বাংলাদেশে উগ্রবাদী শক্তির উত্থানে উদ্বিগ্ন মার্কিন সিনেট

    0
    232

    আমারসিলেট24ডটকম,১০জানুয়ারীঃ  বাংলাদেশে ইসলামের নামে উগ্রবাদের উত্থানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিরোধী জোটের লাগাতার কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি, জাতীয় অর্থনীতির মুখথুবড়ে পড়া ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন সিনেট।অপরদিকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধকে দায়ি করে ৬টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন সিনেটের পূর্ণ অধিবেশন সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন-৩১৮ পাস করেছে। মার্কিন সিনেট বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সম্পর্ককে শত্রুতা উল্লেখ করে পাসকৃত প্রস্তাবে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সরাসরি ফলপ্রসূ আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

    ২০১৪ সালের মার্কিন সিনেটের পূর্ণ অধিবেশনের প্রথম সভাতেই বাংলাদেশের ওপর এই প্রস্তাব পাস হলো।অন্যদিকে মার্কিন সিনেটের প্রস্তাবটি এখন বিল হিসেবে বিবেচিত হবে। তাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে অর্থনৈতিক, সন্ত্রাস মোকাবেলা, পাইরেসি মোকাবেলা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা যুক্তরাজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমেরিকান কোম্পানিগুলোর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মধ্যে বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।মার্কিন সিনেটের কমিটি অন কমার্স, সায়েন্স এন্ড ট্রান্সপোর্টেশন গত ১৮ ডিসেম্বর শুনানিতে রেজুলেশন-৩১৮ প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে ফরেন রিলেশন কমিটিতে পাঠায়। পরে রেজুলেশন-৩১৮ এর নাম ও মুখবন্ধ কিছুটা পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনো পরিবর্তন ছাড়া রেজুলেশনটি অনুমোদন করে মার্কিন সিনেট। ফলে বিষয়টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস পর্যন্ত গড়াতে পারে।একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ সিনেট এখন ইচ্ছে করলে রিলেশন কমিটিতে শুনানি বা কোনো নির্দেশনাও দিতে পারবে।

    গত ৭ জানুয়ারি ১১৩তম কংগ্রেসের প্রথম সেশনেই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। যার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ হয়েছে ৯ জানুয়ারি।সিনেটে গৃহীত প্রস্তাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরাসরি এবং সত্যিকার অর্থে সংলাপে বসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে লাগাতার রাজনৈতিক অচলাবস্থায় বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে মন্তব্য করেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এজন্য অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে এবং নাশকতার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পথ সুগম করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা এবং অবাধ গতিবিধির নিশ্চয়তা দিতেও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

    তাছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক মতবিরোধ দূর করতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগে শুরু হওয়া আলোচনার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন সিনেট। আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে মানবাধিকার কর্মীদের হেনস্তা বন্ধে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন সিনেট।মার্কিন সিনেটে বাংলাদেশ বিষয়ে গৃহীত প্রস্তাবের পটভূমিতে বলা হয়,বাংলাদেশে দীর্ঘদিন পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় থাকা দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বের কারণে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণভাবে বাংলাদেশ সহিষ্ণু হিসেবে পরিচত হলেও সামপ্রতিক সময়ে ধর্মীয় চরমপন্থার উত্থান ঘটছে। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিগত বছরগুলোতে এদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের সাফল্য ও বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে পারায় মার্কিন সিনেট প্রশংসা করেছে। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাধীনতায় সরকারের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে। আর মার্কিন সিনেটের প্রস্তাবের ভূমিকায় একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে আন্তর্জাতিক মানের ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়। তবে প্রস্তাবে বাংলাদেশকে উদার ও বৈচিত্র্যময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

    গৃহীত মার্কিন সিনেটের প্রস্তাব প্রসঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একেএ মোমেন জানান, মার্কিন সিনেটের প্রস্তাবে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা ফুটে ওঠেনি। কারণ ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ আগের অবস্থানে নেই। অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। প্রস্তাব পাশের আগে এ বিষয়ে মার্কিন সিনেট সরেজমিন খোঁজ নেয়ার তাগিদ বোধ না করা দুঃখজনক।
    আর প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশের সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরীর মতে, সিনেট নেতারা প্রস্তাব গ্রহণের আগে বাংলাদেশের সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতি জেনে নিলে তা আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হতো।
    তবে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে মার্কিন সিনেটের এই প্রস্তাবকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা শরাফত হোসেন বাবু ও তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদল। তারা আশাবাদী- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সরকার শিগগিরই আলোচনার মাধ্যমে সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচনের পথ অনুসরণ করবে।