বিদ্যুতের দাবীতে কমলগঞ্জে মানববন্ধন

    0
    268

    কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:  শনিবার (৪ জুলাই) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউপির বনবিট সংলগ্ন কালেঞ্জি গ্রাম ও খাসিয়াপুঞ্জিতে বিদ্যুতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বাঙালী ও খাসিয়া অধিবাসীরা। বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের রশি টানাটানিতে শতভাগ বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হতে পারেনি কমলগঞ্জের আদমপুর বনবিট এলাকার কালেঞ্জি খাসিয়াপুঞ্জি ও পুঞ্জির বাইরের কালেঞ্জি গ্রাম।

    এদিন খাসিয়া পুঞ্জি ও গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হলে সকাল ১০ টায় কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির প্রবেশপথে তিনশতাধিক বাঙারী ও খাসিয়া নারী পুরুষের অংশগ্রহণে উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় ঘোষণা করলেও মূলত কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও সংলগ্ন একটি গ্রাম বিদ্যুতের আওতার বাইরে।

    মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী খাসিয়া হেডম্যান রিটেঙেন খেরিয়াম বলেন, বিদ্যুৎ ও রা¯তাাঘাটের সমস্যার কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও বন বিভাগ অহেতুক কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনে বাধা দিয়েছে। কমলগঞ্জকে সরকারিভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিলেও কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন গ্রাম বিদ্যুতায়নের বাইরে রয়েছে।

    এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আবারও বন বিভাগ জরিপ কাজ করে। এ জরিপ কাজ শেষে আজ শনিবার সকাল থেকে আবারও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কালেঞ্জি পুঞ্জিতে নতুন করে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করে। আর তখনও বন বিভাগের লোকজন এ কাজে বাধা সৃষ্টি করে। আর তার প্রতিবাদে সকালে কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫টি পরিবারের সদস্য ও পাশের গ্রামের ৫০টি পরিবারের সদস্যসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।এছাড়া মোবারক আলী, আব্দুল কাইয়ুম, নাইট খেরিয়াম, সামায়ের খেরিয়াম, সামুয়েল ধার বলেন, সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করা হলেও আমরা কালেঞ্জির বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি।

    আমরা এই বনকে রক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি, ফরেস্ট অফিসারের নির্দশনা মোতাবেক আমরা কাজ করি অথচ প্রধান মন্ত্রীর উদ্যোগে বাঁধা সাজেন খোদ ফরেস্টাররা৷ বন বিভাগের টানাপোড়ার কারনে আমরা দীর্ঘ বছর ধরে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত ৷ তাই অতি শিগগির আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও তার পাশের গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় আসতে হবে। গত মার্চ মাসে বন বিভাগ সর্বশেষ সরেজমিনে তদন্ত করেছে।

    শনিবার বিদ্যুৎ বিভাগ পূর্নরায় কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও পাশের গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করলে বন বিভাগ বাধা সৃষ্টি করে। যা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। বনা লে অন্যান্য খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও কেন বন বিভাগ কালেঞ্জি পুঞ্জিতে বাধা সৃষ্টি করছে তা আমি বুঝতে পারছি না। আদমপুর বনবিট অফিসার শ্যামল রায় জানান, কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও গ্রামে বিদ্যুতায়নের জন্য ইতোপূর্বে বন বিভাগ একটি জরিপ সম্পন্ন করলেও বিদ্যুতায়ন কাজ শুরু করা সম্পর্কে তার কাছে বন বিভাগের কোনো নির্দেশনা আসেনি।

    তাই তিনি আপাতত কাজটি বন্ধ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেছেন।কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী আশেকুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কমলগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হলেও কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও একটি গ্রাম বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। বন বিভাগের বাধার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
    মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ আ লিক কার্যালয়ের ডিজিএম প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র দাশ বলেন, কালেঞ্জি খাসিয়া পুঞ্জি ও কালেঞ্জি গ্রামকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিকাদারের লোকজন খাসিয়া পুঞ্জি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটিও এনে রাখে। শুধুমাত্র বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দু’টি গ্রামকে এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যায়নি।

    এ নিয়ে তিন মাস আগে বন বিভাগ জরুরিভাবে জরিপও করেছে। তাহলে কেন তারা এখন বাধা প্রত্যাহার করছে না তা বোঝা যাচ্ছে না। শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে আবারও ঠিকাদারের লোকজন বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করলে বন বিভাগের লোকজন বাধা দেন।