ফ্রান্সে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের দীর্ঘসূত্রিতা কমাবে সরকার

    0
    224

    আমারসিলেট24ডটকম,২৯নভেম্বর,আবু তাহির,ফ্রান্সঃ ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয়লাভের আবেদন বিবেচনার সময়সীমা কমানোর বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যত দ্রুত সম্ভব সুরাহা করতে নতুন পদক্ষেপ নিবে সরকার। এ  ক্ষেত্রে আবেদনের ছয় মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানতে পারবে একজন আবেদনকারী। এর ফলে নিজ দেশে নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য একজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী দ্রুত জানতে পারবেন তার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে কি সিদ্ধান্ত হচ্ছে। আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনার জন্যই এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস।
    গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের জাতীয় সংসদে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সমাজবাদী দলীয় সংসদ সদস্য জ্যা লুই তুরেন এবং সিনেটর ভ্যালেরী লেতার্দের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ম্যানুয়েল ভালস।
    আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনার সময়সীমা কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে সরকার ইতিমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় ২০১৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক শরনার্থী ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য আবেদন করেছে। আশ্রয় প্রার্থনার সংখ্যা এ বছর ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২০০৪ সালে ফ্রান্সে রেকর্ড সংখ্যক ৬৫ হাজার শরনার্থী আবেদন করেছিল। এতো বেশী আবেদন বিবেচনা করা ফ্রান্সের শরনার্থী ও রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক বিষয়ক কার্যালয়ের (অফরা) পক্ষে সম্ভব নয়। আবেদন পর্যালোচনা ও নীরিক্ষার পরই একজন আশ্রয়প্রার্থীকে মৌখিকভাবে নিজের সমস্যা প্রমানের জন্য উক্ত কার্যালয়ে একজন কর্মকর্তার সম্মুখে উপস্থিত হতে হয়। সন্তোষজনকভাবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারলে সে কার্যালয় থেকেই আবেদন মঞ্জুর করা হয়। আবেদন না-মঞ্জুর করা হলে আবেদনকারী জাতীয় আদালতে তা পূর্নবিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারেন। এসবের জন্য প্রচুর সময় ব্যয় হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আবেদন পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত দ্রুত নেয়ার ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র জার্মানের নীতি গ্রহন করার বিষয়ে সরকার চিন্তা ভাবনা করছে।
    এদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের খন্ডকালীন অবস্থান ভাতা এবং আবাসন ব্যবস্থার বিষয়েও কিছু কঠোরনীতি সরকার গ্রহণ করতে পারে বলে জানা গেছে। ফ্রান্সের উদ্বাস্তু বিষয়ক বাজেটের সিংহভাগ অর্থ দীর্ঘসূত্রিতার জন্য ব্যয় হয়। এ কারনেই আবেদনের পর দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদানের বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে যেতে পারে।

    অভিবাসন সুবিধার আওতাও বেড়েছেঃ
    ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস জানিয়েছেন অভিবাসন বিষয়ে ওল্যান্দ সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনের ফলে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দশ হাজারের বেশী অবৈধ বিদেশীদের বৈধ করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান ভখালস। তিনি বলেন, মোট আবেদনকারীর ৮১ শতাংশ এ প্রজ্ঞাপনের আওতায় বৈধভাবে অভিবাসীর মর্যাদা পেয়েছে। ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর জারি করা অভিবাসী বৈধকরন প্রজ্ঞাপনের পর দীর্ঘদিন ফ্রান্সে অবৈধভাবে বাস করা বিদেশীরা আবেদন করে। আবেদন বিবেচনা করে দশ হাজারের বেশী আবেদনকারীকে বৈধ অভিবাসীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
    উল্লেখ্য, গত বসন্তে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি ফ্রাসোয়া ওল্যান্দের নির্বাচনী একটি অঙ্গীকারের মধ্যে ছিলো অবৈধ অভিাসীদের বৈধকরন। তার এ বৈধকারন নীতির ফলেই ২০১২সালের ২৮ নভেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনের শর্ত মোতাবেক পাচ বছরের বেশী সময় যে সব পরিবার ফ্রান্সে বসবাস করছে এবং তাদের সন্তানেরা তিন বছর ধরে স্কুলে যায়, যারা বৈধভাবে কাজ করে তারা অভিবাসী হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। এ প্রজ্ঞাপনের ফলে অবৈধভাবে কর ফাকি দিয়ে কাজ করানোর প্রবনতা কমে গেছে বলে জানা যায়।
    প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে ১৯৮১ সালে এক যোগে এক লাখ ৩১ হাজার অবৈধ বিদেশীদের অভিবাসী মর্যাদা দেয়া হয়, ১৯৯৭ সালে এ সংখ্যা ছিলো ৮০ হাজার। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের হিসাব অনুয়ায়ী বর্তমানে দেশটিতে তিন লাখ থেকে চার লাখ অবৈধ বিদেশী রয়েছে। রাজনৈতিক কারনে গণহারে এদের অভিবাসী মর্যাদা না দিলেও এ সংখ্যা পুর্বের বছরগুলোর তুলনায় কম হবে না বলে একটি মহল মনে করছে।