বিজিবি হামলার বছর পূর্ণঃআজও ক্ষতিপূরণ নেই ক্ষতিগ্রস্থদের

    0
    364

    সচেতন মহলের ধারনা-তদন্ত কমিটির সমন্বয়হীনতা ও গাফিলতির কারণে ক্ষতিপূরণ পায়নি শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী,পরিবহন শ্রমিক,সাধারণ পথচারি,পযর্টক,হোটেল ও যানবাহনের ক্ষতি গ্রস্থরা”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫জানুয়ারী,ষ্টাফ রিপোর্টার,মো.জহিরুল ইসলামঃ ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, সাধারণ পথচারি ও পযর্টক,হোটেল,যানবাহনের উপর বিজিবি সৈনিকদের হামলার ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার দীর্ঘ এক বছর অতিক্রান্ত হলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্থরা।

    প্রশাসনের আশ্বাসে ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি’র মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। কিন্তু তা না হয়ে তড়িঘড়ি করে ১৫ দিনের মাথায় ওই তদন্ত কমিটির ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই তাদের কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলী হয়ে গেছেন। এদিকে তদন্ত কমিটি সুষ্ঠভাবে তদন্ত করতে পেরেছে কিনা বা আদৌ তা বাস্তবায়িত হবে কিনা এ নিয়ে হতাশায় ভূগছেন শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক-মালিক ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থরা।

    বিজিবি’র সৈনিকদের হামলার প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী,পরিবহন শ্রমিক-মালিক ও অন্যান্যরা ৩ দিন শ্রীমঙ্গলে ধর্মঘট ডাকে। প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী,পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে। কিন্ত হামলার ১ বছর কেটে গেলেও আজও ক্ষতিগ্রস্তরা কোন ক্ষতিপূরণ কিছুই পায়নি।

    জানা যায়, বিজিবির এহেন অমানবিক ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের ঢাকা অর্নিদিষ্ট কালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুখ আহমেদকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শহীদুল হক ও শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে ৭ জানুয়ারি থেকে ১৪ জানুয়ারির ভেতরে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সকল তদন্ত কাজ শেষ করে বিজিবি’র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। কিন্তু তদন্ত কাজ কিছুটা এগুতে না এগুতেই ওই কমিটির ৪ জনের মধ্যে ৩ জনই বদলী হয়ে যান।

    পরবর্তীতে মৌলভীবাজারে যোগ দেয়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম ও শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম নজরুল এই চারজনকে নিয়ে পুণঃরায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতের দেখা দেয় ধীর গতি। এদিকে তদন্ত কমিটির সমন্বয়হীনতার কারণে দীর্ঘ ১ বছরেও ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব হয়নি বলে ধারণা ক্ষতিগ্রস্থদের।

    এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সদস্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিগত কমিটির প্রধান মো. ফারুখ আহমেদ এখন পর্যন্ত বর্তমান কমিটির কাছে কোন কাগজপত্র হস্থান্তর করেন নি। বিধায় বর্তমান কমিটি এই তদন্ত কাজে এগুতে পারছে না।

    এদিকে বিগত তদন্ত কমিটির প্রধান মো. ফারুখ আহমেদ জানান, তিনি দায়িত্বরত থাকাকালীন সময়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যানের সহকারী সুদীপ দাশ ও উপজেলা টেকনিশিয়ান আমীর হোসেন বাদলকে দিয়ে সকল কাগজপত্র তৈরী করেছিলেন। তিনি বদলী হয়ে যাবার সময় তাদের কাছেই সকল কাগজপত্র রেখে গেছেন।
    এব্যাপারে আমীর হোসেন বাদলকে কাগজ গুলো কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, কাগজগুলো ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে অনেক আগেই।
    বর্তমানে নিযুক্ত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

    এবিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন- আমি একটি মিটিং এ আছি,বিজিবির ঘটনার বিষয়টি অনেক আগের। আমরা নতুন একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম।এই কমিটি কি করেছে তা অফিসে গিয়ে দেখে বলতে হবে।

    শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন- বিজিবি হামলায় শহরের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আমরা কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে আমাদের যা যা করার দরকার অবিলম্বে আমাদের কর্মসূচী হতে নেবো।

    পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন- আমাদের মোট ৩৭ টি কার মাইক্রোবাস, ৭০ টি সিএনজি এবং ছোট-বড় আরো ৬০ টি ট্রাক ও ৫ টি মিনিবাস ভাংচুর করা হয়েছে। যার প্রতিটি মেরামত করতে আনুমানিক মূল্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লেগেছে। ১ বছর হয়ে গেছে আমরা কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। আর অপেক্ষা করা যাবে না। ক্ষতিপূরণ না পেলে আমরা আবারও ধর্মঘট ডাকবো।

    উল্লেখ্য,গত ৫ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ রোজ বৃহস্পতিবার বিজিবি’র সাথে এক পরিবহন চালকের সাথে পাম্পের গ্যাস নেবার সময় কথাকাটাকাটি হয়।এসময় বিজিবি ও ঐ পরিবহন চালকের গায়ে হাত তুলে।সেখান থেকে ঐ চালক শ্রীমঙ্গল শহরে প্রবেশ করে শহরতলী ভানুগাছ রোডস্থ পানসী হোটেলের সামনে বিজিবি’র গাড়ির গতিরোধ করে হাতাহাতি শুরু হয়। সন্ধ্যায় এই খবর বিজিবি’র ক্যাম্পে চলে গেলে বিজিবি’র সৈনিকরা অস্ত্র গোলাবারুধ নিয়ে শহরের প্রবেশ করে শ্রীমঙ্গলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহনসহ পথচারীদের উপরে অতর্কিত হামলার চালায় তারা নিরহ মানুষের উপরে।এতে ৪ জন গুলিবিদ্ধ,শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনসহ অর্ধশত মানুষকে পিঠিয়ে আহত করে বিজিবি সদস্যরা এসময় গনমাধ্যম কর্মীর ক্যামেরাও ভেঙ্গে দেয় বিজিবি’র সৈনিকরা।