প্রসংগঃজিয়াউর রহমানের লাশ:কিছু অনাবিষ্কৃত রহস্য !

    0
    273

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮ডিসেম্বরঃ  জিয়া যখন সেনা আততায়ীর ব্রাশ ফায়ারে নিহত হন তখন পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে জিয়া, কর্নেল আহসান ও কর্নেল হাফিজসহ আরও কয়েকজনের লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। এর পরদিন ১ লা জুন কিছু সামরিক ও বেসামরিক লোকজনের যৌথ অভিযানে জিয়ার লাশ পাওয়া যায় চট্রগ্রামের গহীন জংগলে।  তারা যা উদ্ধার করেছিল তা লাশ ছিল না; ছিল কিছু হাড় গোড় মাত্র। একদিনের মধ্যে মৃত্য ব্যক্তির কিভাবে হাড় গোড় মাংস ছাড়া পাওয়া গেল তাও একটা রহস্য বটে। আগুনে পুড়ালেই হয়তো বা এমন হতে পারে, ওখানে জিয়ার লাশ ছিল কিনা তাও রহস্য, জিয়ার হাড় গোড় চট্রগ্রাম বা ঢাকার কাঊকে দেখতে দেয়া হয়নি, এমনকি ডিএনএ টেস্ট করা ছাড়াই ঢাকা এনে তার হাড় গোড় শেরে বাংলা নগরে স্বমাধিস্থ করা হয় অন্যদিকে, এই রহস্যের একমাত্র সমাধান ছিল জিয়ার হত্যাকারী মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর কিন্তু চট্রগ্রামের ফটিকছড়িতে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। এভাবেই জিয়ার মৃত্যু বেগম খালেদার জন্মদিনের মতই রহস্য হয়ে রইল।

    জিয়ার কবরে জিয়ার লাশ নেই তবে কার লাশ আছে?

    এ নিয়ে সংসদে সরকারী দলের সাংসদ শেখ সেলিমের বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি লাশের ডিএনএ পরীক্ষার দাবি তুলেছেন। তার জোরালো দাবী জিয়ার কবরে আদৌ কোনো লাশ নেই আর যদি লাশ সেখানে থাকে সেটি জিয়ার নয়। তাই তিনি সংসদে লাশের ডিএনএ পরীক্ষার দাবি তুলেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে।

    অত্যন্ত বিস্ময়কর ব্যাপার হল, জিয়ার দল বিএনপি এ চ্যালেঞ্জ কেন গ্রহণ করছে না। যেভাবে তারা ঘন ঘন জিয়ার মাজার জিয়ারত করেন ততবার কি তারা তাদের পরলোকগত পিতা মাতার কবর জিয়ারত করেন?

    কবর জিয়ারত করার নামে তারা সেখানে করেন রাজনৈতিক চাপাবাজি ও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা।

    যেহেতু জিয়াউর রহমানের গঠিত নিজ রাজনৈতিক দল তাকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে সেহেতু তার কবর অন্যসব মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে হওয়া উচিত ছিল আবার তিনি একজন সেনা সদস্য ছিলেন সেহেতু তার অন্য সেনা অফিসারদের কবরের সাথে হওয়া উচিত ছিল। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান যেহেতু বগুড়া সেহেতু তার কবর সেখানে হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তারা এসব না করে কোন যুক্তিতে, অবৈধভাবে জিয়ার মাজার সংসদ ভবন এলাকায় করল তার ব্যখ্যা দাবি করছি দল বিএনপির নিকট।

    জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ও তার লাশ দাফন করার ঘটনাটি আজও রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। বিএনপি এ রহস্য বা সন্দেহ দূর করার কোনই পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ জিয়া হত্যার বিচার তারা করেননি অথচ ক্ষমতায় থেকেছে তারাই দীর্ঘ সময়।

    কেবলমাত্র সেনা বিদ্রোহের দায়ে ২৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে তথাকথিত বিচারের মাধ্যমে ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ বাকীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছিল, যাদের সবাই ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। তারা আদৌ জিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা সেটাও একটি রহস্য। পার পেয়ে গেছে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারী, পর্দার অন্তরালের নাটের গুরুরা। আবার এটাও দেশের সচেতন মানুষের কাছে রহস্যই রয়ে গেছে কেন বারবার ক্ষমতায় এসেও বেগম জিয়া তার স্বামীর হত্যার বিচার করলেন না?

    যারা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানের রুমের আশপাশের রুমে সেদিন সঙ্গী হিসেবে রাত্রি যাপন করেছিলেন তাদের মধ্যে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ কয়েকজন বেঁচে গেলেনই বা কীভাবে?

    দেশবাসীর মনের এসব প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করা অত্যন্ত জরুরি ছিল কিন্তু বিএনপি তা দূর করার কোন উদ্যোগই আজ পর্যন্ত নেয়নি। ফলে জিয়ার হত্যাকাণ্ড ও তার লাশ কবরস্থ করার ঘটনা নিয়ে বিএনপি নেতাদের বহুকাল প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে। এর জন্য বিএনপিই দায়ী।

    জিয়াকে হত্যা করার পর খুনিরা তার লাশ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ থেকে নিয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে কোন এক স্থানে প্রথমে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিল। ধর্মীয় কোন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাকে সেদিন দাফন করা হয়নি। এর বেশ কিছুদিন পরে তার সেই তথাকথিত লাশটি কফিনবন্দি অবস্থায় ঘটা করে ঢাকায় এনে সংসদ ভবনের পাশে চন্দ্রিমা উদ্যানে দাফন করা হয় অথচ চট্টগ্রাম ও ঢাকার কোথাও জিয়ার লাশটি আত্মীয়-স্বজন, নেতাকর্মী বা জনগণকে দেখানো হয়নি। একজন সাক্ষী হিসেবে যিনি জানাজা পড়িয়েছিলেন তাকেও দেখানো হয়নি। স্বাভাবিক কারণেই মানুষের মনে প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েই গেছে আদৌ কি কফিনটিতে জিয়ার লাশ ছিল?

    অভিজ্ঞ লোকদের দৃঢ় বিশ্বাস- চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার লাশ নেই। যদি থাকত তাহলে কবরস্থ করার সময় কেউ না কেউ বা একজন হলেও তার লাশ শনাক্ত করার সুযোগ পেত বা ভবিষ্যতে জনগণের মনের সন্দেহ অথবা কোন প্রশ্ন যাতে না উঠতে পারে সে কথা ভেবেও লাশ শনাক্ত করানোর ব্যবস্থা করা হতো। যেহেতু সেটা করা হয়নি সেহেতু চন্দ্রিমা উদ্যানের লাশ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে। আর বিএনপি নেতৃবৃন্দের তার জবাব দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা আজীবন চালিয়ে যেতে হবে।

    ঐ কবরে আদৌ জিয়ার লাশ আছে কি নেই এ প্রশ্নের তোলার যৌক্তিকতা আছে এ কারণে জিয়ার কবর দেওয়া হয়েছে সংসদের মূল নকশাকে আগ্রাহ্য করে ক্ষমতার বলে সকল নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে।

    যে মহান সংসদের ঐতিহাসিক নকশাকে বিকৃত করে জিয়ার কবর সে কবরে জিয়ার লাশ আছে কিনা সেটা নিয়ে যদি জনগনের বিরাট একটি অংশের সন্দেহ থাকে তবে সে সন্দেহটা দূর করা অপিরাহার্য। জিয়ার লাশ যদি থেকে থাকে তাহলে হয়তো ঠিক না হলেও তাঁর সম্মানে কবরটির অবস্থান মেনে নেওয়া যায়। আর যদি কবরে লাশ না থাকে বা লাশটি জিয়ার না হয় অর্থাৎ যদি উত্থাপিত অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে মূল নকশাকে বিকৃত করে অবৈধভাবে অবস্থিত এ কবর স্থানান্তরিত করা উচিত এবং লাশ না থাকলে মিথ্যা কবরটিকে ধ্বংস করে সংসদ ভবনের মূল নকশায় ফিরে যাওয়া উচিত। বর্তমান সরকার সংসদ ভবনের ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট হবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।খোরশেদ আলম,লেখক ও গবেষক

    নোটঃ ছবি ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।