বিভিন্ন জেলা থেকে অনলাইন জুয়ার ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

0
530
বিভিন্ন জেলা থেকে অনলাইন জুয়ার ৯ সদস্য গ্রেপ্তার

আমার সিলেট ডেস্কঃ চুয়াডাঙ্গা,মেহেরপুর এবং কক্সবাজার থেকে অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়া সিন্ডিকেটের নয় সদস্যকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এই চক্রটি ‘ওয়ান এক্স বেট বিডি ডটকম’(1xbetonlineBD) নামে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করত। রোববার ১৪ নভেম্বর রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্তি ডিআইজি কামরুল আহসান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী চক্রের নয়জন সদস্যকে আটক করা হয়। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের নিয়মিত মনিটরিংয়ের সময়ে অনলাইন প্লাটফর্ম ওয়ান এক্সবেট বিডি ডটকম নামের বেটিং সাইট নজরে আসে। সেখানে অনলাইনে জুয়া খেলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিআইডির সাইবার পুলিশের বিভিন্ন দল শনিবার মেহেরপুরে অভিযান চালিয়ে মো. স্বপন মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, মো. আসলাম উদ্দিন. মো. মুরশিদ আলম লিপুকে আটক করা হয়। আর চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে শিশির মোল্লা, কক্সবাজার থেকে মো. মাহফুজুর রহমান নবাব এবং নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি, মো. সাদিক এবং মো. মাসুম রানাকে আটক করা হয়।

আটক আসামিদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোন, তিনটি এজেন্ট সিম যাতে যথাক্রমে তিন লাখ ৬৪ হাজার ২৯ টাকা, আট লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৭ টাকা এবং ৫৪ হাজার ৮৩৬ টাকা রয়েছে, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিমো প্রাইভেটকার (দাম ৩৩ লাখ টাকা) এবং নগদ চার লাখ ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। কামরুল আহসান বলেন, বেটিং সাইটটি মূলত রাশিয়া থেকে পরিচালতি হয়। চলামান টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিগবস ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ইত্যাদি জুয়া খেলার জন্য একজন জুয়াড়ি প্রথমে মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে এই সাইটে অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন। ওই সময়ে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি করে ব্যালেন্স যোগ করা হয়। ব্যালেন্স যোগ করার জন্য অনেক মাধ্যম থাকলেও তার মধ্যে নগদ অন্যতম।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, একটি নগদ এজেন্ট সিমসহ মো. স্বপন মাহমুদ এবং আরেকটি নগদ এজেন্ট সিমসহ মোরশেদ আলম লিপুকে আটক করা হয়। আটক স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ওই সিমটি আসলাম উদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। সিম দেওয়া বাবদ তিনি আসলামকে প্রতিমাসে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতেন। আর এজেন্ট সিমে আসা টাকার লেনদেন এবং ব্যবসা করার কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেন নগদের এস.আর এবং ডিপোর ম্যানেজার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আটক মুরশিদ আলম লিপুকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি তার বোন জামাইয়ের একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে সেখানকার নগদের এস.আর এবং ডিপোর ম্যানেজারের সহায়তায় এজেন্ট সিমটি সংগ্রহ করে এই জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে মেহেরপুর জেলার নগদের কয়েকজন কয়েকজন এসআর এবং সেখানকার ডিপোর তাদের এই কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

কামরুল আহসান বলেন, আরেকটি এজেন্ট সিমসহ মাহাবুবুর রহমান নবাবকে কক্সবাজার থেকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে সেখান থেকে এই জুয়ার কাজে সহযোগী সাদিক ও মাসুম রানা এবং নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলিকে আটক করা হয়। আটক মাহফুজুর রহমান নবাবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি নিজের একটি জুয়ার অ্যাজেন্ট সিম চালান। তার এলাকায় তিনি প্রথম এই কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তার রেফারেন্সে আরও বহু জুয়ার এজেন্ট যুক্ত হয়। তার সহায়তাকারী এজেন্ট নম্বরে যে টাকা আসতো তা জুয়ার ওয়েবসাইটে ডিপোজিট এবং উইথড্র করার কাজটি করতেন আটক সাদিক।

সিআইডি বলছে, আটক মাসুম রানা তার নামের নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম আইডি খুলে জুয়ার লোকজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং বিনিময়ে তিনি এজেন্টদের কাছ থেকে কমিশন পেতেন। জুয়ার কাজে জড়িত থাকায় নবাব বাসা থেকে বের হতে পারতেন না বা কোথাও যেতে পারতেন না। তাই নবাবের স্ত্রী মনিরা আক্তার মিলি টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়াসহ বাইরের সব কাজ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আটক সবাই জানিয়েছেন লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি এজেন্ট সিমই সেখানকার নগদের এস.আরের মাধ্যমে ট্রানজেকশন করেন। সিআইডি কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, ‘জুয়ার সঙ্গে জড়িত এস.আর কর্মকর্তারা এই জুয়ার এজেন্টদের সঙ্গে সরাসরি অবৈধ লেনদেনে জড়িত এবং এর বিনিময়ে জুয়ার এজেন্টদের কাছ থেকে প্রতিটি লেনদেনের কমিশন পেতেন। অনেক সময়ে জুয়ার এজেন্ট এবং এস.আরের মধ্যে বিটুবির মাধ্যমে লেনদেন হলেও তাদের মধ্যে শারীরিক কোনো লেনদেন হতো না। আটক মোরশেদ আলম লিপু গত ৭ নভেম্বর তার ব্যবহৃত সিম এজেন্ট থেকে সেখানকার এস.আরের নম্বরে বিটুবির মাধ্যমে নয় লাখ ৪৯ হাজার টাকা এস.আরকে পাঠায়, যা নগদায়ন হয়নি।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, জুয়ার এজেন্টরা ওয়ানএক্স বেটবিডি ডটকম নামের বেটিং সাইট সব কাজ ম্যানেজমেন্ট ডটআইটু নামের ওয়েবসাইট, টেলিগ্রাম ও রেডি নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে করে । আটক স্বপনের ব্যবহৃত জব্দকৃত এজেন্ট সিমে প্রতিদিন সাত থেকে আট লাখ টাকা এবং লিপুর ব্যবহৃত এজেন্ট সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হতো, নবাবের ব্যবহৃত জব্দকৃত এজেন্ট সিম থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার লেনদেন হতো।