বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান,একটি সত্তা,একটি ইতিহাসঃরাষ্ট্রপতি

    0
    299

    ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত করতে সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান। একটি সত্তা। একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতো অন্তরালের বঙ্গবন্ধুও শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে ওঠতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

    সোমবার (৯ নভেম্বর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। সংসদের বৈঠক শুরু হলে সন্ধ্যা ৬টা ৮ মিনিটে রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় বিউগলে ফ্যানফেয়ার বাজানো হয়। স্পিকারের ডান পাশে লাল গদি মোড়ানো চেয়ারে বসেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯০ জনের মতো সংসদ সদস্য সংসদ কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না। মহামারিকালের কোনো অধিবেশনে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের ছিলেন।

    এসময় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার চেষ্টাকারীরা ব্যর্থ হয়েছেন মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এই দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন, তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

    সংসদ কক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণ দেখানোর সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তাকে কয়েকবার চোখ মুছতে দেখা গেছে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণের মধ্যে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ান। শেষ হলে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেন সাবেক প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ। সংসদ সদস্যরাও স্লেগানের জবাব দেন।

    রাষ্ট্রপতিকে বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানালে স্পিকারের বাম পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুরু করেন আবদুল হামিদ। এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকারের পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুরু করেন রাষ্ট্রপতি, যিনি গণপরিষদ ও দেশের প্রথম সংসদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আইনসভায় বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন।

    দেশের সাধারণ মানষকে যারা বিভ্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদের এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে।

    তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনী ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।

    মুজিববর্ষ পালনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারকে এবং বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের জন্য স্পিকার ও জাতীয় সংসদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি আশা করি অধিবেশনের কার্যক্রম বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

    জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অধিবেশনে জাতির পিতাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা নিজেরাও সম্মানিত হব। তবে সীমিত সময় ও পরিসরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তার জীবন ও কর্মের বিস্তৃতি এতটাই বিশাল যে ঘণ্টার ঘণ্টা এমনকি দিনের পর দিন আলোচনা করলেও তা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।