বিপিএল সম্প্রচারের মান নিয়ে দর্শকদের ক্ষোভ

    0
    292

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮নভেম্বর,হৃদয় দাশ শুভ,স্টাফ রিপোর্টার:গত ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএলের পঞ্চম আসর। এই আসরে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম আট ম্যাচের পরিসমাপ্তি শেষে ঢাকায় ফিরবে বিপিএল। দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা এই আসর নিয়ে উচ্চাশা ছিল সবার। কিন্তু, সম্প্রচারের নিম্নমান সেই উচ্চাশার প্রত্যাশাকে অনেকাংশে ফিকে করে দিয়েছে। মাঠে উপস্থিত না থাকলেও টেলিভিশনে কোটি দর্শক এই ইভেন্ট উপভোগ করেন। সাউন্ড সিস্টেম, ভিডিও কোয়ালিটি, কমেন্ট্রি সবই বেশ নিম্নমানের।

    এদিকে ৭ নভেম্বর থেকে দুই চ্যানেলে সম্প্রচারের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশের বাইরেও দেখা যাবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর ম্যাচ সমূহ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বাদেও অন্যান্য দেশে অবস্থানকারী দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত হলো বিপিএল এর দুয়ার। দেশী-বিদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে দেশের ঘরোয়া লিগের পদযাত্রা পঞ্চম আসরে এসে অনেক প্রত্যাশা জমিয়েছে। কে-স্পোর্টসের এলইডি প্যারিমিটার বোর্ড বসানো হয়েছে। প্যারিমিটার প্রযুক্তির মাধ্যমে বাউন্ডারি রোপের পেছনের ডিজিটাল বোর্ড জুড়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি পরিবর্তন হচ্ছে। আকর্ষণীয় সংযোজন সন্দেহ নেই।
    বাংলাদেশের দুই চ্যানেল মাছরাঙ্গা ও গাজী টেলিভিশন বাদেও এবার এই আসর সম্প্রচার করবে আন্তর্জাতিক সব ব্রডকাস্টার। এরমধ্যে আছে পাকিস্তানি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল জিও সুপার, ফ্রি স্পোর্টস, উইলো, ফ্লো, স্টার টাইমসের মতো ব্রডকাস্টার। জানা গেছে,
    পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপান, রাশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে বিপিএলের যাত্রা শুরু হলো। অর্থাৎ, শুরু হলো বিপিএলের বিশ্বায়ন।
    বিপিএলের আন্তর্জাতিক পরিসরে হাটা কতোটা মসৃণ হবে সেটা ভাবনার বিষয়। কারণ, সেই শুরু থেকেই এদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিপিএল যেভাবে সম্প্রচার করে আসছে তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এবারের আসরের দুই সম্প্রচারকারী চ্যানেলের টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতা বেশ দৃষ্টিকটু। এইচডি বা হাই ডেফিনেশন পিকচার কোয়ালিটি নিয়ে গাজী টিভি’র স্ক্রিন গড়পড়তা মনে হয়। মাছরাঙ্গা’র অবস্থায়ও একই। ভিডিও কোয়ালিটি বেশ নিম্নমানের। ক্যামেরার কারসাজিও বেশ দুর্বল। ক্যামেরার এঙ্গেল, জুমিং গ্রাফিক্স দৃষ্টিকটু লাগে।
    ভিডিওগ্রাফি অনেক কঠিন বিষয়। যারা ভাল বুঝেন তারা ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু অন্যান্য দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির সম্প্রচারের মান দেখলে কষ্ট হয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলের সম্প্রচারে সনি সিক্স বা সনি ম্যাক্সের সম্প্রচারের কোয়ালিটি রীতিমত চোখ ধাঁধানো। আইপিএলের বাজেট অনেক বেশি, তাই উদাহরণ হিসেবে অন্য ঘরোয়া লিগের প্রসঙ্গ তুললেও একই অবস্থা। বিপিএলের চেয়ে কম বাজেটের পিএসএল, সিপিএলের সম্প্রচার কোয়ালিটি দেখলে আমাদের অবস্থা অনুধাবন করা সম্ভব।
    বিপিএল সম্প্রচারের নিম্নমান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ৷
    দুইদিনের খেলা শেষে একদিন বিরতি দিয়ে আবার মঙ্গলবার শুরু হয় বিপিএল ২০১৭ এর আসর। সবার চোখ থাকবে ঢাকা পর্বের দিকে। কার্যত, মাঠের কয়েক হাজার দর্শকের চেয়ে টেলিভিশনে দর্শক সংখ্যা অনেক বেশি। কোটি দর্শক, যারা স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখে অভ্যস্ত, যারা হাই ডেফিনেশন মানে ভাল করেই বুঝেন, যারা বাইরের দেশের লিগগুলো ফলো করেন, তাদেরকে নিম্নমানের সম্প্রচার দিয়ে ভুলানো যাবেনা। চোখের শান্তি এখানে খুব জরুরী। খেলা দেখে যদি শব্দ বিভ্রাট, নিম্নমানের ভিডিও কোয়ালিটির মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে দর্শকের তা মোটেও ভাল লাগবে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক প্রত্যাশার বিপিএল।
    বিপিএল ঘিরে এক মাসের বেশি সময় উৎসবমুখর থাকে পুরো বাংলাদেশ। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পঞ্চম আসরে পা দিয়েছে বিপিএল। কিন্তু, এখন বিপিএলের বাজেট বেড়েছে। দর্শক বেড়েছে। ফলে দর্শক চাহিদাও বেড়েছে। এখনও যদি বাজে গ্রাফিক্সের কারণে খেলোয়াড়দের জার্সির রং বুঝতে সমস্যা হয়, স্কোর বোর্ডের ডিজাইন নিয়েও প্রশ্ন উঠে, কমেন্ট্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠে, মাঠের সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে সমস্যা হয়, দর্শকদের চিৎকার যা কিনা মাঠের প্রাণ তা নিয়েও যদি সীমাবদ্ধতা থেকে যায় তাহলে বিপিএলের ভবিষ্যৎ বিপন্ন বই কি!
    তবে আশার কথা বিদেশী ব্রডকাস্টাররা যুক্ত হচ্ছেন বিপিএল সম্প্রচারে। বিশ্বের কোটি দর্শক এখন এইসব মাধ্যমে চোখ রাখবেন ৪০ দিনের এই ক্রিকেট যজ্ঞে। এখন সময় এসেছে বিপিএলের সম্প্রচারের মান উন্নত করার। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী বোর্ড না লাগিয়ে সম্প্রচারে মন দেওয়ার সময় হয়েছে। না হলে শতকোটি টাকার বিপিএলের স্বপ্নযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়বে।