ফ্রান্স বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির জনকের জন্মদিন পালন

    1
    297

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২০মার্চ, নয়ন মামুন: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মদিন অনাড়ম্বরপূর্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করেছে ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাস। গত মঙ্গলবার সকাল দশ ঘটিকায় বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত,দূতাবাসের কর্মকর্তা বৃন্দ ও ফ্রান্স আওয়ামী লীগ, পুষ্পার্ঘ অর্পণ শেষে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আলোচনা সভা, অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলেচনা সভায় দূতাবাসের হেড অফ কাউন্সিলার হযরত আলী খাঁন এর সঞ্চালনায় রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন ফারহানা আহমদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন রাষ্ট্রদূত এম শহীদূল ইসলাম,পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কমার্শিয়াল কাউন্সিলার ফিরোজ উদ্দীন এবং বঙ্গবন্ধুর জিবনী নিয়ে আলোচনা সভায় হাইকমিশনার শহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন , বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফ্রান্স আওয়ামীলীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ সেলিম,সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকি,মুক্তি্যোদ্ধা নাজিম উদ্দীন আহমদ,ফ্রান্স আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ওয়াহিদ বার তাহের,বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারন সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম,মুক্তি্যোদ্ধা এনামুল হক,মাসুদ হায়দার,ফয়ছল উদ্দীন,শাহীন, সহ ফ্রান্স আওয়ামীলীগের নেতারা। চিত্রা্কংন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ কারি বিজয়িদের মাঝে এসময় পুরস্কার বিতরণ করা হয়,এবং অনুষ্ঠান শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফিজ ওয়াহিদুর রহমান। এসময় বক্তারা বলেন স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ওই সময় থেকে নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন। বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’র মর্যাদায় অভিসিক্ত করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ; কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন। এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ভাষণে সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ২ লাখ মা- বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বীর বাঙালি একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে নিজ বাসভবনে কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন তিনি।