বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা “শেভরনের”

    0
    224

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৮অক্টোবরঃ বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন। জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান সামাল দিতে বাংলাদেশের কার্যক্রম ছেড়ে দিতে চাইছে কোম্পানিটি। গতকাল এক বিবৃতিতে ব্যবসা বিক্রির আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তেল-গ্যাস খাতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি শেভরন।

    বণিক বার্তার পক্ষ থেকে শেভরন বাংলাদেশের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা। এক ই-মেইল বার্তায় শেভরন বাংলাদেশের সহকারী ব্যবস্থাপক (কমিউনিকেশনস, মিডিয়া) সাবরিনা রহমান বলেন, ‘এ নিয়ে বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে। আকর্ষণীয় দাম পেলেই আমরা অগ্রসর হব।’ তবে এখন পর্যন্ত  এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে শেভরনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

    শেভরন বাংলাদেশে ব্যবসা বিক্রির আলোচনা নিশ্চিত করেছে জানিয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সও। বাংলাদেশ থেকে শেভরনের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার বিষয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর ‘শেভরন বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে কি?’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বণিক বার্তা। পেট্রোবাংলা সূত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যবসা বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে শেভরন। দেশী-বিদেশী একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যবসা বিক্রির ইচ্ছার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।

    এর পর গত মঙ্গলবার ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের ব্যবসা বিক্রি থেকে ২০০ কোটি ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করছে তারা। সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে চীন ও ভারতের তেল-গ্যাস খাতের কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে।

    গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেভরন। শুধু শেভরনের মাধ্যমেই সরবরাহ হয় দেশের গ্যাসের চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে মোট তিনটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্বে রয়েছে কোম্পানিটি। সম্মিলিতভাবে এ তিনটি ব্লকে এক বছরের ব্যবধানে শেভরনের বিনিয়োগ (মূলধনি ও পরিচালন) কমেছে ১৯ শতাংশ। এ তিন ব্লকে ২০১৪ সালে শেভরনের মোট মূলধনি ও পরিচালন ব্যয় ছিল ৪১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলারে। আর ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে দুই বছরে বাংলাদেশে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

    গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশে শেভরনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ রয়েছে ১২ নং ব্লক বা বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে। ২০১৩ সালে এ ব্লকে মূলধনি ও পরিচালন ব্যয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগ ছিল ৪১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ২০১৪ সালে সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৯২ লাখ ডলারে। ২০১৫ সালে এ বিনিয়োগ আরো কমে ২৩ কোটি ৩২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এ হিসাবে শুধু বিবিয়ানাতেই দুই বছরে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

    এদিকে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে বিনিয়োগ কমলেও মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে মূলধনি ও পরিচালন ব্যয় বেড়েছে শেভরনের। যদিও বাংলাদেশে শেভরনের মোট বিনিয়োগের তুলনায় এ দুই গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। ২০১৫ সাল শেষে মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির মূলধনি ও পরিচালন ব্যয় ছিল ১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। একই সময়ে জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয় করে শেভরন।

    বাংলাদেশে জনবলও কমিয়েছে শেভরন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সঙ্গে স্থায়ী, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক প্রায় চার হাজার কর্মী যুক্ত আছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত শেভরনের সব ব্লকের প্লান্ট ও প্রধান কার্যালয়সহ কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। এরা সবাই অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পন্থায় বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে শেভরনের হয়ে গ্যাস উত্তোলন কাজে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেভরন চুক্তিভিত্তিক কর্মীর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করায় এখন এ ধরনের কর্মী ২০ শতাংশ কমে ৮০০ জনের নিচে দাঁড়িয়েছে।

    জানা গেছে, সম্প্রতি কাজাখস্তানে প্রকল্প সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে শেভরন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায়। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এতে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে তারল্য সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সংকট নিরসনে বাংলাদেশসহ কিছু দেশের ব্যবসা বিক্রির পরিকল্পনা করছে শেভরন।

    এশিয়া অঞ্চল থেকে শেভরনের ব্যবসা বিক্রির তথ্য জানা যায় গত মাসে। তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ায় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের

    সম্পদ বিক্রি করবে শেভরন। চীনে শেভরনের তেল প্রকল্প বিক্রির পাশাপাশি জানা যায় ইন্দোনেশিয়ায় ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের ক্রেতা অনুসন্ধানের বিষয়টি। একই সঙ্গে জানা যায় থাইল্যান্ড প্রকল্প ছেড়ে দেয়ার আভাসও।সুত্রঃবণিক বার্তা