বর্ণিল আয়োজনে কানাডায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

    0
    214

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২১মার্চ,সদেরা সুজন,সিবিএনএ কানাডা থেকে:বর্ণিল আয়োজনে ও ​বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কানাডার ​রাজধানী শহর​ অটোয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস উদযাপন করলো বাংলাদেশ হাই কমিশন।

    ​অটোয়ার শিশুদের জন্য দিনটি​ ছি​লো​ এক বিশেষ​ অানন্দঘন​ দিন।

    ​সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার হওয়াতে বিপুল সংখ্যক শিশু ও অভিভাবকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ৩৫০ স্পর্ক্স স্ট্রীটে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন কার্যালয়। অটোয়া ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শহর থেকে আগত শিশুদের

    জন্য​ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন (১৭ই মার্চ, ২০১৭ উপলক্ষ্যে)  চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন ​করে বাংলাদেশ হাই কমিশন​। এ বছর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো – “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, বাংলাদেশের খুশির দিন” (‘ক’ গ্রুপ – ৪ হতে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য) এবং “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু” (‘খ’ গ্রুপ – ৯ হতে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য)। রচনা প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো – “মহান নেতা বঙ্গন্ধু” (১৮ বছর পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত)।

    ​অটোয়া সেন্টারটাউন, অরলিন্স, বার হেভেন ও কানাটা থেকে ৩৫ জন শিশু ​এ প্রতিযোগিতাটিতে অংশগ্রহণ করে। রঙের তুলিতে তারা অঙ্কিত করে​ বাঙালী জাতির প্রাণ প্রিয় নেতা ও স্বাধীন​ বাংলাদেশের ​ স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।​ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পর অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ ও রাজনৈতিক সংগ্রামের উপর বিস্তারিত আলোচনা। ​

    অালোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন কানাডা সফররত গণপ্রাজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, অনুষ্ঠানের সভাপতি, কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিনী মিসেস নিশাত রহমান। বাংলাদেশ হাই কমিশনের কূটনীতিকবৃন্দ, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং হাই কমিশনের পরিবারেরর সকল সদস্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিশেষ আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে যোগ দেন কানাডা আওয়ামী লীগ, অটোয়া আওয়ামী লীগ, কুইবেক আওয়ামী লীগ এবং অন্টারিও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকগণ, পেশাজিবী, শিক্ষক ও বিপুল সংখ্যাক অভিভাবক।

    ​অনুষ্ঠান সমন্বয় করেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব অপর্ণা রাণী পাল​, প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ, ও কাউন্সিলর মাকসুদ খান​।

    ​ ব্যবস্থাপনায় প্রথম সচিব আলাউদ্দিন ভুইয়া।অঙ্কিত চিত্রকর্মের বিচারকার্য সম্পাদনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্ব দেন মিনিস্টার নাইম উদ্দিন আহমেদ।

    ‘ক’ গ্রুপের শিশুদের (বয়স ৪-৮ বছর) চিত্রাঙ্কনে (বিষয় : “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, বাংলাদেশের খুশীর দিন”) প্রথম স্থান অধিকার করে সার্ভিনাজ সাইদী, দ্বিতীয় উমায়জা খন্দকার এবং তৃতীয় হয় মানহা মোহসীন। ‘খ’ গ্রুপে শিশুদের (বয়স ​৯​-​১৫​ বছর) চিত্রাঙ্কনে ​(বিষয় : “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু”) ​​প্রথম হয় ​মারুফ সাকী, দ্বিতীয় উমায়মাহ খন্দকার এবং তৃতীয় হয় জুবাইদা জারাহ। পুরস্কার বিতরণীর পর সকল শিশুর সাথে কেক কেটে ও শিশুদের কেক খাইয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উযাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, হাই কমিশনার এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

    উৎসবমুখর পরিবেশে​ আনন্দ-উদ্দীপনার সাথে​ কেক খেয়ে বঙ্গবন্ধুর​ জন্মদিনকে উদযাপন করে শিশু, অভিভাবকসহ উপস্থিত অতিথিগণ।​আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তিনিই বাঙালীকে দিয়েছেন আত্মপরিচয় এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজ পৃথিবীর প্রতিটি শহরের যেখানে বাঙালী আছে, সর্বত্রই তাঁর জন্মদিন পালিত হচ্ছে, আমাদের প্রবাসী প্রজন্ম জানছে তাদের মাতৃভূমির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, তাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিয়োগাতার ভূয়সী প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রবাসের আজকের এ প্রজন্মই আগামী দিনে বিশ্বের বুকে বাংলাদশকে আরও উচ্চে তুলে ধরবে। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধূর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সোনালী ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে চলেছে। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে পরিচয় দেবার মতো একটি দেশ। আমরা গর্বিত যে আমরা বাঙলী। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। আমাদের নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নুর চৌধুরীকে কানাডা হতে বাংলাদেশে ফেরত আনার ক্ষেত্র্র্রে সরকার বদ্ধপরিকর এবাং এ লক্ষ্যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষার প্রসার, সকলের জন্য তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা নিশ্চিত করাসহ ব্যাবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং সামাজিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর বুকে রোল মডেল, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। তাঁর হাত ধরেই আমরা অর্জন করবো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

    সভাপতির বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “​জাতির জনক ​বঙ্গবন্ধু​ শেখ মুজিবুর রহমান শুধু​ বাঙালী জাতির পিতা​ই নন, তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী​। সারা পৃথিবী বাংলাদেশকে চিনে তাঁরই নামে। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হতো না।তাঁর অবিসংবাদিত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে​র কল্যাণেই​ ও তাঁর নির্দেশিত​ সংগ্রামের ​পথ​ ধরেই​ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তাই বাঙালী হিসেব আমরা সবচইতে ঋণী আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধূর কাছে। ​তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে

    ​শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের পথে এগিয়ে চলেছে আমাদের দেশ। আজ বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং নারী অধিকার, শিশু অধিকার, কন্যা শিশুর শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন ​।

    ​আর এসবকিছুই আজ অর্জিত হয়েছে  বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ, দক্ষ ও গতিশীল প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক নীতিমালার কারণে। ​

    বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। এ মহান নেতার জন্মদিনে কানাডাপ্রবাসী শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন কর​তে পেরে বাংলাদেশ হাই কমিশন গর্বিত।কানাডার সাস্কাচুয়ান ও টরন্টোর পর রাজধানী অটোয়ায় এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের সাথে এ প্রজন্মের প্রবাসী শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং তাঁর মতো​ মহান​ দেশপ্রেমিক মনন দিয়ে শিশুদের গড়ে তোলা। তিনি বলেন,আজ এ আনন্দের দিনে যে কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনা ও ক্ষোভের কারণ যে এই কানাডাতেই ​জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী​,খুনী নুর চৌধুরী অবস্থান করছে।​আমি আবারো বলতে চাই, জাতির পিতার ঘাতক নুর চৌধুরীর জন্য কানাডা বা পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রই কোন ​আশ্রয়স্থল​ হতে পারে না। যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে বিচারের রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস কানাডায় কাজ করে চলেছে।

    ​তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে বিচারের রায় কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারী এ উদ্যোগের পাশাপাশি জনমত গঠন করে কানাডার আইন প্রণেতাদের চাপ প্রয়োগ করার জন্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কানাডীয় নাগরিকদের ​ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবার​ আহ্বা​ন জানান তিনি। সম্প্রতি সাস্কাচুয়ান প্রদেশে সফরকালে সেখানকার প্রিমিয়ার (মুখ্যমন্ত্রী) ব্রাড ওয়ালের সাথে এ বিষয়ে তাঁর ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, সাস্কাচুয়ানের প্রিমিয়ার ব্যাড ওয়াল এ খুনীকে বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তাঁর অনুরোধ কানাডার ফেডারেল সরকারের কাছে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরবেন বলে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা ​অটোয়াসহ সমগ্র কানাডাপ্রবাসী হাজার হাজার ​বাংলাদেশীরা​ ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এ খুনীর বিরূদ্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করুন এবং তাকে কানাডা থেকে বহিস্কার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে আইনী সংশোঘনের জন্য আপনাদের এমপিদের সমর্থন আদায়ের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখুন।

    জাতির পিতার হত্যাকারীকে ফেরত পাঠাতে দেশপ্রেমী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্ববান জানান হাই কমিশনার মিজানুর রহমান।

    ​আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স, এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুল গাফ্ফার, অধ্যাপক ওমর সেলিম শের, মুন্সী বশীর, গোলাম মুহিবুর রহমান, ইতরাত জুবেরী সেলিম, মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, তাজুল মোহাম্মাদ এবং এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার। বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও তাঁর নেতৃত্বের বিকাশ নিয়ে শিশুদের আলোচনায় অংশ নেয় আরিব সাইফুদ্দিন এবং মাশকুরা তাবাস্সুম। বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত কবি অজয় দাসের অনবদ্য কবিতা “বঙ্গবন্ধু : আদিগন্ত যে সূর্য” – আবৃত্তি করেন দেওয়ান মাহমুদ।

    আলোচনা সভার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দের মাগফিরাত কামনায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করে বিশেষ ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান সিরাজ।