বানিজ্য গতিশীল করার লক্ষে ২৪ ঘণ্টা খোলা বেনাপোল বন্দর

    0
    347

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২আগস্ট,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে সপ্তাহে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু থাকবে। বন্দরের কার্যক্রম চালাতে কাস্টমসও খোলা রাখা হবে সপ্তাহ জুড়ে পুরো সময়।

    বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে দু’দেশই একই ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্দর ও কাস্টমস সবদিন খোলা রাখতে ইতিমধ্যে বাড়ানো হয়েছে শুল্ক বিভাগের জনবল।

    ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন এ কর্যক্রম উদ্বোধন করার কথা ছিল। তবে আপাতত কার্যক্রম চালু রেখে পরবর্তী যে কোনো দিন তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

    এই কর্মকান্ড যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে সে জন্য জেলা প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস ও বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এর আগে গত ২৩ জুলাই সচিবালয়ে এক আন্ত-মন্ত্রণালয় সভা শেষে নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খান আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে বেনাপোল বন্দর-কাস্টমস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

    বিপুল পণ্য আমদানি-রপ্তানি হওয়ায় ভারতের পেট্রাপোল এবং বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে ভয়াবহ পণ্য ও যানজট লেগেই থাকে। এ পণ্য ও যানজটের কারণে ভারত এবং বাংলাদেশের উভয় পাশে ব্যবসায়ীরা দ্রুত মালামাল খালাস নিতে পারেন না। দীর্ঘ সময় লাগে মালামাল খালাস করতে। বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য ইতিমধ্যে বন্দর এবং কাস্টমসের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের  যে  বৈঠক এবং মতবিনিময় সভা হয়েছে তাতে উঠে আসে বন্দরের সার্বিক অব্যবস্থাপনার কথা।

    এর ভারত সরকার বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল স্থলবন্দরে ৩০০ বিঘা জমির ওপরে যে নতুন ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট উদ্বোধন করেছিলেন, তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। সে সময় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

    বাংলাদেশ ও ভারতের স্থলবাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বছরে যাতায়াত করেন প্রায় ১৩ লাখ যাত্রী।

    বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং আমদানি-রপ্তানিকারকরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা বন্দর-কাস্টমস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন ভারত থেকে ৮০০ থেকে এক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢুকতে হবে। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করায় এবং বন্দরের অভ্যন্তরে তিল ধারনের জায়গা না থাকায় পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা চিন্তার বিষয়। সে ক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে বেনাপোল বন্দরের নিজস্ব ট্রাকটারমিনাল, আমদানিকৃত বিভিন্ন কোম্পানির নতুন গাড়ি রাখার জন্য অন্তত ২০০ একর জমির ওপরে ওপেন ইয়ার্ড, ভারি মালামাল, মেশিনারি বা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ইয়ার্ড এবং শেড প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ একর জমির প্রয়োজন। ভারতীয় ট্রারমিনাল থেকে আমড়াখালী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ প্রয়োজন। বেনাপোল বন্দরের প্রশাসনিক কার্যালয় না থাকায় বহুতল বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি।

    বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বন্দরে স্থান সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বন্দরের ধারণ  ক্ষমতা ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু  মালামাল রয়েছে  দুই লাখ মেট্রিক টন। যত্রতত্র খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে আমদানিকৃত মালামাল। ক্রেন, ফর্কলিফট নষ্ট থাকায় পণ্য লোড-আনলোডে সমস্যা হচ্ছে।’ তিনি বন্দরের এসব অব্যবস্থাপনা দূর করার জোর দাবি জানান।

    বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো: শওকাত হোসেন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা কাস্টমস ও বন্দর খুলে রেখে কাজ করার সরকারি নির্দেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষও একইভাবে কাজ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আশা করছি এর সুফল আমদানি-রপ্তানিকারকরা পাবেন। পাশাপাশি পণ্যজটও কমে আসবে।’