বাংলার ঈসা খাঁ কখনও পরাশক্তির কাছে মাথানত করেননি

    0
    955

    আমারসিলেট24ডটকম,নভেম্বরঃ ঈসা খাঁ বাংলার বার ভুইয়া প্রধান। ঈসা-খাঁ এবং বার জন জমিদার একসাথে বাংলায় স্বাধীনভাবে জমিদারী স্থাপন করে। ঈসা-খাঁর বাংলো বাড়ি কিশোরগঞ্জে অবস্থিত।তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সেইসময়ের জমিদার কুইচ রাজাকে সিংহাসন চ্যুত করে বাংলো বাড়িটি র্নিমান করেন। জঙ্গল ১৫৭৫ সম্রাট আকবর বাংলা বিজয়ের পর বারোভূঁয়াদের ক্ষমতা কমে যায়। তখন সম্রাট আকবর বারোভূঁয়াদের ক্ষমতা থেকে সরাতে আভিযান করেন,কিন্তু ব্যর্থ হন‌। তখন সম্রাট আকবরের সেনাপতিকে পাঠান ঈসা-খাঁকে হত্যার জন্য কিন্তু বীর ঈসা-খাঁর সাথে সেনাপতি যুদ্ধে পরাস্থহন।ঈসা-খাঁর আনেক নির্দশন কিশোরঞ্জ পাবলিক লাইব্রিতে পাওয়া যাবে।

    বারভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন তিনি।মুঘল সেনাপতি মানসিংহ জীবনে দুব্যক্তিকে পরাজিত করতে পারেননি যারা হলেন,চিতরের রানা প্রতাপ সিং ও ঈসা খাঁ।

    ১৫৩৭ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সরাইল পরগণায় ঈসা খাঁর জন্ম।তাঁর পিতা কালিদাস গজদানী ভাগ্যান্বেষণে অযোধ্যা থেকে গৌড়ে এসে স্বীয় প্রতিভা গুণে রাজস্বমন্ত্রী পদে উন্নীত হন।পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম হয় সুলাইমান খাঁ।তিনি সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-৩৮) মেয়েকে বিয়ে করে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইল পরগণা ও পূর্ব মোমেনশাহী অঞ্চলের জায়গীরদারী লাভ করেন।

    ১৫৪৫ সালে শের শাহের পুত্র ইসলাম শাহ দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করার পর সুলাইমান খাঁ দিল্লীর আনুগত্য অস্বীকার করলে কৌশলে তাঁকে হত্যা করে তাঁর দুই নাবালক পুত্র ঈসা খাঁ এবং ইসমাইল খাঁকে একদল তুরানী বণিকের নিকট বিক্রি করা হয়। ১৫৬৩ সালে ঈসা খাঁর চাচা কুতুব খাঁ রাজকার্যে নিযুক্তি লাভ করে বহু অনুসন্ধানের পর সুদূর তুরান দেশের এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে ২ ভ্রাতুস্পুত্রকে উদ্ধার করেন।

    এ সময় ঈসা খাঁর বয়স মাত্র ২৭ বছর।সুলতান তাজ খাঁ কররানী (১৫৬৪-৬৫) সিংহাসনে আরোহণ করে ঈসা খাঁকে তাঁর পিতার জায়গীরদারী ফেরত দেন। বাংলার শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খাঁ কররানীর রাজত্বকালে (১৫৭২-৭৬) ঈসা খাঁ বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করেন অসাধারণ বীরত্বের জন্যে।

    ১৫৭৫ সালের অক্টোবর মাসে বাংলার সুবাদার মুনিম খাঁর মৃত্যু হলে আফগান নেতা দাউদ খাঁ কররানী স্বাধীনতা ঘোষণা করে নিজ নামে বাংলা ও বিহারে খুতবা পাঠ করান। স্বাধীন ভূঁইয়ারাও তাঁকে অনুসরণ করে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন।এরপর অনেক বীরত্বগাথাঁ রচিত হয়।

    সর্বশেষ ১৫৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুর হতে ১২ মাইল দূরে ঈসা খাঁ, মাসুম খাঁ কাবুলীর সম্মিলিত বাহিনী দুর্জন সিংহকে (মানসিংহের ছেলে) বাধা দিলে দুর্জন সিংহ বহু মুঘল সৈন্যসহ নিহত হন। অনেকে বন্দী হন। কিন্তু সুচতুর ঈসা খাঁ মুঘলদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা উচিত বলে মনে করে আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। তিনি বন্দীদের মুক্তি দেন এবং মানসিংহের সাথে আগ্রায় গিয়ে সম্রাট আকবরের সাথে সাক্ষাত করেন। সম্রাট এ বীর পুরুষকে দেওয়ান ও মসনদ-ই-আলা উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৫৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর মৃত্যু হয়।

    গত ১৮ অক্টোবর ছিল বাংলার মহাবীর মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁ’র ৪৭৭তম জন্মদিন। বিবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় রাজা কালিদাস গজদানী সিংহ নামান্তরে সোলায়মান খাঁর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা উদারমনা শক্তিমান পুরুষ। মননশীল চেতনা ইতিহাস ও নীতিজ্ঞান সত্য ও সুন্দরের মহিমায় সমৃদ্ধ ছিল তাঁর জীবন। কখনও পরাশক্তির কাছে মাথানত করেননি। তিনি আমাদের মাঝে ভাস্বর হয়ে আছেন। মোঘল বিদ্রোহী বঙ্গবীর মসনদ-ই-আলা ঈশা খা’র স্মৃতি বিজড়িত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শনগুলো কালের গর্বে হারিয়ে যাচ্ছে।

    ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঈশা খা’র জঙ্গলবাড়ী, সোনারগাঁয়ের রাজধানী, একডালা, কত্রাবো, কদমরসূল, এসারসিন্ধুর ও খিজিরপুর দূর্গ,অষ্টগ্রামের কাস্তুল এলাকার অনেক অজানা স্মৃতি। অজত্ন অবহেলায় লোকচক্ষুর অন্তড়ালে শায়িত রয়েছেন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁ’। তার কবরটিও রয়েছে অজপাড়া গায়ের নীরব স্থানে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায়। শুধু তাই নয় তাঁর ছেলে বাংলার শাসক (১৫৯৯-১৬১২) মুসা খাঁ’র মাজারটিও ঢাকার কার্জন হলের পার্শ্বে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।

    সুবে বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ের অধিপতি বার ভূইয়াদের অন্যতম নেতা মহাবীর ঈশা খাঁ বিচক্ষণ ও দুরদর্শী রাজনীতিবীদ হলেও বর্তমান রাজনীতিবীদসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কারও কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ঈশা খার ইতিহাস ঐতিহ্য ও তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থান গুলো সংরক্ষণের নেই কোনো উদ্যোগ। ফলে আগামী প্রজন্ম তাঁর বীরত্বগাঁথা ইতিহাস সম্পর্কে জানার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

    বার ভূইয়াদের অন্যতম নেতা মহাবীর ঈশা খাঁ ১৫৩৬ মতান্তরে ১৫৩৭ সালের ১৮ অক্টোবর বিবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় রাজা কালিদাস গজদানী সিংহ নামান্তরে সোলায়মান খাঁর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। দাম্পত্য জীবনে প্রথমে স্ত্রী সৈয়দা ফাতেমা খাতুন ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম স্বর্ণময়ী। সন্তানদের মধ্যে মুসা খাঁ ও মোহম্মদ খাঁ।

    যাদের নাম আজ বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। রাজা টোডরমল সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯ সরকার ও ৬৮২ পরগণায় বিভক্ত করেছিলেন। সরকার বাজুহা ও সরকার সোনারগাঁওয়ে দু’টি সরকারের সৃষ্টি হয়েছিল তাতে সরকার বাজুহা ছিল ৩২ টি পরগনা ও সরকার সোনারগাঁয়ে ছিল ৫২ টি পরগণা। মসনদ ই আলা ঈশা খাঁ সরকার সোনারগাঁও ও সরকার বাজুহার ২২ টি পরগণার এবং ৬ টি দূর্গের আধিপত্য গ্রহণ করেছিলেন।

    যেগুলোর আয়তন ছিল সিলেট জেলার কতক অংশ পশ্চিমে রাজশাহী বগুড়া ও পাবনা জেলার অংশ, দক্ষিণে ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত পূর্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ভাটি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ড. আ. করিমের মতে ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব ভাগ ও ত্রিপুরা রাজ্যের পশ্চিম ভাগ ভাটি রাজ্যের সীমানা।

    তিনি রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রথমে বিবাড়িয়া জেলার সরাইলে প্রাথমিক রাজ্যের বিস্তৃতি করেন। পরে বর্তমান রুপগঞ্জ উপজেলার মাসুমাবাদ গ্রামে কত্রাবো দুর্গের দখল নিয়ে রাজধানী স্থাপন করেন। মোঘল সুবাদার শাহবাজ খান এ দূর্গে আক্রমন চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেন। এমনকি সেখানকার খিজিরপুর দূর্গটিকেও বিধ্বংস করে দেন তারা।

    এ জন্য ঈশা খাঁ মেঘনা নদীর তীরে সুবর্ণ গ্রামে (বর্তমান সোনারগাঁও) রাজধানী স্থাপন করে বিদেশীদের হঠাতে ও মুঘলদের নাস্তানুবাদ করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। ১৫৯৯ সনের ১৬ ডিসেম্বর ঈশা খাঁ’র মৃত্যুর কথা উল্লেখ রয়েছে।সুত্রঃইত্তেফাক।

    অপরদিকে আরও জানা যায়,লাল মাটি, সবুজ গাছগাছালি আর ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এগারসিন্দুর। এটি ছিল ঈশা খাঁর শক্ত ঘাঁটি। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এগারসিন্দুর। জনশ্রুতি আছে, বেবুধ নামে এক কোচ উপজাতি প্রধান ষোড়শ শতাব্দীতে এগারসিন্দুর দুর্গ নির্মাণ করেন। ঈশা খাঁ বেবুধ রাজার কাছ থেকে দুর্গটি দখল করেন এবং একে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেন। ১৫৯৮ সালে মান সিংহ দুর্গটি আক্রমণ করেন।
    এই এগার সিন্দুরেই ঈশাঁ খা ও মানসিংহের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়েছিল। কথিত আছে – যুদ্ধের প্রাক্কালে ঈশা খা বলেছিল সাধারন সৈন্যদের যুদ্ধে না জড়িয়ে দুই দলের দুই প্রধানের যুদ্ধ হোক । এর ফলেই ঈশা খা – মানসিংহের তরবারী লড়াই শুরু হয় । একপর্যায়ে ঈশা খার তরবারীর আঘাতে মান সিংহের তরবারী ভেংগে গেলে ঈশা খা তাকে আঘাত না করে তার সেনা পতি কে বলেন মানসিংহকে আরেকটি তরবারী দিবার জন্য
    তার এই মহানুভবতা দেখে মানসিংহ আর যুদ্ধ না করে, সন্ধির প্রস্তাব দেন ।

    ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দুর্গটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তবে দুর্গের ভেতরে উঁচু একটি ঢিবি পাওয়া যায়, যেখান থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কামান দাগানো হতো। এগারসিন্দুরে আছে বেবুধ রাজার দিঘি, সাদী মসজিদ, শাহ মাহমুদ মসজিদ।