বরিশাল কখনও রেল দেখেনি,সেখানেও রেল যাবেঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    189

    “সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,ফেব্রুয়ারীঃ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এই দু’টি মহানগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরিশাল কখনও রেল দেখেনি, সেখানেও রেল যাবে। টাঙ্গাইলবাসীকেও রেল সেবার আওতায় আনা হবে। পটুয়াখালী, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল নেয়া হবে। গতকাল সকালে গণভবন থেকে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একযোগে ৫১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একযোগে কাজ করার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় জনগণকে সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প সম্পাদনে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যেসব প্রকল্প প্রণয়ন করেছি এবং বাস্তবায়ন করছি সেগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য আমি দেশবাসীসহ সকলের দোয়া চাই, সহযোগিতা চাই। যেসব এলাকায় কাজ হবে সে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত এই মাতৃভূমিকে আমরা উন্নত করতে পারবো, ততই আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারবো। গণভবনে মূল অনুষ্ঠানস্থলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী উপস্থি ছিলেন।
    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্সটি পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় ৯০টি গ্রামে ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর চট্টগ্রামের পটিয়ার ১০৮ মেগাওয়াট ইসিপিভি চট্টগ্রাম লিমিটেড, কুমিল্লার জাঙ্গালিয়ার ৫২ দশমিক ২ মেগাওয়াট লাকধানাভি বাংলা পাওয়ার লি, গাজীপুরের কড্ডার ১৫০ মেগাওয়াট বিপিডিবি-আরপিসিএল পাওয়ারজেন লিমিটেড এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি (এসটি ইউনিট) বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এ ছাড়াও, তিনি সড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারণে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের অংশ হিসেবে পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে নবনির্মিত শেখ কামাল সেতু ও শেখ জামাল সেতু উদ্বোধন এবং সিলেট সড়ক জোনে ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নবনির্মিত ১৬টি সেতু একযোগে উদ্বোধন করেন। রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রী সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার ডবল লাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ২য় রেললাইনে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। মোট ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে মেইন লাইন ৬৪ কিলোমিটার এবং লুপ ও সাইডিং ২২ কিলোমিটার।
    এরপর প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনসহ নারায়ণগঞ্জ শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সমপ্রসারণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সোনাকান্দা পানি শোধনাগারেরও উদ্বোধন করেন। এ ছাড়াও শেখ হাসিনা এদিন জয়পুরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনসহ এ জেলার বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন।
    অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে কোন দরিদ্র থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, একটা মানুষও না খেয়ে মরবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং প্রদানে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির জীবনে যদি বিয়োগান্তক পঁচাত্তর না আসতো, জাতির জনককে যদি হত্যা করা না হতো, তাহলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত হয়ে যেতো। জাতির পিতার সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জন্য যা কিছু করতে পারছি, এটুকুই কেবল সান্ত্বনা। গোপালগঞ্জের প্রকল্পসমূহের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রধানমন্ত্রীর মা-বাবা-ভাইসহ স্বজন হারানো স্বজন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়ার মানুষদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। সব হারাবার পর তারাই আমাকে বুকে টেনে নেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সান্ত্বনা, আমরা মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি।
    বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালে আমরা কি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো, সে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আমরা ২০১৬ সালে ১৬ হাজার মেগাওয়াট, ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। দোয়া করবেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ১৪ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছি। একশ’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে এরই মধ্যে ৭৬ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। যেসব এলাকায় গ্রিডলাইন নেই, সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
    সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল কখনো রেল দেখেনি, সেখানেও রেল যাবে। টাঙ্গাইলবাসীকেও রেল সেবার আওতায় আনা হবে। পটুয়াখালী, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল নেয়া হবে। এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরুর জন্য তিনি রেলমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। রেলের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলে অল্প খরচে চলাচল ও মালামাল পরিবহন করা যায়। এজন্য সরকার রেলের ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলে রেল হারিয়ে যেতে বসেছিল এবং মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল।
    বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার যতো সেতু ও সড়ক নির্মাণ করেছে আর কেউ তা করেনি। এ সময় পদ্মা সেতু ছাড়াই তার সরকারের সময়ে ৫৩৭টি সড়ক সেতু নির্মাণ হয়েছে।
    ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুয়াকাটা এমন একটা জায়গা যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। যেহেতু আমি সেখানে বহু আগে গিয়েছিলাম, সে সময়েই এটিকে একটি উন্নত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা করি। নারায়ণগঞ্জে পানি শোধনাগরের উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবেন। পানি শোধন করতে অনেক খরচ হয়। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতিটি নগরকে উন্নত করতে চাই। মানুষের জীবন-মান উন্নত করতে চাই।
    প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পয়েন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শুরুর তাগিদ দেন।
    নারায়ণগঞ্জ থেকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ভৈরব থেকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও বিসিবি’র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, কুমিল্লা থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, পটুয়াখালীতে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা, সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। সুত্রঃমানবজমিন