসাইটে আল মানসুরা ও অন্যান্য জেলায় অবস্থিত অনেক ভবনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব ভবনের একেকটি ফ্ল্যাটে ভাড়া প্রতি রাত ২৪০ থেকে ৪২৬ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স ও অন্যান্য।