বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি আব্দুল মাজেদ কারাগারে

    0
    298

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক এএম  জুলফিকার হায়াত এই আদেশ দেন।

    এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় তাকে কারাগারে হাজির করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ সময় তার পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও পায়জামা। মাথায় ছিল হেলমেট ও হাতে গ্লাভস।

    এসময় আদালতে আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী পিপি এনায়েত উদ্দিন খান হিরণ। পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

    তার আগে সকালে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। শিগগিরই তাকে আদালতে তোলা হবে।”

    তবে কবে, কখন, কীভাবে, কোথায় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ আটক

    উল্লেখ্য, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার আমলে ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’ জারি করে এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ  বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশ মিশনে সম্মান জনক চাকরি দেওয়া হয়।

    ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জেনারেল জিয়া কর্তৃক ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ে ১২ খুনির ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে এবং কারাগারে আটক পাঁচ খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

    অন্যদিকে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া অন্য ছয় খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় তাদের দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এর আগেই অবশ্য আরেক খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন বলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন জোট সরকার ঘোষণা দেয়।

    পলাতক ছয় খুনির মধ্যে গত বছর নভেম্বরে মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম কেনিয়ায় মারা গেছেন বলে স্ত্রীর বরাতে তার এক ভাইয়ের ফেসবুক ম্যাসেজে জানা যায়। বাকি খুনি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন  পলাতক। তাদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদও পলাতক ছিলেন। এর মধ্যে নূর চৌধুরী বর্তমানে কানাডা এবং লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থানের কারণে নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কানাডা। আরেক খুনি মোসলেহ উদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তবে মোসলেহ উদ্দিন সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েও পাননি। এ ছাড়া খন্দকার আবদুর রশিদ লিবিয়ায় রয়েছেন বলে গুঞ্জন আছে।

    ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও অবশেষ তিনি গ্রেপ্তার হলেন।