বাংলাদেশকে জয়ের দুই নায়ক সৌম্য ও মোসাদ্দেক

    0
    298

    অপেক্ষাটা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। সেবারই প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। এত কাছে তবু এত দূরের স্বাদও সেবারই প্রথম পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর পর একের পর এক ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিবারই হতাশা নিয়েই ফিরেছে দল। আজ আর সেটা হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।

    একসময় মাশরাফি বিন মুর্তজা ‘মানসিক বাধা’র কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশ যে বাধাটা কেন যেন উতরে যেতে পারছিল না এত দিন। গিরোটা আজ ছুটল ডাবলিনে। ইতিহাসের সাক্ষী হলো মালাহাইড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ফাইনাল জিতল বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের এ কাব্যিক জয়ের দুই নায়ক সৌম্য সরকার আর মোসাদ্দেক হোসেন।রেকর্ড গড়েই ম্যাচ জেতালেন মোসাদ্দেক।

    ২৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ২১০ রান। টি-টোয়েন্টি জমানায় ২৪ ওভারে লক্ষ্য কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। তামিম-সৌম্যর জুটি ৫ ওভারের পাওয়ার প্লেতেই এনে দেয় ৫১। এমন একটা শুরুই তো দরকার ছিল! সৌম্য ছিলেন দারুণ মেজাজে। তামিম শুধু প্রান্ত বদল করে দিচ্ছিলেন। সৌম্যর রান তখন ৩৯, তামিম ইকবালের ১০। ছয়টি চার আর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ফেলেছেন সৌম্য। তামিম তখনো বাউন্ডারির খাতা খোলেননি। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারটি করতে আসা শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে পরপর দুই বলে চার মেরে তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দিলেন এর আগে একবার প্রাণে বেঁচে যাওয়া তামিম। ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটির ৪২-ই এল বাউন্ডারি থেকে। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেয়ে তিনে নামা সাব্বির দ্রুত আউট হয়ে ভয়ই ধরিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। গ্যাব্রিয়েল চার বল আর ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট তুলে এনে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু তাতেও সৌম্য টলেননি। মুশফিকের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটিটাও হলো ৩৩ বলে। ৯টি চার আর তিন ছক্কায় ৪১ বলে ৬৬ রানের দুরন্ত সাহসী এক ইনিংস খেলা সৌম্য বদলি ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরলেন।

    সৌম্য শুরু করেছিলেন, তবে কঠিন সমীকরণ মেলাতে গিয়ে দেখতে দেখতে ১৫.৪ ওভারে ১৪৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ৪৮ বলে দরকার ৬৫ রান। জয়ের স্বপ্ন ধূসর হওয়ার সংশয় যখন, তখনই আবির্ভাব মোসাদ্দেকের। ডাবলিনে আজ বৃষ্টি হয়েছে। মোসাদ্দেকের সৌজন্যে ঝড়ও উঠল। ১৮ বলে যখন দরকার ২৭ রান, ম্যাচটা চকিতে নিজেদের হাতের মুঠোয় আনলেন মোসাদ্দেক। অ্যালেনের করা ২২তম ওভারে ৬, ৬, ৪, ৬, ২, ১—২৫ রান তুলে এক ঝটকায় সমীকরণ করে ফেললেন একেবারে সহজ। এরই ফাঁকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডও গড়লেন। শুধু তা–ই নয়, দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে মুগ্ধ করলেন মোসাদ্দেক। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন ৪১ বলে ৭০ রানের জুটি। সব সংশয় দূর করে এই জুটিই বাংলাদেশকে নিয়ে গেল জয়ের প্রান্তে।

    বৃষ্টির কারণেই ম্যাচের ভাগ্য বারবার বদলেছে। কমেছে আকার। বৃষ্টি নামার আগে ২০.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১৩১ রান। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকার পর ম্যাচ ২৪ ওভারে নেমে আসে। বাকি ৩.৫ ওভারে ক্যারিবীয়দের হাত খুলে মারতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ২১ যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ১ উইকেটে ১৫২ রানে। ডিএল সমীকরণে বাংলাদেশের লক্ষ্যটায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের তোলা রানের সঙ্গে যোগ হয় আরও ৫৮। বৃষ্টিবাধায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসায় কঠিন লক্ষ্য, আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন সব বাধা উতরে বাংলাদেশ দূর করেছে ফাইনাল হারের দুঃখ। লিখেছে নতুন ইতিহাস।